
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পর্ন সিনেমার এক অভিনেত্রীকে ঘুষ দেয়ার মামলায় ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। রায়ে ট্রাম্পকে ‘নিঃশর্ত মুক্তি’ দেয়া হয়েছে। এর ফলে জেল ও জরিমানা থেকে রেহাই পেয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) শেষবারের শুনানির পর নিউইয়র্ক আদালতের বিচারক হুয়ান মারচান রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৩৪টি অভিযোগের সবকটিতেই নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হয়েছে। রায়ের পর বিচারক মারচান বলেন, ‘আপনার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আমি আপনার মঙ্গল কামনা করছি।’
মামলার প্রায় ছয় বছর পর এর রায় দেয়া হল। রায়ের পর মেরচান আদালতকে বলেন যে, তিনি এই মামলায় ট্রাম্পের যে নিঃশর্ত মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটাই ‘দেশের সর্বোচ্চ পদের ওপর হস্তক্ষেপ না করেই একমাত্র আইনসঙ্গত শাস্তি’। নিঃশর্ত মুক্তির ফলে ট্রাম্পকে কোনো জরিমানা, প্রবেশন বা কারাদণ্ডের সম্মুখীন হতে হচ্ছে না।
আগামী ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভোবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ট্রাম্প। অর্থাৎ আর মাত্র ১০ দিন বাকি আছে। শপথ নেয়ার আগে এই রায় তার জন্য নিশ্চিতভাবেই স্বস্তির বিষয়। যদিও এই মামলায় তার বড় কোনো শাস্তি হবে না বলেই মনে করা হচ্ছিল।
ট্রাম্প প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার প্রায় এক বছর পর ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তাদের এক প্রতিবেদনে স্টর্মি ড্যানিয়েলস নামে এক পর্ন সিনেমা অভিনেত্রীর সঙ্গে ট্রাম্পের যৌন সম্পর্ক এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণাকালে অর্থ দিয়ে তার মুখ বন্ধ রাখার বিষয় সামনে আনে।
এরপর ওই বছরের মার্চ মাসে স্টর্মি ড্যানিয়েলস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তাতে তিনি অভিযোগ করেন, ২০০৬ সালে নেভাডা অঙ্গরাজ্যে একটি হোটেলে ট্রাম্পের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক হয়। সে ঘটনা যাতে তিনি প্রকাশ না করেন, সে জন্য ২০১৬ সালে ব্যক্তিগত আইনজীবীর মাধ্যমে তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার দেন ট্রাম্প।
মামলায় আরও অভিযোগ করা হয় যে, ট্রাম্পের আইনজীবী তাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন এবং তাকে এই ভয় দেখানো হয়েছিল যাতে ট্রাম্পের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক নিয়ে তিনি মুখ না খোলেন।
ট্রাম্প বরাবরই স্টর্মির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক ও ঘুষ দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। ট্রাম্পের দাবি, এ সবকিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার হোয়াইট হাউসে প্রবেশ ঠেকাতে বাইডেন প্রশাসন এসব করেছে। সে সময় ম্যানহাটন ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ অভিযোগের তদন্ত করেছিলেন। তিনি ডেমোক্র্যাট দলের সদস্য। ফলে ‘রাজনৈতিক চক্রান্তের’ অভিযোগ তোলে ট্রাম্প শিবির।
ট্রাম্পই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট, যার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার বিচার শুরু হয়। ২০২৩ সালের মার্চে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড জুরি। এপ্রিলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং গ্রেফতারও করা হয়। যদিও গ্রেফতারের পরই জামিনে মুক্তি পান রিপাবলিকান পার্টির প্রবীণ এ নেতা।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে গত বছরের মে মাসে ম্যানহাটানের ডিস্ট্রিক্ট আদালতের বিচারকেরা তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে তার বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ ঘোষণার কথা ছিল গত ১১ জুলাই। কিন্তু কয়েক দফায় তা পেছানো হয়।
চলতি মাসের শুরুর দিকে নিউইয়র্কের ম্যানহাটান আদালতের বিচারক হুয়ান মারচান ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ ঘোষণার তারিখ নিশ্চিত করেন। অবশ্য তিনি এমন ইঙ্গিত দেন যে, ট্রাম্পকে কোনো ধরনের শাস্তি বা কারাদণ্ডের সম্মুখীন হতে হবে না।