নাজমুল হোসেন শান্ত এবং সৌম্য সরকারের জুটিটা যা একটু আশা জুগিয়েছিলো। এছাড়া ব্যাটিংয়ের পুরো সময়টাতে আফগান বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটাররা। তাদের নিদারুণ ব্যর্থতায় আরও একটি ম্যাচ হারতে হলো বাংলাদেশকে।
আরব আমিরাতের শারজায় তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে আফগানদের কাছে ৯২ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজয়ের লজ্জায় ডুবতে হলো নাজমুল হোসেন শান্তর দলকে। ২ উইকেটে ১২০ রান থেকে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ১৪৩ রানে। অর্থ্যাৎ, শেষ ২৩ রানে ৮টি উইকেট হারিয়েছে টাইগাররা। আর শেষ ১১রানে হারিয়েছে ৭ উইকেট।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান সংগ্রহ করেছিলো ২৩৫ রান। ২৩৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৩৪.৩ ওভারে বাংলাদেশ অলআউট ১৪৩ রানে। মূলত আল্লাহ মোহাম্মদ গজনফারের ঘূর্ণিতেই কুপোকাত হতে হয়েছে টাইগার ব্যাটারদের। ২৬ রান দিয়ে একাই ৬ উইকেটে নিয়েছে ১৮ বছর বয়সী এই তরুণ।
ক্যারিয়ারে মাত্র ৬ষ্ঠ ওয়ানডে খেলতে নেমেছিলেন গজনফার। আগের ৫ ম্যাচে উইকেট শিকারের সংখ্যা মাত্র ৪টি। আর আজ একাই তিনি মুর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য। তানজিদ হাসান তামিমকে চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে ফিরিয়ে দিয়ে শুরু। এরপর একে একে প্রতিষ্ঠিত ব্যাটার এবং লেট অর্ডারের উইকেটগুলো তুলে নেন তিনি।
গজনফার ছাড়াও বাংলাদেশ শিবিরে আতঙ্ক ছড়ান রশিদ খান। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং তাওহিদ হৃদয় যেভাবে রশিদ খানের বলে বোল্ড হলেন, তাতে মনে হলো, জীবনে এই প্রথম লেগ স্পিনের মোকাবেলা করতে নেমেছিলেন তারা। বিশেষ করে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বোকার মত বোল্ড হলেন তিনি। তার এই আউট দেখে বোঝা হয়ে গেছে, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের যা দেয়ার দলকে দিয়ে ফেলেছেন। এর আর দেয়ার মত কিছু নেই।
আফগান ইনিংসে মোহাম্মদ নবি আর হাশমতউল্লাহ শহিদি যেভাবে একশ’র ওপর রানের জুটি গড়েছেন, তেমন একটি জুটি প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশ দলের। কিন্তু সৌম্য আর শান্তর ৫৩ রানের এবং শান্ত আর মিরাজের ৫৫ রানের দুটি জুটিই যা উল্লেখযোগ্য পুরো ম্যাচে। পরের ব্যাটাররা তো শুধু আসা-যাওয়ার মিছিলে সামিল ছিলেন।
২৩৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১২ রানের মাথায় তানজিদ তামিমের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। গজনফারের ভেতরে ঢোকা বলটিকে ক্রসব্যাটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হলেন তিনি। ৫ বলে তামিম করেন মাত্র ৩ রান। এরপর বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই খেলছিলেন দীর্ঘ সময় পর দলে ফিরে আসা সৌম্য সরকার। হাঁকান ৬টি বাউন্ডারিও। কিন্তু ভালো খেলতে খেলতে হঠাৎ আউট হয়ে গেলেন তিনি। আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে পুল খেলতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ হয়েছেন সৌম্য।
৪৫ বলে ৬ চারের সাহায্যে সৌম্য করেন ৩৩ রান। তিনি ফেরার পর চার নম্বরে নামানো হয়েছে বেশিরভাগ সময় লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করা মেহেদী হাসান মিরাজকে। নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই ব্যাট করছিলেন মিরাজ। ৫৫ রানের জুটি সেটাই প্রমাণ করে। ২ উইকেটে ৬৫ থেকে ১২০ রান পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন তারা দু’জন।
এমন সময়ই মাথায় ভুত চেপে বসে শান্তর। মোহাম্মদ নবির পাতা ফাঁদে পা দেন তিনি। ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে স্লিপে একজন ফিল্ডারকে নিয়ে এসে শান্তকে প্যাডল সুইপ খেলতে বল দেন নবি। তার এই বলে বিভ্রান্ত হন শান্ত। বল লাগে ব্যাটরে উপরের কানায়। উঠে যায় উপরে। হাশমতউল্লাহ শহিদি তিনবারের চেষ্টায় বল তালুবন্দী করেন। ৬৮ বলে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করে আউট হয়ে গেলেন শান্ত। দলীয় রান এ সময় ১২০।
মেহেদী মিরাজ আর তাওহিদ হৃদয় মিলে গড়া জুটিটা একটু বড় হবে – এই ছিল প্রত্যাশা। কিন্তু মিরাজও কেন যেন বেশ তাড়াহুড়ো করলেন। গজনফারের ক্যারম বলটিকে প্যাডল সুইপ করলেন। আর অবিশ্বাস্য ক্যাচ ধরলেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। ৫১ বলে খেলা ২৮ রানের ইনিংসটির যবনিকাপাত ঘটলো।
ব্যাটহাতে নামলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৫ বল খেলে ২ রান করে রশিদ খানের গুগলি বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে গেলেন। ১ রান করলেন মুশফিকুর রহিম। গজনফারকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে এসে ব্যাটেই বল লাগাতে পারেননি। ফলাফল সহজ স্ট্যাম্পিং। ইকরাম আলি খিল সহজেই স্ট্যাম্প ভেঙে দিলেন।
রিশাদ হোসেন বোকার মত এলবিডব্লিউ হলেন গজনফারের বলে। টানা দ্বিতীয় বলে বোল্ড হলেন তাসকিন আহমেদ। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি হলেও পরের ওভারের প্রথম বলে উইকেট পাননি গজনফার। এরই ফাঁকে ১১ রান করে রশিদ খানের গুগলিতে বোল্ড হন তাওহিদ হৃদয়। শেষ ব্যাটার হিসেবে ১ রান করে বিদায় নেন শরিফুল ইসলাম। ৩ রানে অপরাজিত থাকেন মোস্তাফিজুর রহমান।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নামা আফগানিস্তানের ৭১ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হাসমতউল্লাহ শহিদি আর মোহাম্মদ নবির দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত লড়াকু পুঁজিই দাঁড় করিয়ে ফেলেছে আফগানরা। শারজায় সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আফগানিস্তান ৪৯.৪ ওভারে দুই বল বাকি থাকতে অলআউট হয়েছে ২৩৫ রানে।
শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় আফগানিস্তান। তবে বাংলাদেশের পেসারদের তোপে শুরুতে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি তারা।
শুরুটা করেছিলেন তাসকিন আহমেদ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আঘাত হানেন টাইগার পেসার। দুর্দান্ত এক আউটসুইঙ্গারে রহমানুল্লাহ গুরবাজকে (৭ বলে ৫) উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানান তিনি।
এরপর কিছুটা সময় উইকেট ধরে রাখার চেষ্টা করেছিল আফগানিস্তান। অষ্টম ওভারে বল হাতে নিয়েই উইকেট শিকার করেন মোস্তাফিজ। কাটার মাস্টারের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হন রহমত শাহ (১৩ বলে ২)।
মোস্তাফিজ নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে তুলে নেন আরও এক উইকেট। এবার অভিষিক্ত সেদিকউল্লাহ অতলকে (৩০ বলে ২১) এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন বাঁহাতি এই পেসার।
দশম ওভারেই তিন বল পরে আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে (৩ বলে ০) উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে বন্দী করেন মোস্তাফিজ। ৩৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে আফগানিস্তান। এরপর গুলবাদিন নাইব ২২ করে তাসকিনের শিকার করে ৭১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে আফগানরা।
সেখান থেকে হাসমতউল্লাহ শহিদি আর মোহাম্মদ নবির প্রতিরোধ। ষষ্ঠ উইকেটে তারা গড়ে তোলেন ১২২ বলে ১০৪ রানের লড়াকু জুটি। ব্যক্তিগত ৫২ রানে শহিদিকে বোল্ড করে এই জুটিটি শেষ পর্যন্ত ভাঙেন মোস্তাফিজ।
এরপর রশিদ খানকে (১০) সাজঘরের পথ দেখান শরিফুল। সেঞ্চুরির দিকে ছুটতে থাকা নবিকে আটকান তাসকিন। তার শর্ট বলে পুল খেলতে গিয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন নবি। ৭৯ বলে ৮৪ রানের মারকুটে ইনিংসে ৪টি বাউন্ডারি আর ৩টি ছক্কা হাঁকান আফগান অলরাউন্ডার।
পরের বলেই তাসকিন বোল্ড করেন গাজানফরকে। তার এক বল পরে পাঁচ উইকেট পূর্ণ হতে পারতো তাসকিনের। কিন্তু ফজলহক ফারুকির বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে আম্পায়ার আঙুল তুলে দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যায় আফগানিস্তান।
শেষদিকে নানগেয়ালিয়া খারোতে ২৮ বলে হার না মানা ২৭ রান করে আফগানিস্তানকে ২৩৫ পর্যন্ত নিয়ে যান। তাসকিন আহমেদ ৫৩ এবং মোস্তাফিজুর রহমান ৫৮ রান দিয়ে নেন ৪টি করে উইকেট। একটি উইকেট শরিফুল ইসলামের।