জাতিসংঘের প্রতিবেদন আন্দোলনকারীদের নেতাদের হত্যা-মরদেহ গুমের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা

ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গত বছরের ১৮ জুলাই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ‘কোর কমিটি’র বৈঠক হয়। বৈঠকে পুলিশ, র‍্যাব এবং বিজিবি প্রধান ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে বিজিবি কমান্ডারকে আরও দ্রুত প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেন।

পরদিন অনুষ্ঠিত আরেক বৈঠকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিক্ষোভকারীদের হত্যা করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘বিক্ষোভের নেতাদের, দাঙ্গাবাজদের ধরুন, হত্যা করুন এবং তাদের মরদেহ গুম করুন।’

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য থেকে আরও জানা যায় যে, বৈঠকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিক্ষোভ দমনের জন্য বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে বলেছিলেন এবং বিশেষভাবে ‘বিক্ষোভের মূল হোতা’, ‘গণ্ডগোল সৃষ্টিকারী’দের গ্রেফতর, হত্যা এবং হত্যার পর মরদেহ লুকিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।’

এতে বলা হয়েছে, ‘অনেক অভিযানে, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশের সহিংস প্রচেষ্টাকে সাহায্য করতে অভিযান শুরুর আগেই সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা পুলিশের সঙ্গে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিল অথবা পুলিশ ফোর্সের পেছনে থেকে আক্রমণে অংশ নিয়েছিল। পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও লোকজনকে থামিয়ে তল্লাশি চালিয়েছিল, বিক্ষোভকারীদের আটক করেছিল এবং সংগঠিত ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছিল।’

বাংলাদেশ পুলিশ ওএইচসিএইচআরকে পুলিশ সদস্য, আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের ৯৫ জন সদস্যের নাম এবং তাদের ভূমিকা কী ছিল তার বিস্তারিত সরবরাহ করেছে। পুলিশের মতে, এ ব্যক্তিরাই বিক্ষোভের সময় সহিংস হামলায় ব্যবহারের জন্য নাগরিকদের অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। অস্ত্র সরবরাহ যাদের করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ১০ জন তৎকালীন সংসদ সদস্য, ১৪ জন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, ১৬ জন যুবলীগ নেতা, ১৬ জন ছাত্রলীগ নেতা এবং সাতজন পুলিশ সদস্য।

প্রতিবেদনের এক অংশে বলা হয়, ‘ওএইচসিএইচআরের অনুমান, বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় এক হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই মিলিটারি রাইফেল এবং প্রাণঘাতী মেটাল প্যালেটস লোড করা শটগানে নিহত হয়েছেন। এ ধরনের শটগান সাধারণত বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে। বিক্ষোভে কয়েক হাজার মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন, কেউ কেউ স্থায়ীভাবে আজীবনের জন্য কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন।’

  • Related Posts

    হজ করে দেশে ফিরলেন ১৬ হাজার ৪৬৯ হাজি

    হজপালন শেষে শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন ১৬ হাজার ৪৬৯ জন হাজি। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২ হাজার ৮৮ জন আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়…

    Continue reading
    দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা

    যুক্তরাজ্যে চারদিনের সফর শেষে দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশে ফেরেন। প্রধান উপদেষ্টার…

    Continue reading

    হজ করে দেশে ফিরলেন ১৬ হাজার ৪৬৯ হাজি

    হজ করে দেশে ফিরলেন ১৬ হাজার ৪৬৯ হাজি

    দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা

    দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা

    ইসরায়েলে ইরানের হামলায় নারী নিহত, আহত অন্তত ৪০

    ইসরায়েলে ইরানের হামলায় নারী নিহত, আহত অন্তত ৪০

    পদ্মা সেতুতে ট্রাকের পেছনে বাসের ধাক্কা, নিহত ২

    পদ্মা সেতুতে ট্রাকের পেছনে বাসের ধাক্কা, নিহত ২

    দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে বাসের ধাক্কা, নিহত ৫

    দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে বাসের ধাক্কা, নিহত ৫

    মারক্রামের অসাধারণ সেঞ্চুরি, জয়ের দ্বারপ্রান্তে দক্ষিণ আফ্রিকা

    মারক্রামের অসাধারণ সেঞ্চুরি, জয়ের দ্বারপ্রান্তে দক্ষিণ আফ্রিকা

    দ্বিতীয় সপ্তাহে বাড়ল হল ও শো, বিদেশেও মুক্তি পাচ্ছে ‘উৎসব’

    দ্বিতীয় সপ্তাহে বাড়ল হল ও শো, বিদেশেও মুক্তি পাচ্ছে ‘উৎসব’

    মিশরের পথে গ্লোবাল মার্চ টু গাজা

    মিশরের পথে গ্লোবাল মার্চ টু গাজা

    প্রধান উপদেষ্টা ও গর্ডন ব্রাউনের আলোচনা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা

    প্রধান উপদেষ্টা ও গর্ডন ব্রাউনের আলোচনা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা

    ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ধ্বংস, নিহত ৮

    ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ধ্বংস, নিহত ৮