গাজায় আজ থেকেই যুদ্ধবিরতি, ঘরে ফেরার অপেক্ষায় ফিলিস্তিনিরা

গাজায় বহুল প্রত্যাশিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হচ্ছে আজ। রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টা) এই চুক্তি কার্যকর হবে বলে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণার পর গাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তাদের সামান্য যা কিছু অবশিষ্ট রয়েছে, তা গুছিয়ে নিয়ে নিজেদের পুরোনো বসতবাড়িতে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ঘরে ফেরার আনন্দ ও সংশয়

গাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা সৌআদ ওয়ারশাগা বলেন, আমি অত্যন্ত খুশি। আমরা আমাদের জায়গা ও পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে ফিরে যেতে চাই। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার জন্য কালকের অপেক্ষা আর সইছে না। প্রথম দিকের মানুষের সঙ্গে আমিও আমাদের বাড়িতে ফিরে যাই।

তবে এই আনন্দের সঙ্গে রয়েছে সংশয়। লতিফা কাশকাশ নামের এক নারী বলেন, আমি খুশি, কারণ আমি আমার এলাকায় ফিরে যেতে পারবো। তবে আমি ভয় পাচ্ছি, কারণ ইসরায়েলিদের বিশ্বাস করতে পারি না। আমরা প্রিয়জন হারানোর পাশাপাশি সবকিছু হারিয়েছি। আমরা এখানে তাঁবুতে বসবাস করছি, সেখানেও তাঁবুতে থাকতে হতে পারে।

রাফাহ থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার

আল-জাজিরার আরবি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের কেন্দ্র থেকে তাদের যানবাহন সরিয়ে নিচ্ছে। গাজার দক্ষিণ সীমান্তে ফিলাডেলফি করিডোরে অবস্থান নিতে শুরু করেছে তারা।

শিশুদের জন্য সহায়তা প্রস্তুত

আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা গাজায় শিশুদের জন্য খাদ্য, পানি এবং ওষুধ সরবরাহে প্রস্তুতি নিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, গাজায় থাকা ১ কোটি ১০ লাখ শিশুর অধিকাংশই বর্তমানে জরুরি খাদ্যের অভাবে রয়েছে। অনেক শিশুই দিনে এক বেলা খাবারের ওপর নির্ভর করছে।

যুদ্ধবিরতির আগে নতুন হামলা

যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আগে গাজায় নতুন করে হামলার খবর পাওয়া গেছে। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, মধ্য গাজার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে বেশ কিছু আবাসিক ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এছাড়া উত্তর গাজায় বিমান হামলা এবং রাফাহ শহরে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতি সাময়িক হতে পারে। তিনি বলেন, যদি দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় অগ্রগতি না হয়, তবে গাজায় হামলা আবার শুরু করার জন্য আমরা প্রস্তুত। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ও আসন্ন প্রশাসনের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

যুদ্ধে প্রাণহানি

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৬ হাজার ৮৯৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ১ লাখ ১০ হাজার ৭২৫ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে হামাসের ওই দিনের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং ২০০ জনের বেশি মানুষ জিম্মি হয়েছিলেন।

গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তির শর্ত হিসেবে প্রথমদিনই তিনজন ইসরায়েলি জিম্মি এবং প্রায় ৯৫ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে।

  • Related Posts

    নবীন উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার গল্প শুনলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

    নবীন উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৫ জন নারী ও…

    Continue reading
    আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে বিএসএফ

    বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) ৫৯ মহানন্দা ব্যাটালিয়নের লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিএসএফ। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    নবীন উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার গল্প শুনলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

    নবীন উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার গল্প শুনলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

    গাজায় আজ থেকেই যুদ্ধবিরতি, ঘরে ফেরার অপেক্ষায় ফিলিস্তিনিরা

    গাজায় আজ থেকেই যুদ্ধবিরতি, ঘরে ফেরার অপেক্ষায় ফিলিস্তিনিরা

    আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে বিএসএফ

    আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে বিএসএফ

    দুই গোলে এগিয়েও জয় হাতছাড়া, শিরোপাস্বপ্নে বড় ধাক্কা আর্সেনালের

    দুই গোলে এগিয়েও জয় হাতছাড়া, শিরোপাস্বপ্নে বড় ধাক্কা আর্সেনালের

    সাইফের ঘটনায় ২ সন্দেহভাজন আটক

    সাইফের ঘটনায় ২ সন্দেহভাজন আটক

    রেমিট্যান্স পাঠানো দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র এখন শীর্ষে

    রেমিট্যান্স পাঠানো দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র এখন শীর্ষে

    বায়ুদূষণে দেশে প্রতিবছর ১ লাখের বেশি মৃত্যু: গবেষণা

    বায়ুদূষণে দেশে প্রতিবছর ১ লাখের বেশি মৃত্যু: গবেষণা

    ইরানে সুপ্রিম কোর্টের ২ বিচারপতিকে গুলি করে হত্যা

    ইরানে সুপ্রিম কোর্টের ২ বিচারপতিকে গুলি করে হত্যা

    টেকনাফে গহিন পাহাড়ে বন্যহাতির রহস্যজনক মৃত্যু

    টেকনাফে গহিন পাহাড়ে বন্যহাতির রহস্যজনক মৃত্যু

    বড় লিডের পথে পাকিস্তান, দ্বিতীয় দিনই কোণঠাসা ওয়েস্ট ইন্ডিজ

    বড় লিডের পথে পাকিস্তান, দ্বিতীয় দিনই কোণঠাসা ওয়েস্ট ইন্ডিজ