টানা কয়েক দিনের বিরতির পর আবারও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর থেকে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে কক্সবাজারের টেকনাফের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায়। বিস্ফোরণের বিকট শব্দে টেকনাফ সদর, পৌরসভা, হ্নীলা ও সাবরাং এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন।
টেকনাফের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা জানান, গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার পর থেকে মংডু শহর এলাকা থেকে আবারও বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসতে থাকে। আজ বুধবার বেলা দুইটা পর্যন্ত বিস্ফোরণ অব্যাহত ছিল। এ সময় মিয়ানমারের মংডু এলাকায় যুদ্ধবিমান চক্কর দিতেও দেখেছেন টেকনাফের বাসিন্দারা। এর আগে সর্বশেষ ৩ নভেম্বর মিয়ানমারের মংডু এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল।
টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির চলমান যুদ্ধ পুনরায় তুমুল হয়েছে। ফলে আবারও বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে। এসব শব্দ মর্টার শেল ও বোমা বিস্ফোরণের। মংডু টাউনশিপের আশপাশের উকিলপাড়া, ফয়েজীপাড়া, সুধাপাড়া, নাপিতের ডেইল, নয়াপাড়া, সিকদারপাড়া ও হারিপাড়া এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষ হচ্ছে।
সাবরাং আছারবনিয়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ সাবের বলেন, আজ বুধবার ফজরের নামাজ পাড়ানোর সময় বোমার বিকট বিস্ফোরণের শব্দে থর থর করে পুরো মসজিদ কেঁপে উঠেছে। শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা ও গণমাধ্যমকর্মী জসিম মাহমুদ বলেন, ৯ মাস ধরে এলাকার মানুষের চোখে ঘুম নেই। দিনের বেলা তো যেমন-তেমন, রাত হলেই বাড়ে দুশ্চিন্তা। মিয়ানমারের সমস্যার কারণে এপারের বাসিন্দাদের আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিমান দেখে মনে হয়, এই বুঝি আমাদের বাড়ির ওপর বোমা ফেলল।’
মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপের বিপরীতে নাফ নদীর এপারে টেকনাফের সাবরাং এলাকা। সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ শরিফ বলেন, কয়েক দিন ধরে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী টেকনাফের বাসিন্দারা কিছুটা স্বস্তিতে ছিলেন। হঠাৎ মঙ্গলবার রাতে আবারও বিস্ফোরণের শব্দে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
হ্নীলার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, মংডু শহর থেকে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দে সীমান্তের বাসিন্দারা সব সময় আতঙ্কের মধ্যে জীবন যাপন করছেন। হ্নীলার ইউপির চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী ও সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, বিস্ফোরণের বিকট শব্দে সাবরাং এলাকার বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি কেঁপে উঠছে। লোকজন শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে খুবই বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টানা ৯ মাসের বেশি সময় ধরে রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়ছে আরাকান আর্মি। ইতিমধ্যে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের আশপাশে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) বেশ কিছু সীমান্তচৌকি দখলে নিয়েছে।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের সংঘাত দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে এর ফলে সীমান্তে বসবাস করা বাংলাদেশি নাগরিকেরা নানা ধরনের সমস্যায় পড়ছেন। এ সংঘাতের জেরে কেউ যাতে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে, সে লক্ষ্যে সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে।