
কুয়ালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন পরিদর্শন করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন। সরকারি সফরে সিঙ্গাপুর যাওয়ার পথে কুয়ালালামপুরে যাত্রা বিরতিকালে তিনি হাইকমিশন পরিদর্শন করেন এবং হাইকমিশনের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
হাইকমিশনের একটি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় হাইকমিশনের নতুন চ্যান্সারি ভবনে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানান হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এরপর মিশনের অডিটোরিয়ামে সবার উপস্থিতিতে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভার শুরুতেই হাইকমিশনের কার্যক্রম নিয়ে একটি উপস্থাপনা করা হয়। উপস্থাপনা শেষে হাইকমিশনার শামীম আসান স্বাগত বক্তব্য দেন যেখানে তিনি প্রথমবারের মতো কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন পরিদর্শন এবং মিশনের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করার জন্য পররাষ্ট্র সচিবকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এরপর পররাষ্ট্র সচিব মিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।
বক্তব্যের শুরুতেই পররাষ্ট্র সচিব জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আত্মত্যাগকারী শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। হাই কমিশনের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি মিশনের কর্মকর্তাদের দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির পাশাপাশি দুদেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক নিবিড়তরকরণ, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, প্রবাসীদের কল্যাণ এবং জনকূটনীতির ওপর জোর দেওয়ার নির্দেশনা দেন।

ঢাকায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইনভেস্টমেন্ট সামিটের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে দেশে-বিদেশি বিনিয়োগ আসার পথ এখন সুগম হয়েছে। তিনি মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দেন।
মালয়েশিয়ার সঙ্গে বিদ্যমান ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সম্পর্কের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আসিয়ানের সেক্টোরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং এ লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। মালয়েশিয়া এ বছর আসিয়ানের সভাপতি বিধায় এ বিষয়ে অত্র হাইকমিশনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পাসপোর্ট বিতরণসহ অন্যান্য সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রবাসীদের সঙ্গে সংবেদনশীল আচরণ এবং প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে সেবার মান উন্নয়নে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়ার জন্য তিনি নির্দেশনা দেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এমআরপি পুরোপুরি বাতিল করে ই-পাসপোর্ট চালুর বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সদয় নির্দেশনা রয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়নে মিশনকে সকল প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দেন পররাষ্ট্র সচিব।
মালয়েশিয়ায় প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিতকরণ এবং বাংলাদেশিদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকে এই মিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে উল্লেখ করে তিনি এক্ষেত্রে মিশনের তৎপরতা বাড়াতে বলেন।
এ প্রসঙ্গে ভিসা পেয়েও মালয়েশিয়ায় আসতে না পারা প্রায় ১৮,০০০ শ্রমিকের সমস্যা সমাধানে মালয়েশিয়ার সরকারসহ সকল অংশীজনের সাথে নিবিড় যোগাযোগ অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দেন তিনি।

প্রবাসীদের সুবিধার্থে কুয়ালালামপুরের বাইরে প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যুষিত কয়েকটি শহরে কনস্যুলেট জেনারেল অফিস খোলার প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানান।
পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, বিদেশস্থ দূতাবাসগুলোর সাথে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ এবং জবাবদিহিতা বৃদ্ধির জন্য সকল দূতাবাস ও হাইকমিশনকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং ও মূল্যায়ন সংক্রান্ত ড্যাশবোর্ডের সাথে সংযুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া কুয়ালালামপুরস্থ হাইকমিশনে জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততা, নিষ্ঠা এবং পেশাদারত্বের সাথে দায়িত্ব পালন এবং টিম- স্পিরিট নিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দেন তিনি।
মান্যবর হাই কমিশনার মো. শামীম আহসানের সুদক্ষ নেতৃত্বে অত্র মিশনের নানামুখী কর্মতৎপরতায় গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র সচিব। তিনি হাইকমিশনের কার্যক্রমে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পূর্ণ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
মতবিনিময় শেষে তিনি মিশনের নতুন ভবনের বিভিন্ন কক্ষ এবং নির্মানাধীন সেবাকেন্দ্রসমূহ ঘুরে দেখেন।
কর্মব্যস্ততার মাঝেও কুয়ালালামপুরে যাত্রা বিরতি এবং হাইকমিশন পরিদর্শনের জন্য পররাষ্ট্র সচিবকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান।