
অবৈধ অভবাসীদের জন্য সুখবর দিয়েছে ফ্রান্স সরকার। অনিয়মিত অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার জন্য একটি কর্মসূচি নিয়েছে তারা। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি গেজেট প্রকাশ করেছে ফরাসি সরকার। মূলত শ্রমবাজারে কর্মী সংকট মোকাবিলায় তারা এমন পদক্ষেপ নিয়েছে।
ফ্রান্সের শ্রম, স্বাস্থ্য, সংহতি ও পরিবার মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে প্রণীত এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত পেশাগুলোতে বর্তমানে কর্মরত অনিয়মিত অভিবাসীরা এখন ‘টেম্পোরারি ওয়ার্কার’ বা ‘এমপ্লয়ি’ ক্যাটাগরির অধীনে এক বছরের জন্য অস্থায়ী বাসস্থান কার্ডের আবেদন করতে পারবেন।
তালিকাভুক্ত পেশাসমূহের মধ্যে রয়েছে, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, হোটেল-রেস্তোরাঁ কর্মী, গৃহসহায়ক, রান্নাঘরের সহকারী ও রাঁধুনি। এছাড়া বাজারজাতকরণ কর্মীসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতও এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে—
১. ফ্রান্সে কমপক্ষে তিন বছর বসবাস।
২. সর্বশেষ দুই বছরে অন্তত ১২ মাস তালিকাভুক্ত পেশায় কাজের প্রমাণ।
৩. অপরাধমূলক রেকর্ড না থাকা এবং পুলিশের ক্লিয়ারেন্স সনদ।
৪. ফরাসি মূল্যবোধে সম্মান প্রদর্শন ও সমাজে একীভূত হওয়ার প্রমাণ।
এই পদ্ধতি ২০২৬ সাল পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে কার্যকর থাকবে।
উল্লেখ্য, এবারই প্রথম আবেদনকারীরা নিয়োগকর্তার সরাসরি অংশগ্রহণ ছাড়াই নিজে থেকে আবেদন করতে পারবেন।
ভাষা জ্ঞান এখন বড় চ্যালেঞ্জ
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে পাস হওয়া নতুন অভিবাসন আইনে ভাষা জ্ঞান সংক্রান্ত শর্ত আরও কঠোর করা হয়েছে। বহু বছরের বাসস্থান কার্ড পেতে এখন B1 স্তরের (পূর্বে A2) ফরাসি ভাষা দক্ষতা প্রয়োজন। আর ১০ বছরের রেসিডেন্ট কার্ড ও নাগরিকত্ব পেতেও ভাষার উচ্চতর স্তর (B1 ও B2) আবশ্যক করা হয়েছে।
বাংলাদেশিদের জন্য নতুন সুযোগ
ফ্রান্সে বসবাসরত বহু বাংলাদেশি নাগরিক বর্তমানে নির্মাণ, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও পরিচ্ছন্নতা খাতে কাজ করছেন। এ খাতগুলো নতুন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায়, তারা বৈধতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে, ভাষা জ্ঞান ও অন্যান্য শর্ত পূরণ করাও হবে গুরুত্বপূর্ণ।
শ্রমমন্ত্রী আস্ত্রিদ পানোসিঅঁ-বুভে বলেন, ‘এ তালিকাটি শ্রমবাজারের চাহিদা, মানবিক বাস্তবতা ও জাতীয় স্বার্থকে মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে।’
চাকরি বিষয়ক সরকারি সংস্থা ফ্রঁন্স ত্রাবাই পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৫ সালে কেবল হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতেই তিন লাখ ৩৬ হাজার পদ শূন্য থাকবে, যার অনেকগুলো পূরণে কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে।
ফরাসি ট্রেড ইউনিয়ন সিজিটির মতে, তালিকাটি রাজনৈতিক সমঝোতার প্রতিফলন হলেও বাস্তব শ্রমবাজার চাহিদা পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়নি।