এবার ভারতে এমপক্স ভাইরাসের নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে এই ভাইরাসের ক্লেড১ ভ্যারিয়েন্ট বিভিন্ন দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এটি আগের ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে আরও গুরুতর বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি ত্বকের সংস্পর্শ থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এর আগে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ থেকে আফ্রিকার কিছু অংশে এমপক্সের প্রাদুর্ভাবকে জরুরি জনস্বাস্থ্য অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। আফ্রিকার বাইরে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরালা রাজ্যে ৩৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তির দেহে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তিনি সম্প্রতি দুবাই থেকে দেশে ফিরেছেন।
আক্রান্ত ওই ব্যক্তি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি গত কয়েকদিনে যাদের সংস্পর্শে এসেছেন তাদেরও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধব মিলিয়ে ২৯ জন এবং তিনি যে ফ্লাইটে করে দেশে ফিরেছেন ওই ফ্লাইটে থাকা ৩৭ যাত্রীকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে তাদের কারও শরীরেই এমপক্সের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
গত দু’বছর ভারতে এমপক্সের পুরোনো ধরন অর্থাৎ ক্লেড ২ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছে ৩০ জনের বেশি মানুষ। তবে এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায় না। চলতি মাসের শুরুতে উত্তরাঞ্চলীয় হরিয়ানা রাজ্যে এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হন এক ব্যক্তি। তিনি ক্লেড ২ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
গুটিবসন্তের একই গোত্রীয় এই ভাইরাস প্রথমে প্রাণী থেকে মানুষের দেহে স্থানান্তরিত হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে। এই রোগে আক্রান্তদের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, পিঠে এবং পেশিতে ব্যথা।
আক্রান্ত ব্যক্তির একবার জ্বর উঠলে গায়ে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। সাধারণত মুখ থেকে শুরু হয়ে পরে হাতের তালু এবং পায়ের তলদেশসহ শরীরের অন্য অংশে তা ছড়িয়ে পড়ে।
অত্যন্ত চুলকানো বা ব্যথাদায়ক এই ফুসকুড়িগুলো পরিবর্তন হয় এবং বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে স্ক্যাব বা গোল গোল পুরু আস্তরে পরিণত হয়ে শেষে পড়ে যায়। ফলে দাগ সৃষ্টি হতে পারে। সংক্রমণের ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে এটি নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যেতে পারে।
তবে ছোট শিশুসহ ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য কিছু ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত মারাত্মক। এর আক্রমণের কারণে গুরুতর ক্ষেত্রে মুখ, চোখসহ পুরো শরীরে ক্ষত তৈরি হতে পারে।
এমপক্স সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক, সরাসরি সংস্পর্শ কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি এসে কথা বলা বা শ্বাস নেওয়ার মতো ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে এটি একজনের থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটি ফাটা চামড়া, শ্বাসতন্ত্র বা চোখ, নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
ভাইরাসে দূষিত হয়েছে এমন জিনিস যেমন বিছানা, পোশাক এবং তোয়ালে স্পর্শের মাধ্যমেও এটি ছড়াতে পারে। বানর, ইঁদুর এবং কাঠবিড়ালির মতো কোনো প্রাণী যদি এতে সংক্রমিত হয় আর কেউ যদি ওই সংক্রমিত প্রাণীর সঙ্গে বেশি কাছাকাছি আসে তবে তিনিও আক্রান্ত হতে পারেন।
২০২২ সালের বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাবের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। কঙ্গোর বর্তমান প্রাদুর্ভাবের বড় একটি কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।
২০২২ সালে আফ্রিকায় প্রথম এই ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। মূলত কঙ্গোতেই প্রথম এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। বর্তমানে বুরুন্ডি, ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, আইভরি কোস্ট, কঙ্গো, ঘানা, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়া, রুয়ান্ডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, মোজাম্বিক, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড এবং সুইডেনে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
২০২২ সালে ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু দেশসহ প্রায় ১০০টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাসটি। সেসময়েও বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পূর্বে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত ছিল এই ভাইরাস। গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে এই ভাইরাসের প্রাথমিক প্রাদুর্ভাবের সময় কমপক্ষে ৪৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আফ্রিকায় সংক্রমিত এলাকাগুলোতে এমপক্স প্রতিরোধে টিকা নেওয়ার সুপারিশ করেছে ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (ইসিডিসি)। তবে ইসিডিসি বলেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি এমপক্স পরিস্থিতি নিয়ে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলেও এটি বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম।