কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কিছু দেশে বিক্ষোভ করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এর মধ্যে আমিরাতে বিক্ষোভ করায় ৫৭ জন বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। বিষয়টি নিয়ে ‘বিব্রত’ সরকার।
কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর পর বিভিন্ন দেশে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন প্রবাসীরা। গত ১৯ জুলাই সংযুক্ত আরব আমিরাতে বেশ কয়েকটি সড়কে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। দেশটির আইন অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ বা স্লোগান দেওয়া নিষিদ্ধ। জনগণের মধ্যে অস্থিরতা, আতঙ্ক বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো কাজ করা, গুজব বা অপপ্রচার চালানো কিংবা এ ধরনের কোনো বক্তব্য, ছবি বা ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা এদেশে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
নিয়ম ভেঙে সেখানে বিক্ষোভ করায় ৫৭ জন বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি আদালত। তাদের মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন, ৫৩ জনকে ১০ বছর এবং বাকি একজনকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া সৌদিতেও বিক্ষোভের কারণে কয়েকজনকে গ্রোফতারের খবর পাওয়া যায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশে নিয়ম ভেঙে সরকারবিরোধী এমন বিক্ষোভের ফলে আটক ও শাস্তির বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে সরকার। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শ্রমিক ভিসা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। তবে সরকারের তরফ থেকে এটি সমাধানে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে এসব ক্ষেত্রে আইন-কানুন খুবই কঠিন। সৌদি ও আরব আমিরাতে এ ধরনের আন্দোলন করা যায় না। তারা এটি জেনে করেছে নাকি না জেনে সেটি একটি বিষয়। তবে এটি অবশ্যই বিব্রতকর।- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব সাব্বির আহমেদ চৌধুরী
এ বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত সাংবাদিকদের বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কোটা আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি দেখাতে গিয়ে সেই দেশগুলোতে অনেকেই আইনের আওতায় এসেছেন এবং সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার তাদের ব্যাপারে খুবই উদ্বিগ্ন। এ বিষয় ঘিরে আমাদের অন্য প্রবাসীরা যেন আর কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হন সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দূতাবাসগুলো কাজ করছে। সরকার প্রবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর।
দুবাইয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন একটি ভিডিওবার্তায় বলেন, গুজবের ফাঁদে পা দিয়ে সাধারণ প্রবাসীরা রাস্তায় নেমেছে, মিছিল করেছে, ভাঙচুর করেছে, এদেশের আইন ভঙ্গ করেছে। অনেকের এরই মধ্যে জেল-জরিমানা হয়েছে। যারাই সক্রিয়ভাবে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন প্রত্যেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এখানকার সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশিরা সাধারণভাবে অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়, অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং এদেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
‘গুজব প্রচারকারীরা পেজগুলোতে গুজব ছড়িয়ে তাদের ইনকাম বাড়াচ্ছেন, তারা গুজব ব্যবসায়ী। যে ৫৭ জনের জেল হলো, তার মধ্যে তিনজনের যাবজ্জীবন ও বাকিদের ১০ থেকে ১১ বছর জেল হয়েছে- এদের পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব কে নেবে?’