যশোরের কেশবপুরে ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেকের বাড়িতে রান্না করার অবস্থাও নেই। গত শনি, রবি ও সোমবার তিন দিন ভারী বর্ষণ হয়। এরপর মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। এ দুদিনেও পানি নামেনি। পাঁচ দিন ধরে এলাকার মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।
স্থানীয় লোকজন বলেন, গতকাল বুধবারও পানি বেড়েছে। কেশবপুরে জমা পানি হরিহর নদ, বুড়িভদ্রা নদী ও ভদ্রা নদী দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি নদী দিয়ে নিষ্কাশিত হতে পারছে না।
সরেজমিনে গতকাল পৌর শহরের সাহাপাড়া, কলেজপাড়া, মধ্যকুল, ভোগতী নরেন্দ্রপুর, ব্রহ্মকাঠি, আলতাপোল, বালিয়াডাঙ্গা ও কেশবপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাড়িতে পানি। হাবাসপোল মধ্যকুল গ্রামে কোথাও শুকনা মাটি নেই।
কেশবপুর পৌর এলাকার হাবাসপোল এলাকার জমিরুন নেসা (৬৮) বলেন, ‘খাওয়াদাওয়ার অসুবিধা। সবচেয়ে বেশি অসুবিধা প্রস্রাব-পায়খানার। কত যে অসুবিধার মধ্যে আছি, তা বলে বোঝানো যাবে না। এ এলাকার প্রতিটি বাড়িতে পানি।’
সাহাপাড়ার বাসিন্দা পদ্ম রানী জানান, পানি ওঠায় তিনি বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। একটি গরু আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
রফিকুল ইসলাম বলেন, শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া হরিহর নদ ও বুড়িভদ্রা নদী পলিভরাট হয়ে গেছে। ফলে একটু বৃষ্টিতেই শহরের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানের জন্য নদী খনন করার দাবি জানান তিনি।
শহরের ভূমি কার্যালয়, থানা, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, পাইকারি কাঁচাবাজার, মাছবাজার, ধানহাটা, কেশবপুর গমপট্টি, কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ, কেশবপুর বাহারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা, কেশবপুর মহিলা মাদ্রাসায় পানি উঠে গেছে। কেশবপুর-পাঁজিয়া আর কেশবপুর-বায়সা সড়কে পানি উঠে গিয়ে যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।
কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান জানান, তিন দিন ধরে ছাত্র-ছাত্রী না আসায় ক্লাস বন্ধ রয়েছে। কলেজে ঢোকার পথসহ শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে গেছে।
কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী রুহুল আমিন জানান, পাঁচ দিন ধরে কাঁচাবাজারে পানি উঠে গিয়ে তাঁদের বেচাকেনা বন্ধ হয়ে গেছে। ধান হাটার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শফি বলেন, হঠাৎ ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় ধান ও পাট ভিজে গিয়ে ক্ষতি হয়ে গেছে।
কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল আলম বলেন, থানায় পানি উঠে যাওয়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
কেশবপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ১০৪ গ্রামে এখন পানি উঠে গেছে। এসব গ্রামের ৯ হাজার ৮৩০টি পরিবারের ৩৯ হাজার ৩২০ জন এখন পানিবন্দী।
উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সজীব কুমার সাহা জানান, ৩ হাজার ৬৪৯টি মাছের ঘের, ২ হাজার ৪২০টি পুকুর ভেসে গেছে।
সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কিরনময় সরকার জানান, অতিবৃষ্টির কারণে রোপা আমন ৩ হাজার ১৭৩ হেক্টর, সবজি ৩০০ হেক্টর, মরিচ ২১ হেক্টর, হলুদ ৩০ হেক্টর, তরমুজ ৬ হেক্টর, ছোলা সাড়ে ৯ হেক্টর, পান সাড়ে ২৫ হেক্টর, আখ ২০ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পানি নিষ্কাশিত না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে কেশবপুর পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ও নাগরিক সমাজের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, কেশবপুরের আটকে থাকা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হতে না পারার মূল কারণ হচ্ছে, শহরের পাশ দিয়ে যাওয়া হরিহর ও বুড়ি ভদ্রা নদী ভরাট হয়ে যাওয়া। এ কারণে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন, এই নদ-নদী দুটো খনন করার। নদী খনন না হওয়ার কারণেই এই পানি নিষ্কাশন হতে পারছে না। ফলে দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন জানান, আপত্কালীন পানি নিষ্কাশনের জন্য পানি উন্নয়নের বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, নদী খননের প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। তারপরও আপত্কালীন পানি নিষ্কাশনের দরকার হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।