কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশে সহিংসতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২২ জন সিনেটর ও কংগ্রেসম্যান।
চিঠিতে তারা বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকার ছাত্রদের বিক্ষোভ দমনে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে ব্যবহার করেছে। সহিংসতা ও সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।
চিঠিতে মার্কিন আইনপ্রণেতারা চলতি বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন। এই নির্বাচন স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জোরালো সহিংসতা ঘটেছে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরে পুলিশ, বিক্ষোভকারী, বিরোধী কর্মী ও সরকারপন্থি সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত হয়েছে। এতে ১৭০ জন নিহত ও কয়েক হাজার আহত হয়েছে।
বিক্ষোভের জবাব দিতে গিয়ে বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞায় থাকা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) ব্যবহার করেছে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করেছে দাঙ্গা পুলিশ। এছাড়া সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কঠোর কারফিউ ও ‘দেখামাত্রই গুলি করার’ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি, বিক্ষোভ দমনের জন্য ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ রাখা হয়।
এসব ঘটনার কথা উল্লেখ করে তারা চিঠিতে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই সব সহিংসতার নিন্দা করতে হবে। সেই সঙ্গে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মতো কর্মসূচি পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বিক্ষোভ দমনে যেসব সরকারি কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন, তাদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
বাংলাদেশের এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরকে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয় ওই চিঠিতে। বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশীদার হতে হবে, যারা বাংলাদেশি জনগণের একটি প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকারের অধিকারের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে।
চিঠিতে বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের বিষয়টি উল্লেখ করে মার্কিন সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানরা বলেছেন, আটককৃতদের মধ্যে কেউ কেউ মুক্ত হলেও, এখনো অনেকেই কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া গণমাধ্যমকর্মী ও সরকার-বিরোধী সমালোচকরা অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা গুরুতরভাবে বঞ্ছিত হয়েছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশে হয়রানি, নজরদারি কিংবা শারীরিক আক্রমণ চালানোর পাশাপাশি কঠোর ডিজিটাল সেন্সরশিপ অব্যাহত রয়েছে বলেও বলা হয় ওই চিঠিতে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশে শ্রম আইন ব্যবস্থার উন্নতি করতে ব্যর্থ হওয়া না পারার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ২০২১ সালের বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান বা র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও তুলে ধরা হয় এই চিঠিতে।
চিঠিতে যে সব মার্কিন সিনেটর সই করেছেন তারা হলেন- অ্যাডওয়ার্ড জে. মার্কি, ক্রিস ভ্যান হোলান, টাম্মি বাল্ডিন, জেফরি এ মার্কলি, ক্রিস্টোফার এস মারফি, টিম কাইন, রিচার্ড জে ডারবিন।