
অন্যান্য দেশের মতো মালয়েশিয়াও ঈদুল আজহার নামাজ উদযাপিত হলো ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ত্যাগের মহিমায়। বিশেষ করে এখানকার লাখো প্রবাসী মুসলিমদের জন্য এই দিনটি এক ভিন্ন মাত্রা নিয়ে আসে।
পরিবার ও দেশ থেকে দূরে থাকলেও, প্রবাসীরা সম্মিলিতভাবে এই উৎসব পালন করে নিজেদের মধ্যে একাত্মতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
ঈদুল আজহার সকালে কুয়ালালামপুরসহ মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশের মসজিদগুলোতে ছিল মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড়। পুত্রা মসজিদ, মালয়েশিয়ার জাতীয় মসজিদ নেগারা, শাহ আলম মসজিদ এবং অন্যান্য বড় মসজিদগুলোতে হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি, ইন্দোনেশিয়ান, পাকিস্তানি এবং স্থানীয় মালয়েশিয়ান মুসলিমরা ঈদের নামাজ আদায় করতে সমবেত হন। অনেক মসজিদে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মুসল্লিদের মসজিদের বাইরে, সংলগ্ন রাস্তা বা খোলা মাঠে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক” ধ্বনিতে মুখরিত ছিল মসজিদ প্রাঙ্গণ।
ভোর থেকেই মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের আগমন শুরু হয়। সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে বেশিরভাগ মসজিদেই নামাজ শুরু হয়। নামাজ শেষে প্রবাসীরা একে অপরের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনেকেই দীর্ঘদিনের পরিচিত বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করার সুযোগ পান। প্রবাসের এই ব্যস্ত জীবনে ঈদের দিনটি তাদের জন্য এক অনবদ্য আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের বার্তা নিয়ে আসে। ঈদের নামাজ আদায়ের পর অনেকেই দলবেঁধে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যান, প্রিয়জনদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।
মালয়েশিয়ার সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন প্রবাসীদের ঈদ উদযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করে। অনেক মসজিদ কমিটিও প্রবাসীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার আয়োজন করে।
ঈদুল আজহার মূল আকর্ষণ কোরবানি। মালয়েশিয়ায় অনেক প্রবাসী ব্যক্তিগতভাবে বা সম্মিলিতভাবে পশু কোরবানি করে থাকেন। স্থানীয় মসজিদ কমিটি এবং বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার কোরবানির আয়োজন করে, যেখানে প্রবাসীরা অংশগ্রহণ করতে পারেন। জবাইয়ের পর কোরবানির মাংস সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়: একভাগ নিজেদের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের জন্য, এবং একভাগ অভাবী ও দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। অনেক প্রবাসী সংঘবদ্ধভাবে পশু কোরবানি দিয়ে সেই মাংস নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন এবং বন্ধুদের সঙ্গে ভোজের আয়োজন করেন।
মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং অন্যান্য দেশের দূতাবাসগুলো প্রবাসীদের জন্য ঈদের বিশেষ শুভেচ্ছা বার্তা প্রকাশ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রবাসীদের জন্য বিশেষ দোয়া মাহফিল ও মিলনমেলার আয়োজন করা হয়।
এই উপচে পড়া ভীড় একদিকে যেমন মালয়েশিয়ায় মুসলিম প্রবাসীদের বিপুল সংখ্যক উপস্থিতির প্রমাণ, তেমনি অন্যদিকে এটি প্রবাসে থেকেও নিজ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রাখার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ঈদের এই দিনে মসজিদগুলো শুধু উপাসনার স্থান নয়, বরং প্রবাসীদের জন্য এক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনকেন্দ্রে পরিণত হয়।