
পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষিজমিতে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করেছে ভারতের সঙ্গে হওয়া সিন্ধু পানি চুক্তি। সম্প্রতি কাশ্মীর হামলা কেন্দ্র করে এই চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। এতে পাকিস্তানি কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের লতিফাবাদে সিন্ধু নদের পাশে ফসলের মাঠে কাজ করা কৃষক হোমলা ঠাকুর বলেন, যদি তারা (ভারত) পানি বন্ধ করে দেয়, তবে এখানকার সব কিছু মরুভূমিতে পরিণত হবে। পুরো দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা না খেয়ে মারা যাব। কারণ পানি ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, মহান আল্লাহ করুণাময়। তিনি অবশ্যই কোনো না কোনো উপায় বের করে দেবেন। তিনি চাইলে বৃষ্টি হবে, তবে এই মুহূর্তে আমরা শঙ্কায় আছি।
৪০ বছর বয়সী এই কৃষক জানান, তার ৫ একর জমির কৃষিকাজ সম্পূর্ণভাবে সিন্ধু নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু নদীর পানি এখন চোখে পড়ার মতো হ্রাস পেয়েছে, আবার বৃষ্টিও আশানুরূপ হয়নি।
ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাকিস্তান যদি ‘সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসে সমর্থন দেওয়া পুরোপুরি ও স্থায়ীভাবে বন্ধ না করে’, তাহলে সিন্ধু চুক্তির স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। ভারত দাবি করেছে, পহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় অংশ নেওয়া তিন জঙ্গির মধ্যে দুজন পাকিস্তানি। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, পাকিস্তানের প্রাপ্য পানি বন্ধ বা অন্যদিকে প্রবাহিত করার যে কোনো চেষ্টা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে।
ভারতীয় জল-সম্পদ মন্ত্রী চন্দ্রকান্ত রঘুনাথ পাতিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছেন, আমরা নিশ্চিত করবো যে সিন্ধুর এক ফোঁটা পানিও যাতে পাকিস্তানে না পৌঁছায়।
তবে পানি বন্ধ করা তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব নয়, কারণ চুক্তি অনুযায়ী ভারত কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাঁধ তৈরি করতে পারে, বড় ধরনের পানি সংরক্ষণ বা রুট পরিবর্তনের অনুমতি নেই। তবে ভারতের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই তারা নিজেদের কৃষিকাজে পানি ব্যবহার শুরু করতে পারে এবং ভবিষ্যতের জন্য হাইড্রোইলেকট্রিক বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।
ভারত এরই মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে পানিপ্রবাহ, বন্যা সতর্কতা এবং বার্ষিক বৈঠক সম্পর্কিত সব তথ্য শেয়ার বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতের সাবেক সিনিয়র পানি কমিশনার কুশভিন্দর ভোরা বলেন, তারা আর জানতে পারবে না কখন পানি আসছে, কতটা আসছে। এই তথ্য ছাড়া তারা কোনো পরিকল্পনাই করতে পারবে না।
এ অবস্থায় শুধু কৃষিই নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সামগ্রিক অর্থনীতিও ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে পাকিস্তান। প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপরও। তাছাড়া এই সংকট কেবল দুই দেশের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ নয়, এটি কোটি কোটি মানুষের জীবিকার জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হয়ে উঠছে।
অর্থনীতিবিদ ওয়াকার আহমেদ বলেন, পাকিস্তান এতদিন ভেবে আসছিল যে ভারত এই চুক্তি থেকে সরে যাবে না। কিন্তু তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এখন পাকিস্তানের উচিত দ্রুত নিজেদের পানি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা দূর করা।