আন্দোলনের মুখে কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই) তাঁর গ্রেপ্তারের কথা নিশ্চিত করেছে।
আর জি করের নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনায় সন্দীপ ঘোষকে গত ১৫ আগস্ট প্রথমবারের মতো তলব করে সিবিআই। পরের দিন থেকে তাঁকে ১৬ দিন জেরা করা হয়। গত শনি ও রোববার শুধু তাঁকে জেরা করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সন্দীপ ঘোষকে সিবিআইয়ের রাজ্য দপ্তর সিজিও কমপ্লেক্সে দৈনিক ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে হয়েছিল।
সোমবার সন্দীপ ঘোষকে আবার তলব করা হয় সিজিও কমপ্লেক্সে। সন্ধ্যায় সেখান থেকে বের করে সিবিআই কর্মকর্তারা তাঁকে নিজাম প্যালেসে নিয়ে যান। এর পরেই সিবিআই সন্দীপ ঘোষকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেয়।
পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবি
নারী চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করার অভিযোগে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। এতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা যোগ দিয়েছেন।
জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি, নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনা যথাযথভাবে তদন্ত না করে পুলিশ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে। বাঁচাতে চাইছে কাউকে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল তদন্তের নামে বিভিন্ন তথ্য ও নথিপত্র লোপাট করেছেন। তাই জুনিয়র চিকিৎসকেরা অবিলম্বে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন। এই দাবিতে সোমবার বেলা দুইটায় জুনিয়র চিকিৎসকেরা বিরাট মিছিল নিয়ে কলেজ স্কয়ার থেকে কলকাতার পুলিশ হেডকোয়ার্টার লালবাজারের দিকে যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ লালবাজারের অদূরে ফিয়ার্স লেনের মুখে নয় ফুট উঁচু লোহার ব্যারিকেড দিয়ে লালবাজার অভিমুখী সড়ক আটকে দেয়।
পুলিশের ব্যারিকেডের কারণে জুনিয়র চিকিৎসকেরা মিছিল এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হন। এরপর তাঁরা ফিয়ার্স লেনের মুখেই সড়কে বসে পড়েন। পুলিশ কমিশনার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাঁরা সড়ক ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দেন।
এরই মধ্যে পুলিশের একটি প্রতিনিধিদল আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করে। তাঁদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধিদলকে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তাঁরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। পুলিশ কমিশনার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত সড়কে অবস্থান করার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
রোববারও কলকাতার নারীরা রাত দখল কর্মসূচি পালন করেছেন। এতে অংশ নেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, উষসী চক্রবর্তী, সোহিনী সরকার, দেবলীনা দত্ত প্রমুখ।
বিজেপির কর্মসূচি
এদিকে বিজেপি রাজ্যজুড়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (ডিএম) দপ্তর ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। বিজেপির নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। বিভিন্ন জেলায় বিজেপির বিক্ষোভ মিছিল ঠেকাতে পুলিশ বড় বড় ব্যারিকেড দিয়ে ডিএম দপ্তরে ঢুকতে বাধা দেয়।
বর্ধমান, মালদহ, আলিপুর, কোচবিহার, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বহরমপুর ও আসানসোলে বিজেপি ডিএম দপ্তর ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় আলিপুর ডিএম দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন। পুলিশ কোচবিহারে বিজেপির প্রতিবাদ মিছিল ঠেকাতে জলকামান ব্যবহার করে। আরও কয়েকটি স্থানে বিজেপি নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে পুলিশ।