ট্রাভিস হেডকে ভারতের ‘মাথাব্যথা’ বলে উল্লেখ করেন অনেকে। তা বলাই স্বাভাবিক, জাসপ্রিত বুমরাহদের মুখোমুখি হলেই মরণযন্ত্রণা দিতে পছন্দ করেন তিনি। ২৪ ইনিংসে এই দলটির বিপক্ষে তার ৩টি টেস্ট সেঞ্চুরি। সব ফরম্যাট মিলিয়ে ৪টি। এমন একটি উপমা খোঁজা দরকার স্টিভ স্মিথের জন্যও। তিনিও তো ভারতের জন্য কম বিপজ্জনক নন।
স্টিভ স্মিথ ভারতের জন্য বিপজ্জনক। এর ব্যাখ্যাটা স্মিথের ব্যাটেই মিলে।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাস প্রায় দেড়শ বছর পুরনো। ভারত প্রথম টেস্ট খেলেছিল ৯২ বছর আগে। লম্বা এই সময়ে ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিকের নাম স্মিথ। মেলবোর্ন টেস্টে ১৪০ রান করে ক্যারিয়ারের ৩৪তম টেস্ট শতক তুলে নিয়েছেন তিনি। ৪৩ ইনিংসে ভারতের বিপক্ষে এটি তার ১১তম। ১৪০ রান করার পথে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরির হিসাবে তিনি পেছনে ফেলেছেন জো রুটকে, ইংলিশম্যানের সেঞ্চুরির সংখ্যা ১০টি। শুধু টেস্টে নয়, তিন ফরম্যাট মিলিয়েই ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরিয়ান স্মিথ, ১৬টি। ১৪ সেঞ্চুরি নিয়ে দুইয়ে তারই স্বদেশী রিকি পন্টিং।
স্মিথের সেঞ্চুরিতে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৪৭৪ রান সংগ্রহ করেছে অস্ট্রেলিয়া। ৬৮ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করেছিলেন স্মিথ। প্যাট কামিন্সকে সঙ্গে নিয়ে ১৬৭ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। ব্রিসবেনে ১০১ রান করলেও মেলবোর্নেই বেশি সাবলীলতা দেখিয়েছেন প্রজন্মসেরা টেস্ট ব্যাটার। কামিন্স বিদায় নেন অর্ধশতক থেকে এক রান দূরে থাকতে।
এদিন বুমরাহকে এক টেস্টে সবচেয়ে বেশি ছক্কা হজমের লজ্জাও দিয়েছেন স্মিথ। আগের দিন স্যাম কনস্টাসের কাছে দুই ছক্কা খাওয়া বুমরাহকে স্মিথ মেরেছেন একটি। ৭ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে বুমরাহ আগে কখনও এক ম্যাচে দুইয়ের অধিক ছক্কা হজম করেননি, এবার এক ইনিংসেই ৩টি। এক ইনিংসে রানও দিয়েছেন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বেশি, ৯৯। আগের সংখ্যাটি ৮৮। তা সত্ত্বেও ৪ উইকেট শিকার করে ভারতের সবচেয়ে সফল বোলার তিনি। টেস্টে ২০০ উইকেটের জন্য তার দরকার আর ২।
জবাব দিতে নেমে টিম ইন্ডিয়া পড়েছে নিদারুণ চাপে। স্কোর বোর্ডে ১৬৪ রান জমা হতেই ৫ উইকেট পড়ে গেছে তাদের। শুরুতেই রোহিত শর্মার উইকেট তুলে নেন প্যাট কামিন্স। ব্যাট ছোঁয়াবেন কি না—দোনামোনা করতে করতে শর্ট মিডঅনে ক্যাচ ক্যাচ তুলে দেন ভারত দলপতি। এ নিয়ে টেস্টে ১৩ ইনিংসে ৭ বার রোহিতের উইকেট নিলেন কামিন্স। অধিনায়ক বনাম অধিনায়ক হিসেবে যা পঞ্চম।
রোহিতকে হারানোর বেদনা ভারত দ্রুতই ভুলে যায় জশস্বী জয়সওয়াল ও লোকেশ রাহুলের জুটিতে। কিন্তু ৪৩ রানের জুটির পর দারুণ এক বলে রাহুলকে বোল্ড করে মাঠছাড়া করেন কামিন্স। জয়সওয়াল বড় সংগ্রহের দিকে এগোতে থাকেন। কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যায় হয় আর কী! ডাউন দ্য উইকেটে এসে লেগ সাইডে বল পাঠিয়ে সিঙ্গেল নিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সঙ্গী বিরাট কোহলি অপরপ্রান্তে যাননি। আরামসে জয়সওয়ালকে রানআউট করেন আলেক্স ক্যারে। ১১৮ বলে ৮২ রান করে তিনিই ভারতের সবচেয়ে সফল ব্যাটার। একটু পরই স্কট বোল্যান্ডে বিদায় নেন কোহলি, এবারও অফস্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে। ৮৬ বলে ৩৬ রান করেন তিনি।
নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা আকাশ দীপকে মাঠ ছাড়তে হয় ১৩ বল পর। এরপর দ্বিতীয় দিনটা পার করেছেন রিশাভ পন্ত ও রবীন্দ্র জাদেজা মিলে। পন্ত ৬ ও জাদেজা ৪ রান নিয়ে আগামীকাল আবার নামবেন।