
ছয় মাস ধরে কোনো বেতন দেয়া হচ্ছিল না। পাসপোর্ট-ভিসা কেড়ে নেয়া হয়। থাকতে দেয়া হয় জরাজীর্ণ কক্ষে। সেখান থেকে বের হতেও দেয়া হতো না। মালয়েশিয়ার একটি কারখানার ভেতর এভাবেই ক্রীতদাসের মতো জীবন কাটাচ্ছিলেন ৫৫ জন বিদেশি কর্মী। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিও ছিলেন। অবশেষে অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করেছে দেশটির পুলিশ।
মালয়েশিয়ার পেরাক রাজ্যের পুসিংয়ের পেংকালান ২ শিল্পাঞ্চলের একটি কাঠ প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছিলেন ৫৫ জন বিদেশি কর্মী। কিন্তু গত বছরের (২০২৪) ডিসেম্বর থেকে তাদের বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়।
এমনকি তারা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য তাদের পাসপোর্টও ছিনিয়ে নেয় কারখানার মালিক। থাকতে দেয়া হয় জরাজীর্ণ কক্ষে। সেখান থেকে তাদের বের হতে দেয়া হতো না। গত বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালের দিকে কারখানাটিতে অভিযান চালায় পেরাকের পুলিশ। এ সময় ওই ৫৫ বিদেশির দুর্ভোগের বিষয়টি সামনে আসে।
পুলিশ বাংলাদেশিসহ ৫৫ জন অভিবাসী শ্রমিককে উদ্ধারের পাশাপাশি কারখানার মালিককেও গ্রেফতার করেছে। মালিক ও কর্মীদের কারও পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। উদ্ধার শ্রমিকদের বয়স ১৯ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে এবং তারা বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও নেপালের নাগরিক। মালিকের বয়স ৫৮ বছর বলে জানানো হয়েছে।
পেরাক শ্রমবিভাগ (জেটিকে), পেরাক পরিবেশ বিভাগ (জেএএস)সহ পেরাক পুলিশের ৮৩ জন সদস্য এদিনের এই অভিযানে অংশ নেয়।পেরাকের পুলিশ প্রধান দাতুক নূর হিসাম নর্ডিন বলেন, কয়েকজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়।
উদ্ধার হওয়া বিদেশি কর্মীরা জানিয়েছেন, তাদের গত ছয় মাস ধরে বেতন দেয়া হচ্ছিল না। ফলে টাকা না থাকায় তারা এলাকার একটি মুদি দোকান থেকে বাকিতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য নিতেন। সেখানে তাদের অনেক টাকা ঋণ হয়ে যায়। তারা আরও জানান, কারখানার মালিক সব শ্রমিকের পাসপোর্ট আটকে রেখেছিলেন যাতে তারা কারখানা থেকে পালিয়ে যেতে না পারে।
উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের ডকুমেন্টেশন প্রক্রিয়ার জন্য পেরাক কন্টিনজেন্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টারে (আইপিকে) নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাদের তানজুং ক্লিং, মেলাকার চতুর্থ সুরক্ষা কেন্দ্রে (আরপি৪) পাঠানো হয়। ঘটনাটি মানবপাচার ও অভিবাসী চোরাচালানবিরোধী আইন (এটিপিএসওএম) ২০০৭-এর অধীনে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানায় পুলিশ।