ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। সপ্তাহের ব্যবধানে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় দ্বিগুণ রোগী। বেশির ভাগ রোগী ঢাকা, সাভার ও গাজীপুরে অবস্থান করার সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। বাড়তি রোগী সামলাতে চালু করা হয়েছে আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড। তবে রোগীদের মধ্যে মশারি ব্যবহারে অনীহা দেখা গেছে।
চিকিৎসকদের ভাষ্য, প্রতিবছর জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী বেশি থাকে। তবে এবার শুরুতে রোগী কম থাকলেও এখন ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকায় ১৭ সেপ্টেম্বর ৬০ শয্যার ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। ১ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন ২৯ জন, ৮ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৯ ও ১৫ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৫ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। গতকাল শনিবার সকাল থেকে আজ রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন আটজন। এ সময়ের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২৩ জন রোগী। বেলা ১১টায় রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ জনে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আজ রোববার পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৫৬ জন। এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন। ২০২৩ সালে এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ হাজার ৭২০ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের প্রশাসন ভবনের তৃতীয় তলায় ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ১৩ ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসাধীন দেখা গেছে। এর মধ্যে আটজন রোগীর বিছানায় মশারি টানানো ছিল না। স্বজনেরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের পাশে বসে গল্প করছিলেন।
মুক্তাগাছা উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের সোনারগাঁও গ্রামের সানাউল্লাহ (৩২) মশারি টানানো ছাড়াই হাসপাতালের বিছানায় বসে ছিলেন। পাশেই তাঁর মা ও এক স্বজন ছিলেন। সানাউল্লাহ বলেন, তিনি আফ্রিকা থেকে দেশে আসেন ৬ আগস্ট। ঢাকায় এক দিন অবস্থানের পর গ্রামের বাড়িতে আসেন। এর পর থেকেই অসুস্থ বোধ করেন। গত শুক্রবার ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তীব্র গরমের কারণে মশারি খুলে রেখেছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বারহা গ্রামের আরাফাত হোসেন। তিনি বলেন, সাভারের আশুলিয়া এলাকায় একটি এনজিওতে চাকরি করেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে অসুস্থ বোধ করলে স্থানীয় ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার পর তাঁর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। পরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আজ রোববার পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৫৬ জন। এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন। ২০২৩ সালে এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ হাজার ৭২০ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের।
প্লাটিলেট কমতে থাকায় শনিবার এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মুক্তাগাছা উপজেলার বাসিন্দা আফজালুর রহমান (৩৮)। তিনি সাভারের আশুলিয়ায় একটি টেক্সটাইল মিলে চাকরি করেন। মশারির ভেতরে শুয়ে থেকে তিনি বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বর কর্মস্থলে গিয়ে শরীরে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করেন। পরীক্ষায় ধরা পড়ে তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। তবে এখন অনেকটা ভালো বোধ করছেন।
২১ বছর বয়সী নারী হাজেরা খাতুন দুই বছরের ছেলেকে নিয়ে ফার্মগেট এলাকায় বসবাস করেন। তাঁর স্বামী প্রাইভেট কারের চালক। ডেঙ্গু আক্রান্ত এই নারীর হাসপাতালের বিছানায় মশারি ছিল না। তাঁর পাশের দুটি বিছানায় সন্তান, মা, শাশুড়িসহ চারজন বসে ছিলেন। স্যালাইন চলছিল হাজেরা খাতুনের। তিনি বলেন, সাত দিন অসুস্থ থাকার পর শনিবার এখানে ভর্তি হয়েছেন। শরীর বেশি খারাপ থাকায় মশারি টানাননি।
ডেঙ্গু ওয়ার্ডের নার্সরা জানিয়েছেন, রোগীরা মশারির ভেতরেই অবস্থান করেন। তবে মাঝেমধ্যে মশারি সরিয়ে রাখেন। অবশ্য তাঁদের মশারির ভেতর অবস্থান করতে বলা হয়।
প্রতিবছর জুন থেকে ডিসেম্বরে ডেঙ্গু রোগী বাড়ে। সেটি মাথায় রেখে আগে থেকে ডেঙ্গু ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ফোকাল পারসন মহিউদ্দিন খান বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে শুরু করেছে। বেশির ভাগ রোগী ঢাকা থেকে আসা। প্রতিবছর জুন থেকে ডিসেম্বরে ডেঙ্গু রোগী বাড়ে। সেটি মাথায় রেখে আগে থেকে ডেঙ্গু ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য জনবল এবং ওষুধপত্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এইচ কে দেবনাথ বলেন, ডেঙ্গু রোগীরা ঢাকা বা অন্যান্য এলাকা থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে মেডিকেলে এসেছেন। সিটি করপোরেশন এলাকায় আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। ডেঙ্গু প্রতিরোধে নগরের তিনটি জোনে লার্ভা শনাক্ত করতে কর্মীরা কাজ করছেন। মাইকিং কার্যক্রম চলমান আছে। সচেতনতামূলক লিফলেট বানানো হচ্ছে, তা নাগরিকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।