সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে খবর, বাংলাদেশ বেতার ফের উর্দু ভাষার অনুষ্ঠান চালু করতে যাচ্ছে। এ নিয়ে ছড়িয়েছে বিভ্রান্তি। এমনকি শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, উর্দু অনুষ্ঠানের অনুমোদনও হয়ে গেছে। উর্দু অনুষ্ঠানের নেপথ্যের ঘটনা কী?
জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশী এবং বিদেশি শ্রোতাদের কাছে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরে অনুষ্ঠান ও সংবাদ প্রচার করে বাংলাদেশ বেতারের বিশেষায়িত ইউনিট ‘বহির্বিশ্ব কার্যক্রম’। এটি ৪৭৫০ কিলোহার্জ ও ৬৩ দশমিক ১৬ মিটার ব্যান্ডে এবং বাংলাদেশ বেতারের মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শোনা যায়।
বাংলাদেশ বেতারে অনেক বছর ধরেই দৈনিক ছয়টি ভাষা, বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, হিন্দি, আরবি ও নেপালীতে মোট ৬ ঘণ্টার অনুষ্ঠান ও সংবাদ প্রচার হতো। মাঝে কিছুদিন উর্দু ভাষার সম্প্রচার বন্ধ হয়ে বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমের স্থিতি ১ ঘণ্টা কমে যায়। এখন সেই ১ ঘণ্টা পুনরায় চালু করতে বাংলাদেশ বেতারে আবেদন করেছেন উর্দু ভাষার অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নেওয়া কয়েকজন শিল্পী, উপস্থাপক ও সংবাদ পাঠক। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকতারা একটি সভা করেন। যথারীতি সভা সংক্রান্ত একটি নোটিশ বাংলাদেশ বেতারের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। তা নিয়েই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা, বিতর্ক ও বিভ্রান্তি ছড়ায়।
বেতারের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাংলাদেশ বেতার আমাদের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের দ্বিতীয় ফ্রন্ট হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশ বেতারের মাধ্যমে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা আমাদের জন্য গৌরবের। এখানে বহির্বিশ্বের যত ভাষায় অনুষ্ঠান চালু হবে, ততই আমাদের দেশ সম্পর্কে জানানোর পরিসর বিশ্বদরবারে বাড়বে। এতে আমরা আরো উজ্জীবিত হতে পারি। তথ্যের অবাধ প্রবাহ এখন তৃতীয় বিশ্বে যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। তারই অংশ হিসেবে উর্দু অনুষ্ঠান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা।
তিনি জানান, বর্তমানে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রেডিওসেন্টারে বিদেশি ভাষাভাষী শ্রোতাদের জন্য বিভিন্ন চ্যানেল চালু আছে, আছে বাংলা বিভাগও। যেমন চীনের সিআরআই, আমেরিকার ভিওএ, জার্মানির ডয়চে ভেলে। সুতরাং আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বিদেশি ভাষার চ্যানেল চালু হলে এটা আমাদের জন্য সুসংবাদ বটে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বেতার ঢাকার বাণিজ্যিক কার্যক্রমের প্রযোজনা সহযোগী মো. সবুজ মাহমুদ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নোটিশটি দেখে সবাই মনে করেছেন বাংলাদেশে বেতার নিয়মিত বাংলা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি প্রতিদিন উর্দু অনুষ্ঠান প্রচার করবে। বিষয়টি আসলে এমন নয়। মিডিয়াম ওয়েবে, অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে অন্য অনুষ্ঠানের মতো এটি দেশের শ্রোতারা বেতারযন্ত্র (রেডিও) ব্যবহার করে শুনতে পাবেন না। উর্দু অনুষ্ঠানটি কেবল বেতার যন্ত্র দিয়ে উর্দু ভাষাভাষী অঞ্চলের মানুষ শুনতে পারবেন। পৃথিবীর যেসব অঞ্চল উর্দু ভাষাভাষি মানুষ বাস করেন, শুধু সেখানের মানুষেরাই এটি শুনতে পারবেন, আগেও এমটিই হতো। এটি শুধু উর্দু ভাষার অনুষ্ঠানে ক্ষেত্রেই নয়, বহিঃবিশ্ব কার্যক্রমের অন্য ভাষার অনুষ্ঠানও ঠিক একই নিয়মে প্রচার হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কারিগরি সমস্যার কারণে এখন বহিঃবিশ্ব কার্যক্রমের কোনো ভাষার অনুষ্ঠানই শর্ট ওয়েবে প্রচার করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অনুষ্ঠানগুলো এখন কেবল ইন্টারনেট ও অ্যাপের মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে। যে অনুষ্ঠানটি নিয়ে এ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, সেটি প্রচারের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এর প্রচার কার্যক্রম শুরু হবে।’