বরাবর স্পিনে ভালো খেলার অনেক সুনাম ভারতীয় ব্যাটারদের। ভারতের মাটিতে গিয়ে স্পিন দিয়ে ভারতীয়দের ঘায়েল করা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। বিশ্বাস করাও কঠিন। আজ রোববার ওয়াংখেড়েতে কিউই বাঁ-হাতি স্পিনার অ্যাজাজ প্যাটেল ১১ উইকেট (৫/১০৩ ও ৬/৫৭) দখল করে ভারতকে ২৫ রানে হারিয়ে দিলেন।
মুম্বাইতে আজ ভারত ৩-০‘তে নিউজিল্যান্ডের কাছে ধবলধোলাই হওয়ার পর অনেকের মনেই জেগেছে প্রশ্ন, আচ্ছা! ভারতীয়রা কি ঘরের মাঠে আগে কখনো স্পিনারদের দাপটের কাছে এভাবে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে?
বর্তমান প্রজন্মকে তা বিশ্বাস করানো খুব কঠিন। কারণ, অনেকের ধারণা- ভারত সাধারণতঃ দেশের মাটিতে হারেই কম। গত ২ যুগে দেশের মাটিতে ভারত সাকল্যে ১৬টেস্ট হেরেছে। এর মধ্যে মনে হতে পারে, বেশির ভাগই প্রতিপক্ষ ব্যাটার ও ফাস্ট বোলারদের দাপটের কাছে; কিন্তু পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেল নাহ, তা নয়। স্পিনের কাছে পরাজয় স্বীকারের রেকর্ডও মোটেও কম নয় ভারতের।
ইতিহাস ঘেঁটে গত ৩ যুগের বেশি (১৯৮৬ থেকে) সময়ে অন্তত ৭টি নজির পাওয়া গেছে, যে কটি টেস্টে ভারতের মাটিতে ভারতীয়দের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন প্রতিপক্ষ স্পিনাররা এবং ভারত ওই স্পিনারদের স্পিন ঘূর্ণির কাছেই হার মেনেছে। কাকতালীয়ভাবে দুটি টেস্টই ব্যাঙ্গালুরুতে। প্রথমটি ১৯৮৬ সালে পাকিস্তানের সাথে। আর অন্যটি ২০০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
এর মধ্যে ১৯৮৬ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় ম্যাচে সুনিল গাভাস্কারের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ব্যাটিং নৈপুণ্যের (টার্নিং পিচে ৯৬) পরও পাকিস্তানীরা পায় ১৬ রানের অবিস্মরণীয় এক জয়। লো স্কোরিং (২ দলের প্রতি ইনিংসের গড় রান ১৭৮) ম্যাচে ২ স্পিনার ইকবাল কাশিম (৫/৪৮ ও ৪/৭৩) ও তৌসিফ আহমেদের (৫/৫৪ ও ৪/৮৫) স্পিন ঘূর্ণিতে। বাঁ-হাতি ইকবাল কাশিম ও অফস্পিনার তৌসিফ দু’জনই সমান ৯টি করে উইকেট পেয়েছিলেন।
টেস্ট ক্রিকেটে দেশের মাটিতে প্রতিপক্ষ স্পিনারদের বোলিংয়ে ভারতীয়দের নাকাল হওয়ার পরের নজিরটি ২০০০ সালে। দক্ষিণ আফ্রিকান বাঁ-হাতি স্পিনার নিকি বোয়ের এক ম্যাচে পাওয়া ৭ (২/১০ ও ৫/৮৩) উইকেট ভারতকে ঠেলে দেয় পরাজয়ের মুখে।
সেবার ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ২-০‘তে হেরেছিল ভারত। মুম্বাই টেস্টে ভারত ৪ উইকেটে হেরেছিল মূলতঃ প্রোটিয়া পেসার অ্যালান ডোনাল্ড (৪টি), শন পোলক (৬টি), হ্যান্সি ক্রনিয়ে (৫টি) ও জ্যাক ক্যালিসের (৩টি) সাঁড়াসি বোলিংয়ে; কিন্তু ব্যাঙ্গালুরুতে হওয়া দ্বিতীয় টেস্টে দ. আফ্রিকার ইনিংস ও ৭১ রানে জয়ের পিছনে অগ্রণী ভূমিকা ছিল বাঁ-হাতি স্পিনার নিকি বোয়ের।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/৮৩ উইকেট দখল করে ভারতকে ইনিংস পরাজয়ের লজ্জায় ডোবান প্রোটিয়া বাঁহাতি স্পিনার নিকি বোয়ে।
এর একযুগ পর, ২০১২ সালের নভেম্বরে মুম্বাইতে আরেক বাঁ-হাতি স্পিনারের কাছে হারতে বাধ্য হয় ভারত। তিনি মন্টি পানেসার। ভারতীয় বংশোদ্ভুত বাঁ-হাতি ওই ইংলিশ স্পিনার মন্টে পানেসারের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং (২১০ রানে ১১ উইকেট (৫/১২৯ ও ৬/৮১) ভারতীয়দের ঠেলে দেয় পরাজয়ের অতল গহ্বরে।
এরপর ২০১৭ সালে এক অস্ট্রেলিয়ান বাঁ-হাতি স্পিনার একাই ভারতকে এক টেস্টে হারিয়ে দিয়ে যান। নাম স্টিভ ও’কিফ। উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়া এ বাঁ-হাতির ম্যাচ ফিগার (৬/৩৫ ও ৬/৩৫) ছিল ৭০ রানে ১২ উইকেট। তার স্পিন ঘূর্ণির মুখে পুনেতে ভারতকে ৩৩৩ রানের বিরাট ব্যবধানে হারায় স্টিভেন স্মিথের অস্ট্রেলিয়া।
২০২৩ সালের মার্চে ইন্দোরে অস্ট্রেলিয়ান অফস্পিনার নাথান লায়নের স্পিন মায়াজালে (৩/৩৫ ও ৮/৬৪) ধরা পড়েন ভারতীয় ব্যাটাররা। একা ৯৯ রানে ১১ উইকেট দখল করে ভারতকে ৯ উইকেটে হারানোর নায়ক বনে যান নাথান লায়ন।
আর এবছর মানে ২০২৪ সালের জানুয়ারীতে ইংলিশ বাঁ-হাতি স্পিনার টম হার্টলির ঘূর্ণিপাকেও (২/১৩১ ও ৭/৬২) ধরা খেয়েছে ভারত। হায়দরাবাদে হওয়া সে টেস্টে ইংলিশরা পায় ২৮ রানের দারুণ এক জয়। যার রূপকার ওই টম হার্টলে। আর আজ ৩ নভেম্বর ভারতীয়দের স্পিন জাদুতে বশ করলেন কিউই বাঁ-হাতি স্পিনার অ্যাজাজ প্যাটেল। লক্ষনীয় বিষয় হলো এই ৭ বারের মধ্যে কিন্তু বাঁহাতি স্পিনারই বেশি।