দিল্লির পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন আতিশি। দলীয় পরিষদের বৈঠকের পর নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। মঙ্গলবার বিকেলে দিল্লির উপরাজ্যপাল ভিকে সাক্সেনার সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগপত্র তুলে দেন কেজরিওয়াল।
বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কিংবা কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির পর থেকে ক্রমাগত আম আদমি পার্টির (আপ) প্রতিবাদী মুখ হিসেবে উঠে এসেছে আতিশির নাম।
তবে দিল্লির পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার নাম ঘোষণার পর থেকেই আতিশিকে নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে কৌতূহল আরও বেড়ে গেছে।
তৃণমূলনেত্রী মমতা ব্যানার্জীর পর আতিশি এই মুহূর্তে দেশের দ্বিতীয় নারী মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন। আবার সুষমা স্বরাজ এবং শীলা দীক্ষিতের পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসা তৃতীয় নারীও তিনি।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিজয় সিং এবং ত্রিপ্তা ওয়াহির কন্যা আতিশির প্রাথমিক পড়াশোনা স্প্রিংডেলস স্কুল থেকে। এরপর সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন। উচ্চশিক্ষার জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পান আতিশি। সেখান থেকেই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
আম আদমি পার্টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন আতিশি। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দলের নীতি-নির্ধারণী কমিটির সঙ্গে কাজ শুরু করেন তিনি।
বছরের পর বছর দলের হয়ে কাজ করে একজন পরিশ্রমী এবং দায়িত্বশীল দলীয় কর্মী হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন আতিশি। ২০১৫ সালে মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়াতে আম আদমি নেতা আলোক আগরওয়াল আয়োজিত জল সত্যাগ্রহে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পূর্ব দিল্লি থেকে দলের প্রার্থী হিসেবে আতিশিকে বেছে নেয় আম আদমি পার্টি। তবে বিজেপি প্রার্থী তথা ভারতীয় দলের বর্তমান কোচ গৌতম গম্ভীরের কাছে ৪ লাখ ৭৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তিনি।
২০২৩ সালের মার্চে দিল্লির মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় আতিশিকে। দিল্লির অর্থ, শিক্ষা এবং রাজস্ব-সহ মোট ১৪টি দফতরের দায়িত্বে রয়েছেন ৪৩ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ। কেজরিওয়াল জেলে থাকাকালীন আম আদমি পার্টির যেসব নেতা দুর্গ সামলেছেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
শিক্ষাক্ষেত্রে আম আদমি সরকারের যে নামডাক তার অনেকটা কৃতিত্ব আতিশিকেই দেন দলীয় নেতাকর্মীরা। দিল্লির রাজনীতিতে উল্কা উত্থানের পাশাপাশি বিতর্কেও জড়িয়েছে আতিশির নাম। রূপকার্থে নয়, সত্যি সত্যি নামের কারণেই বিতর্কে জড়ান তিনি। আতিশি বেশি পরিচিত ছিলেন মারলেনা নামে। তবে চাপের মুখে পড়ে নাম থেকে ‘মারলেনা’ অংশটি বাদ দিতে হয় তাকে।
রাজনৈতিক কারণে এবং ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে এমনটা মনে করে ২০১৮ সালে নাম থেকে মারলেনা শব্দটি বাদ দেন আতিশি। মারলেনা নামটি মার্কস এবং লেনিনের নাম থেকে অনুপ্রাণিত যা তার বাবা-মার বামপন্থী মতাদর্শের প্রতিফলন বলে মনে করা হয়।
দিল্লির রাজনীতিতে আতিশির উত্থানের সময় বিশেষ করে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তার ওই নাম নিয়ে জল্পনা এবং গুজব তৈরি হয়। দাবি ওঠে আপের সঙ্গে থাকলেও তিনি বাম মতাদর্শ মেনে চলেন।
সেই বিতর্কের আবহে নাম থেকে ‘মারলেনা’ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আতিশি। জানান, এখন থেকে তিনি শুধুই আতিশি। ২০১৮ সালের আগস্টে আতিশি বলেছিলেন, মারলেনা আমার পদবি নয়। আমার উপাধি সিং যা আমি কখনও ব্যবহার করিনি। মারলেনা নামটি আমার বাবা-মা দিয়েছিলেন। আমি আমার নির্বাচনী প্রচারের জন্য শুধুমাত্র আতিশি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
দিল্লির এই পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু কোটি টাকার মালিক। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে আতিশি এবং তার স্বামীর মোট সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। কোথাও কোনো দেনা নেই তাদের।
হলফনামা অনুযায়ী আতিশির হাতে নগদ ৫০ হাজার রয়েছে এবং তার স্বামীর হাতে রয়েছে ১৫ হাজার। ব্যাংক এবং অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে জমা রয়েছে ১ কোটি ৮৭ হাজার ৩২৩ টাকা। এলআইসি এবং অন্যান্য বিমা পলিসি রয়েছে ৫ লাখ টাকার। এনএসএস এবং ডাকসঞ্চয় মিলিয়ে আরও ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা রয়েছে।
আতিশির স্বামী প্রবীণ সিং আইআইটি এবং আইআইএম আমদাবাদ থেকে পড়াশোনা করেছেন। তিনি একজন গবেষক এবং শিক্ষাবিদ।