
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাব করেছেন, কৃষি ও আতিথেয়তা (হসপিটালিটি) খাতসহ বিভিন্ন খাতে নিয়োজিত অপ্রত্যয়িত অভিবাসীরা যদি তাদের নিয়োগকারীদের সুপারিশ পায়, তবে তারা স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করে আবার আইনি পথে ফিরে আসতে পারবে।
ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসন ও সীমান্ত নিরাপত্তা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণনির্বাসন অভিযান চালানোর অঙ্গীকার করেছেন। তবে এই নীতি অর্থনীতির ওপর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
আমেরিকান বিজনেস ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের (এবিআইসি) মতে, ট্রাম্পের মূল নীতি বাস্তবায়িত হলে কৃষি উৎপাদনে ৩০ বিলিয়ন থেকে ৬০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিতে প্রায় ৪ থেকে ৫ মিলিয়ন অপ্রত্যয়িত অভিবাসী কাজ করেন। নতুন প্রস্তাব কার্যকর হলে তাদের অনেকেই আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসতে পারেন।
বৃহস্পতিবার এক ক্যাবিনেট বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, আমাদের কৃষকদের যত্ন নিতে হবে, হোটেলগুলোরও… যেখানে শ্রমিকের প্রয়োজন হয়, সেসব জায়গায়।
তিনি আরও বলেন, একজন কৃষক নির্দিষ্ট কিছু শ্রমিককে নিয়ে একটি চিঠি দেবে— বলবে, তারা দারুণ, কঠোর পরিশ্রম করছে। আমরা তাদের জন্য পুরো প্রক্রিয়াটি একটু ধীর করব এবং শেষ পর্যন্ত তাদের আবার ফিরিয়ে আনব। তারা যাবে, আবার আইনি পথে ফিরে আসবে।
তবে তাদের জন্য প্রক্রিয়া ধীর করা বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা পরিষ্কার নয়। একইসঙ্গে, প্রশাসন অপ্রত্যয়িত অভিবাসীদের গ্রেপ্তার, আটক ও বহিষ্কারের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করেছে।
মার্কিন কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ফসল চাষে নিয়োজিত প্রায় ৪০ শতাংশ শ্রমিক অপ্রত্যয়িত। ২০২৩ সালে আতিথেয়তা খাতে (হোটেল ও রেস্তোরাসহ) আনুমানিক ১১ লাখ অপ্রত্যয়িত ব্যক্তি কাজ করেছেন, যা এই খাতের প্রায় ৭.৬ শতাংশ।
আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিল বলেছে, গণনির্বাসন নীতির প্রাথমিক ব্যয় হতে পারে ৩১৫ বিলিয়ন ডলার, এবং প্রতিবছর ১০ লাখ অভিবাসী বহিষ্কারের ব্যয় হতে পারে ৮৮ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত।
অনেক ব্যবসায়ী নেতারা ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে শ্রমবাজারে প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। মার্চ মাসে, এবিআইসির নেতৃত্বে ‘কর্মীবাহিনীকে নিরাপদ করুন’ কর্মসূচির আওতায় ৩৭টি অঙ্গরাজ্যের ২৫০ জনের বেশি ব্যবসায়িক নেতা কংগ্রেসের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা এমন একটি আইন সমর্থন করছেন, যা অভিবাসী শ্রমিকদের কাজের অনুমতিপত্র প্রদান করবে।
হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা এনবিসিকে জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন এইচ-২এ এবং এইচ-২বি প্রোগ্রাম শক্তিশালী করতে চায়। এইচ-২বি ভিসা একটি অস্থায়ী, নন-ইমিগ্রান্ট কর্মসূচি, যার মাধ্যমে হোটেল, নির্মাণ, বিনোদন এবং পর্যটন খাতে মৌসুমি বা স্বল্পমেয়াদী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া যায়।
আমেরিকান বিজনেস ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের নির্বাহী পরিচালক রেবেকা শি বলেন, গত মাসে ট্রাম্প সফলভাবে সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করার পর এবিআইসির নেতৃত্বে ‘কর্মীবাহিনীকে নিরাপদ করুন’ কর্মসূচির আওতায় ২৫০ জনের বেশি ব্যবসায়িক নেতা রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটদের সঙ্গে ১২০টিরও বেশি বৈঠক করেন। এই আলোচনা শেষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিবাসী শ্রমিকদের অবদান স্বীকৃতি দেওয়া প্রশংসনীয়। কৃষি ও আতিথেয়তা খাতে এরা আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড।
ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেন, আমরা শুরু থেকেই তাদের সঙ্গে কাজ করব যাতে তারা আইনি পথে ফিরে আসতে পারে। এতে তাদের জন্য একটি বাস্তব প্রণোদনা তৈরি হবে। নাহলে তারা আর কখনও ফিরতে পারবে না। নির্দিষ্ট সময় সম্ভবত ৬০ দিন পেরিয়ে গেলে আর ফিরিয়ে আনা যাবে না।