শিক্ষায় অসামান্য অবদানে এশিয়া এডুকেশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মালয়েশিয়া প্রবাসী ড. মোহাম্মদ নাজমুল হাসান মাজিজ। থাইল্যান্ডের ব্যাংককে মর্যাদাপূর্ণ এশিয়া এডুকেশন অ্যাওয়ার্ড (এশিয়া শিক্ষা পুরস্কার) ২০২৪-এ সম্মানিত হয়েছেন তিনি।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের পেরদানা ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ মেডিসিনের ড. নাজমুল, শিক্ষা ও শিক্ষা ব্যবস্থার অগ্রগতিতে তার সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এশিয়া এডুকেশন কনক্লেভ থেকে ‘আউটস্ট্যান্ডিং কন্ট্রিবিউশন ইন এডুকেশন’ (শিক্ষায় অসামান্য অবদান) পুরস্কার পেয়েছেন।
৯ নভেম্বর থাইল্যান্ডের ব্যাংককের আমারি হোটেলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ড. নাজমুলকে পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১১টি দেশের শিক্ষক/প্রভাষক এবং শিক্ষাবিদদের অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
ড. নাজমুল থাইল্যান্ডের ব্যাংককে (এইসি) এর কাছ থেকে পুরস্কার পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এশিয়া এবং তার বাইরে শিক্ষার অগ্রগতিতে শিক্ষক/প্রভাষক এবং শিক্ষাবিদদের কৃতিত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য এইসি একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করে। এশিয়ান কলেজ অফ টিচার্স, ইস্ট ব্রিজ ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল এবং এশিয়া এডুকেশন ডাইজেস্ট দ্বারা (এইসি) অনুমোদিত।
ড. নাজমুল মালয়েশিয়ায় ২০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি পেরদানা ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ মেডিসিনে মেডিকেল মাইক্রোবায়োলজির একজন সহযোগী অধ্যাপক এবং এমডি, এমবিবিএস, বিডিএস, বিবিএমএস, নার্সিং, এমএসসি পাবলিক হেলথ, পিএইচডি এবং অন্যান্য অনেক প্রোগ্রামের শিক্ষকতা করছেন।
এছাড়া মালয়েশিয়ার অনেক সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল ফ্যাকাল্টিতে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি শিক্ষাদান, গবেষণা, নতুন স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম উন্নয়ন, পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা, পাঠ্যক্রম মূল্যায়ন ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত। তিনি পেরদানা ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ মেডিসিনের এডুকেশন পলিসি ও কারিকুলাম কমিটির প্রধান, এমডি প্রোগ্রামের এবং ফেকাল্টি রিসার্চের প্রধান।
শিক্ষা ও শিক্ষা ব্যবস্থায় তার সমস্ত অভিজ্ঞতা তাকে এশিয়া এডুকেশন অ্যাওয়ার্ড পেতে সাহায্য করেছে বলে জানান তিনি।
ড. নাজমুল একজন শিক্ষাবিদ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানী। বর্তমানে তিনি পরিবারসহ মালয়েশিয়ায় বসবাস করছেন। তিনি কুয়ালালামপুরের পেরদানা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ মেডিসিনের ডেপুটি ডিন এবং সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে মেডিকেল মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করছেন।
তিনি মাস্টার্স অফ মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামের প্রধান এবং এডুকেশন নীতি ও পাঠ্যক্রম কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মেডিকেল সায়েন্টিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য। পেরদানা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের আগে তিনি মালয়েশিয়ার সরকারি ও বেসরকারি উভয় বিশ্ববিদ্যালয়েই কাজ করেছেন।
তিনি ডক্টর অফ মেডিসিন (এমডি), এমবিবিএস, ব্যাচেলর অফ ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস), ব্যাচেলর অব বায়োমেডিকাল সায়েন্সেস (বিবিএমএস), ব্যাচেলর অব অপ্টোমেট্রি, এমএসসি ইন পাবলিক হেলথ, এমএসসি মেডিকেল সায়েন্সেস এবং পিএইচডির মতো বিভিন্ন প্রোগ্রামের শিক্ষকতায় জড়িত ছিলেন।
মালয়েশিয়ায় ২ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি চিকিৎসক (মেডিকেল ও ডেন্টাল) তৈরিতে তার অবদান রয়েছে। মালয়েশিয়ার এমবিবিএস, বিডিএস, বিবিএমএসসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামের কারিকুলাম উন্নয়নে ও প্রোগ্রাম অনুমোদনে তার অবদান রয়েছে।
১৯৭৬ সালে তিনি বাংলাদেশের কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মৃত মো. মাজিজুল ইসলাম এবং মা শাহানারা বেগম পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে কুমিল্লার কালিয়াজুরীতে বসবাস করছেন।
তিনি ১৯৯১ সালে কুমিল্লা হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৯৩ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর বেঙ্গালুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোবায়োলজিতে অনার্স, ভারতের মণিপালের কস্তুরবা মেডিকেল কলেজ থেকে মেডিকেল মাইক্রোবায়োলজিতে এমএসসি পাস করেন।
পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য মালয়েশিয়া যান এবং ২৮ বছর বয়সে ইউনিভার্সিটি অফ মালয়েশিয়া থেকে মলিকুলার মেডিকেল মাইক্রোবায়োলজিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। পিএইচডি শেষে তিনি ২০০৫ সালে ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মারা-তে (ইউআইটিএম) মেডিকেল মাইক্রোবায়োলজির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।
তিনি তার মেধার কারণে খুব দ্রুত সিনিয়র প্রভাষক এবং পরে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন এবং তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকনিষ্ঠ সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন।
তিনি ২০১৫ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সেগী ইউনিভার্সিটিতে যোগদান করেন। ২০১৮ সালে তিনি পেরদানা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।
ড. নাজমুল দুই শতাধিক একাডেমিক ও নন-একাডেমিক সার্টিফিকেট পেয়েছেন। তিনি দুটি মাইক্রোবায়োলজি বইয়ের লেখক। যারা মলিকুলার বায়োলজি, মেডিকেল মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মাকোলজি বা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে চান তাদের জন্য তার বইগুলো প্রয়োজন হয়।
ড. নাজমুল একজন অত্যন্ত সুপরিচিত চিকিৎসা বিজ্ঞানী। তার গবেষণা সাধারণত ইনফেকশাস ডিজিজ অ্যান্ড পাবলিক হেলথের ওপর। মলিকুলার টেকনিক, মলিকুলার কারাক্টারাইজেশন, প্লাজমিড এবং ক্রোমোজোমাল ডিএনএ এক্সট্রাকশন, ইলেক্ট্রোফোরসিস, জেল পিউরিফিকেশন, পিসিআর, হাইব্রিডাইজেশনসহ ইত্যাদি বিষয়ে তিনি পারদর্শী।
তিনি মালয়েশিয়ার সরকার থেকে এক কোটিরও বেশি টাকা (অর্ধ মিলিয়ন মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত) গবেষণার জন্য অনুদান পেয়েছেন। তিনি অনেক অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের গবেষণা প্রকল্পের সুপারভাইজ করেছেন।
ড. নাজমুলের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে ৮০টিরও বেশি গবেষণা আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে। তিনি আমন্ত্রিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত প্রভৃতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অনেক গবেষণা নিবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। তিনি বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেছেন।
ভাইরোলজি ও ইমিউনোলজিতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার কারণে তিনি কোভিডের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আর্টিকেল লিখেছেন এবং সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। মালয়েশিয়ার জাতীয় টিভি চ্যানেল তাকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম প্রচার করে।
শৈশব থেকে ড. নাজমুল বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। তিনি উচ্চ ফিদে (ওয়ার্ল্ড দাবা ফেডারেশন) রেটিংসহ খুব ভালো দাবা খেলোয়াড়। তিনি বিভিন্ন জেলা, রাজ্য ও জাতীয় স্তরের দাবা প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ, ভারত ও মালয়েশিয়ার অনেক চ্যাম্পিয়নশিপ পুরস্কার জিতেছেন।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ছাত্র থাকাকালীন কয়েক বছর ধরে ‘ওয়ার্ল্ড ইন্টার-ভার্সিটি দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর জন্য ইউনিভার্সিটি অফ মালায়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি বাংলাদেশ, ভারত ও মালয়েশিয়ার ক্যারাম প্রতিযোগিতায় অনেক পুরস্কার জিতেছিলেন।
ড. নাজমুল হাসান মাজিজ, যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশপিডিয়া ২০১৯ ও ২০২০ সালে মালয়েশিয়ার অন্যতম সফল ব্যক্তি হিসেবে তাকে ভূষিত করে। তার জীবনী ‘সাকসেসফুল পিপল্ ইন মালয়েশিয়া’ শীর্ষক বইটিতে প্রকাশিত হয়েছে যেখানে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির মোহাম্মদসহ মালয়েশিয়ার অন্যান্য সফল ব্যক্তিদের নামও স্থান পেয়েছে।
ড. নাজমুল বাংলাদেশের চিকিৎসা ও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, আমাদের মোটেই সাফল্যের পেছনে দৌড়ানো উচিত নয়। আমাদের কেবল মনোযোগ ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা দরকার। আমরা যদি এগুলো অনুসরণ করি তবেই জীবনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাফল্য আসবে।