অবৈধ অভিবাসীদের ওপর নজরদারি জোরদার করল ট্রাম্প প্রশাসন পায়ের গোড়ালিতে মনিটর

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ (আইসিই) অফিসে চেক-ইনের জন্য আসা অভিবাসীদের এখন বেশিরভাগই পায়ে নজরদারির ডিভাইস বা অন্যান্য ট্র্যাকিং যন্ত্র পরে বের হচ্ছেন। কারণ ট্রাম্প প্রশাসন প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন অভিবাসীর ওপর নজরদারি জোরদার করতে চাইছে বলে আইসিইর সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র বলেছে, এই অভিবাসীরা যারা অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছেন এবং আগে বছরে একবার আইসিই অফিসে নিয়মিত চেক-ইনে আসতেন তারা এখন ক্রমেই নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হতে অনীহা দেখাচ্ছেন।  কারণ তারা ট্রাম্প প্রশাসনের গণ-নির্বাসনের পরিকল্পনায় আতঙ্কিত।

এক কর্মকর্তা বলেছেন, এখন নতুন শেরিফ এসেছে এবং গত চার বছরে যা হচ্ছিল তা আর হচ্ছে না— সংস্থা এখন জবাবদিহিতা চাচ্ছে।

যেসব অভিবাসীদের স্থানীয় আইসিই অফিসে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে, তাদের এখনো বহিষ্কারের আদেশ হয়নি, তবে নানা কারণে তাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা এখনো অভিবাসন আদালতের শুনানির অপেক্ষায় রয়েছেন। এই চেক-ইনের মূল উদ্দেশ্য হলো তারা যেন আদালতে উপস্থিত থাকেন এবং অপরাধে জড়িয়ে না পড়েন তা নিশ্চিত করা।

নতুন নজরদারি ব্যবস্থায়, যেসব অভিবাসী নজরদারির ডিভাইস খুলে ফেলবেন, তাদের দ্রুত গ্রেফতার করতে আইসিই কর্মকর্তাদের পাঠানো হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হতে পারে— যা বাইডেন প্রশাসনের সময়ে খুব একটা দেখা যেত না।

এক সূত্র বলেছেন, বাইডেন আমলে অনেকেই পালিয়ে যেতেন এবং তখন তাদের খোঁজ করত না কেউ। এখন সেটা বদলাবে। ‘হাজার হাজার’ নজরদারি ডিভাইস এখন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে পাঠানো হচ্ছে— ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে ‘ইনটেনসিভ সুপারভিশন অ্যাপিয়ারেন্স প্রোগ্রাম’ নামে পরিচিত এই পরিকল্পনা, যা বাইডেন প্রশাসন ধীরে ধীরে কম ব্যবহার করছিল।

গত মাসের হিসাব অনুযায়ী, আইসিই ১ লাখ ৮৩ হাজার অভিবাসীকে ট্র্যাক করছে। তাদের মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার জন পায়ে নজরদারির ডিভাইস পরে আছেন, বাকিদের হাতে বা ফোন অ্যাপে ট্র্যাক করা হচ্ছে। 

একজন অভিবাসীকে ডিভাইস পরিয়ে রাখার খরচ প্রতিদিন গড়ে ২.৭৫ ডলার, যেখানে একজনকে আটক রাখার খরচ প্রতিদিন প্রায় ১৫২ ডলার।

আইসিই চাইছে যত বেশি সম্ভব অভিবাসীকে এই ডিভাইস পরিয়ে দিতে, তারপরে ধীরে ধীরে ফোন অ্যাপ বা হাতঘড়ির মতো কম কঠোর ট্র্যাকিং প্রযুক্তিতে স্থানান্তর করা হবে।

নতুন এ ব্যবস্থায় অভিবাসীদের আরও ঘন ঘন রিপোর্ট করতে হবে— সাধারণত প্রতি চার, আট বা ১২ সপ্তাহে একবার। একজন কর্মকর্তা বলেন, অভিবাসীরা এখন পালিয়ে যাচ্ছেন এবং আইসিইতে রিপোর্ট করতে চাইছেন না, তাই তাদের খুঁজে পাওয়ার জন্য এই ব্যবস্থা জরুরি।

এছাড়াও, এই ব্যবস্থায় আইসিই কর্মকর্তাদের গণ-নির্বাসনের অভিযানে নিয়োজিত করা সহজ হবে। কারণ চেক-ইনের দায়িত্ব নিচ্ছে বিআই ইনক. নামের এক সরকার অনুমোদিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান অভিবাসীদের প্রয়োজনে স্বদেশে ফেরার জন্য ভ্রমণের কাগজপত্র সংগ্রহেও সহায়তা করবে।

  • Related Posts

    আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা জবি শিক্ষার্থীদের

    দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৪ মে) দিবাগত গভীর রাতে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান নেওয়া জবি শিক্ষার্থীরা এমনটি…

    Continue reading
    প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় উপদেষ্টা মাহফুজের মাথায় বোতল নিক্ষেপ

    জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) চলমান আন্দোলন ইস্যুতে প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মাথায় বোতল ছুঁড়ে মারা হয়েছে। বুধবার (১৪ মে) রাত ১০টার দিকে উপদেষ্টা কাকরাইল মসজিদের পাশে…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা জবি শিক্ষার্থীদের

    আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা জবি শিক্ষার্থীদের

    প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় উপদেষ্টা মাহফুজের মাথায় বোতল নিক্ষেপ

    প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় উপদেষ্টা মাহফুজের মাথায় বোতল নিক্ষেপ

    ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় থাকছেন না পুতিন

    ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় থাকছেন না পুতিন

    রাজশাহীতে টেন্ডার নিয়ে বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষ

    রাজশাহীতে টেন্ডার নিয়ে বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষ