শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গণনায় প্রাথমিকভাবে এগিয়ে আছেন মার্ক্সবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে। গতকাল শনিবার এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়।
গতকাল সন্ধ্যায় শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশন জানায়, দেশব্যাপী ভোট গণনা শুরু হয়েছে। এদিন রাতের মধ্যেই ভোটের ফলাফল চলে আসতে পারে বলে জানিয়েছিলেন কমিশনের কর্মকর্তারা। আজ রোববার চূড়ান্ত ফলাফল জানা যেতে পারে।
শ্রীলঙ্কার এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৩৯ জন। তবে ভোট গ্রহণ শেষে তিনজনের নাম আলোচনায় শোনা যাচ্ছে। তাঁদের একজন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। একজন বিরোধী দল সঙ্গী জন বালাওয়াগার (এসজেবি) নেতা ও গুপ্তহত্যার শিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসার ছেলে সাজিথ প্রেমাদাসা। অন্যজন ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) জোটের অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে।
যদিও বর্তমানে পার্লামেন্টে জেভিপির মাত্র তিনটি আসন রয়েছে, তবুও ৫৫ বছর বয়সী দিশানায়েকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ এবং আরও দরিদ্রবান্ধব নীতি গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজের পক্ষে জনসমর্থন অনেকটাই বাড়িয়েছেন।
নির্বাচনে এই তিন প্রার্থীর মধ্যে যে–ই জয়ী হোন, তাঁকে ঋণে জর্জরিত শ্রীলঙ্কার ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানোর চ্যালেঞ্জ নিতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য–উপাত্ত অনুযায়ী, এ পর্যন্ত গণনা করা মিলিয়ন (১০ লাখ) ভোটের প্রায় ৫৩ শতাংশ পেয়েছেন কুমারা দিশানায়েকে। বিরোধীদলীয় প্রার্থী সাজিথ প্রেমাদাসা পেয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ ভোট। বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে আছেন তৃতীয় স্থানে।
কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশটির বৈধ ১৭ মিলিয়ন (১ কোটি ৭০ লাখ) ভোটারের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ গতকালের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। এর আগে ২০১৯ সালের নির্বাচনে রেকর্ড ৮৩ দশমিক ৭২ শতাংশ ভোট পড়েছিল।
কুমারা দিশানায়েকের জোট এনপিপির মধ্যে রয়েছে তাঁর দল মার্ক্সপন্থী জনতা বিমুক্তি পেরেমুনা (জেভিপি)। দলটি অনেক আগে থেকেই অধিকতর জোরালো রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ, কর হ্রাস ও সংরক্ষণবাদী বাজার অর্থনৈতিক নীতিকে সমর্থন করে আসছে।
দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর এক প্রচার শেষে নির্বাচনের ফলাফল এখন পরিষ্কার। যদিও আমি প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের পক্ষে ব্যাপকভাবে প্রচার চালিয়েছি, তবে শ্রীলঙ্কার জনগণ তাঁদের মতামত জানিয়ে দিয়েছেন। অনুড়া কুমারা দিশানায়েকের পক্ষে তাঁদের সমর্থনকে আমি পুরোপুরি শ্রদ্ধা জানাই।
আলী সাবরি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
যদিও বর্তমানে পার্লামেন্টে জেভিপির মাত্র তিনটি আসন রয়েছে, তবুও ৫৫ বছর বয়সী দিশানায়েকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ এবং আরও দরিদ্রবান্ধব নীতি গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজের পক্ষে জনসমর্থন অনেকটাই বাড়িয়েছেন।
নিজেকে একজন সংস্কারপন্থী প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন দিশানায়েকে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি ক্ষমতায় আসার ৪৫ দিনের মধ্যে পার্লামেন্ট ভেঙে দেবেন। এর মধ্য দিয়ে সাধারণ নির্বাচনে নিজ নীতির পক্ষে নতুন ম্যান্ডেট পেতে চান তিনি।
ইতিমধ্যে বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী সাবরি এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বার্তায় বলেছেন, ‘দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর এক প্রচার শেষে নির্বাচনের ফলাফল এখন পরিষ্কার।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদিও আমি প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের পক্ষে ব্যাপকভাবে প্রচার চালিয়েছি, তবে শ্রীলঙ্কার জনগণ তাঁদের মতামত জানিয়ে দিয়েছেন। অনুড়া কুমারা দিশানায়েকের পক্ষে তাঁদের সমর্থনকে আমি পুরোপুরি শ্রদ্ধা জানাই।’
নির্বাচন কমিশনের তথ্য, এ পর্যন্ত গণনা করা মিলিয়ন ভোটের প্রায় ৫৩ শতাংশ পেয়েছেন কুমারা দিশানায়েকে। বিরোধীদলীয় প্রার্থী সাজিথ প্রেমাদাসা পেয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ ভোট। প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে আছেন তৃতীয় স্থানে।
বৈদেশিক ঋণের বোঝা ও চরম আর্থিক দুর্দশার প্রতিবাদে ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক গণ–অসন্তোষ দেখা দেয়। এ নিয়ে আন্দোলনের একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ হাজারো জনতা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়লে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালান তিনি। এরপর পার্লামেন্টের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রনিল বিক্রমাসিংহে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক কুশল পেরেরা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘এবারের লড়াই হবে ত্রিমুখী। তবে প্রধান তিন প্রার্থীর মধ্যে কে নির্বাচিত হবেন, তা বলা মুশকিল। এটা স্পষ্ট যে এবারের নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যে ৫০ শতাংশ ভোট প্রয়োজন, তা কেউ পাবেন না।’
শ্রীলঙ্কার আইন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো প্রার্থী যদি অর্ধেকের বেশি ভোট না পান, তবে অগ্রাধিকার ভোটের ওপর নির্ভর করে বিজয়ী প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে। তবে দেশটির ইতিহাসে এর আগে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে ভোট গণনার মধ্যেই শ্রীলঙ্কায় গতকাল দিবাগত রাতে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় পুলিশ আট ঘণ্টার জন্য কারফিউ ঘোষণা করে। ‘জনসাধারণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা’ করে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। এর আগে নির্বাচন কমিশন এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ বলে মন্তব্য করে। কমিশনের এ ঘোষণার অল্প সময় পর পুলিশ কারফিউ ঘোষণা করে।