গত ৭২ ঘণ্টায় শতাধিক ফিলিস্তিনি নাগরিককে হত্যা করেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। গাজাজুড়ে গত তিন দিনে আরও ২০৯ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। অবরুদ্ধ এই উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর আল জাজিরার।
গাজা সিটির একটি স্কুলে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ১৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ওই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন বাস্তুহারা লোকজন। কিন্তু সেখানেও হামলা চালিয়েছে দখলদাররা।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরেই গাজায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরায়েল। সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত সংঘাত চলছেই। প্রতিদিনই হামলা চালিয়ে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হচ্ছে। ইসরায়েলের আগ্রাসন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না নারী বা শিশুরাও।
প্রায় ১১ মাস ধরে চলা এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪১ হাজার ৩৯১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৯৫ হাজার ৭৬০ জন।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকেই দায়ী করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, লেবাননে সাম্প্রতিক সহিংসতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ইসরায়েল ওই অঞ্চলকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইয়েডিওথ আহরোনোথের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে আলাপ করেছেন এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তবে ম্যাক্রোঁর এমন সতর্কতার জবাবে নেতানিয়াহু জানিয়েছেন যে, ইসরায়েলের পরিবর্তে হিজবুল্লাহর ওপর চাপ দেওয়া উচিত।
অপরদিকে গত শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) লেবাননে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এখনও হামলা অব্যাহত রয়েছে। এতে নিহতের সংখ্যা ৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনায় কমপক্ষে তিন শিশু নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও প্রায় ৬৮ জন। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখনও ১৫ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা বেশ গুরুতর।
শুক্রবারের হামলায় হিজবুল্লাহর এক শীর্ষ কমান্ডার নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লেবানন সীমান্ত নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত সামরিক অভিযান চলবে।
এর আগে লেবাননে তারবিহীন যোগাযোগ যন্ত্র পেজার ও রেডিও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। এছাড়া এর আগে মঙ্গলবার হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের ব্যবহার করা পেজার বিস্ফোরণে অন্তত ১২ জনের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া এই বিস্ফোরণে আহত হয়েছে ২৩০০ এরও বেশি মানুষ। এদিকে ইসরায়েলে হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৮ জন আহত হয়েছে।
বুধবার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের যন্ত্র ওয়াকি-টকিতে বিস্ফোরণ ঘটে। দেশজুড়ে পাঁচ হাজারের বেশি ডিভাইসে বিস্ফোরণের এই ঘটনায় অন্তত ২৫ জন নিহত এবং আরও ৬০৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
ইসরায়েলের এসব হামলার পর লেবাননজুড়ে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। দেশটির অনেক নাগরিক এখন বিস্ফোরণের আশঙ্কায় তাদের মোবাইল ফোন থেকেও দূরে থাকছেন।