বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে খুলনায় দুই দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে নগরে জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ।
এ ছাড়া অতিবৃষ্টিতে বিভিন্ন উপজেলার বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও আমন ধানের খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। জোয়ারে নদীতে বেড়েছে পানির উচ্চতা। এতে আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলের মানুষ।
খুলনা আবহাওয়া কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, বৃষ্টি শুরু হয় মূলত গত শুক্রবার বিকেল থেকে। ওই দিন ভারী ও মাঝারি আকারে বৃষ্টি হয়েছে। তবে মাঝারি আকারের একটানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে গতকাল শনিবার দুপুর থেকে। থেমে থেমে সেই বৃষ্টি এখনো চলছে। গতকাল সকাল ৬টা থেকে আজ রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৬৪ মিলিমিটার। আর আজ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৩৯ মিলিমিটার। এর আগে শুক্রবার বিকেল থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৮০ মিলিমিটার। গত দুই দিনে বাতাসের গতিবেগ ছিল ১৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
খুলনা আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, সাগরে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই নিম্নচাপ এখন স্থলভাগে অবস্থান করছে। শুক্রবার রাতে খুলনা অতিক্রম করে যশোরের মধ্য দিয়ে এখন ভারতের কলকাতার কাছাকাছি বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করছে। এ কারণে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে এখন আর ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। হালকা থেকে মাঝারি আকারের বৃষ্টি হতে পারে। আগামীকাল সোমবার আবহাওয়া ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আজ বেলা ১১টার দিকে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কে যানবাহন খুবই কম। বৃষ্টির মধ্যে অল্প কিছু ইজিবাইক চলাচল করছে। রিকশা নেই বললেই চলে। সড়কের পাশে অস্থায়ী টংদোকানগুলোর বেশির ভাগই বন্ধ। যেসব দোকান খোলা আছে, তাতে লোকজনও কম। বৃষ্টিতে সড়ক সংস্কার ও ভবন নির্মাণের কাজও বন্ধ হয়ে আছে। রয়েল মোড়, কেডিএ অ্যাভিনিউ, নিউমার্কেটের সামনে সড়ক, বয়রাসহ কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে চলাচল করতে মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
নিরালা মোড়ে এক চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে গরম–গরম চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন আলামিন হোসেন। নির্মাণশ্রমিকের কাজ করেন তিনি। আলামিন বলেন, নগরের বাগমারা এলাকায় ভবন নির্মাণের কাজ করছেন তাঁরা। সকাল আটটায় ওই কাজে যাওয়ার কথা ছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজে চলে যান। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আজ আর কাজ করা সম্ভব হয়নি। এক দিন কাজ করলে মজুরি হিসেবে ৭৫০ টাকা পেতেন বলে জানান তিনি।
এদিকে বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতিবৃষ্টির কারণে খাল-বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সদ্য রোপণ করা আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়লে ধানের খেত টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন কৃষকেরা।
পাইকগাছা উপজেলার গড়াইখালী ইউনিয়নের কুমখারী গ্রামটি শিবসা নদীর পাড়ে অবস্থিত। ওই গ্রামের শান্ত কুমার মণ্ডল বলেন, শিবসা নদীতে জোয়ারে পানির উচ্চতা অনেক বেড়েছে। দুই দিন ধরেই কখনো ভারী, কখনো মাঝারি, আবার কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছেই। সেই সঙ্গে বেড়েছে বাতাসের বেগ। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে শিবসা নদীর খুদখালী এলাকার ঝুকিপূর্ণ নদীর বাঁধ যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। এ কারণে আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। জোয়ারের পানি কমে গেলে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।
শান্ত কুমার মণ্ডল আরও বলেন, লবণাক্ততার কারণে ওই এলাকায় শুধু আমন ধানই হয়। কৃষকেরা নিজেদের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে যত্নসহকারে আমন ধানই লাগান। অতিবৃষ্টিতে এলাকার নিচু জমির সব ধানগাছ পানিতে তলিয়ে গেছে।
টানা বৃষ্টিতে ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর আমন ধানের খেত পানিতে ডুবে গেছে। ২ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমির শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলায়।
কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন, খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক
ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া গ্রামের কৃষক তাপস সরকার বলেন, পানিতে খাল-বিল সব ডুবে গেছে। আমন ধানের খেতও ডুবে গেছে। যদি দু–তিন দিন এভাবে পানির নিচে ধানগাছ তলিয়ে থাকে, তাহলে তা বাঁচানো যাবে না।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, টানা বৃষ্টিতে ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর আমন ধানের খেত পানিতে ডুবে গেছে। ২ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমির শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলায়। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।