
যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি একের পর এক বিদেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, যাদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক অভিযোগ নেই। এসব শিক্ষার্থী মূলত ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার জন্যই টার্গেট হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দেশটির বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন বারবার বলেছে, ভিসা একটি ‘বিশেষাধিকার’ এবং যেকোনো সময় তা বাতিল করা যেতে পারে। ইনসাইড হায়ার এড নামে একটি অনলাইন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এরই মধ্যে এক হাজারেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও সাম্প্রতিক গ্র্যাজুয়েটদের ভিসা বাতিল হয়েছে বা তাদের আইনগত অবস্থানে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ বিষয়ে সঠিকভাবে কিছু জানতে পারছে না এবং অনেক সময় শুধু সরকারি একটি ডেটাবেজ থেকে ভিসার অবস্থা দেখে তারা বিষয়টি জানতে পারছে। এই পরিস্থিতিতে জর্জটাউন, কলাম্বিয়া, হার্ভার্ড, টাফটসসহ দেশটির শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ইসরায়েল ও গাজা যুদ্ধ নিয়ে লেখা জর্জটাউনের একজন শিক্ষার্থী বলেছেন, পরবর্তী টার্গেট আমিও হতে পারি। তিনি এখন নিজের পকেটে মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী তার অধিকার সংবলিত একটি কার্ড সঙ্গে রাখছেন।
ফিলিস্তিনপন্থিদের ধরপাকড়
সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বাদর খান সুরি। জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষককে গত মার্চে ভার্জিনিয়ায় তার বাড়ির সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ ছড়াচ্ছেন এবং একজন ‘সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীর’ সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে।
গ্রেফতার করা হয়েছে মাহমুদ খলিল নামে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সংগঠককে। তাকে নিউইয়র্ক থেকে গ্রেফতার করে লুইজিয়ানার একটি আটক কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
গ্রেফতারির তালিকায় আরও আছেন রুমেইসা ওজতুর্ক। টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রী গাজা নিয়ে একটি মতামত লেখায় অংশ নিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, আমি যখনই এমন কাউকে খুঁজে পাই, আমি তাদের ভিসা বাতিল করি। এটি আমরা প্রতিদিনই করছি।
হোয়াইট হাউজ বলছে, তারা এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে যারা যুক্তরাষ্ট্রের ‘জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি’ কর্মকাণ্ডে জড়িত। তবে নাগরিক অধিকার রক্ষাকারী সংস্থাগুলো এই গ্রেফতার ও ভিসা বাতিলকে সংবিধান-স্বীকৃত মতপ্রকাশের অধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে।
আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও এই ঘটনার প্রভাব পড়েছে। হোয়াইট হাউসের একটি টাস্কফোর্স তাদের ভিন্নমত দমন নীতির অংশ হিসেবে হাভার্ডের জন্য বরাদ্দ ২০০ কোটি ডলারের বেশি তহবিল স্থগিত করেছে। একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীদের তথ্য না দিলে হাভার্ডে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে।
জর্জটাউনের শিক্ষক নাদার হাশেমি বলেন, সরকারের মূল লক্ষ্য হলো ভয়ের মাধ্যমে ভিন্নমত রোধ করা।
একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা এখন বাসা থেকে বের হওয়ারও সাহস পাচ্ছেন না। কেউ কেউ তাদের পরিবারকে বলছেন যুক্তরাষ্ট্রে না আসতে। অনেকেই মেসেজিং অ্যাপে চ্যাট মুছে দিচ্ছেন, ফোনে এসওএস মোড ব্যবহার শিখে নিচ্ছেন।
টাফটসের শিক্ষার্থী অ্যানতেরি মেজর বলেন, এই পরিস্থিতির কারণে অনেক শিক্ষার্থী যেসব সম্মেলনে অংশ নিতে দেশের বাইরে গেছেন, তারা আর ফিরতে সাহস পাচ্ছেন না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নীতিগুলো যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আরও সংকুচিত হয়ে পড়বে।