পাঁচ দফা দাবিতে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে বিক্ষোভ করছেন চিকিৎসক ও জুনিয়র চিকিৎসকেরা। টানা ৩৪ দিন ধরে চলছে তাদের এই আন্দোলন। গত ১২ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সচিবালয় নবান্নে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায় সেই পরিকল্পনা।
তারপর থেকে চিকিৎসকদের আন্দোলন আরও জোরালো হতে থাকে। এ অবস্থায় শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনে আন্দোলনকারীদের ধরনা মঞ্চে হঠাৎ হাজির হন মমতা।
সেখানে চিকিৎসকদের সামনে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা দেন, পশ্চিমবঙ্গের সব রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দিলাম। আপনারা কাজে যোগ দেন। আমি একা সরকার চালাই না। আমি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবো। আমাকে একটু সময় দেন। আমি আপনাদের প্রতি কোনো অবিচার করব না। আপনারা কাজে ফিরুন। অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি সব হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতিতে অধ্যক্ষদের চেয়ারম্যান করবো। জুনিয়র চিকিৎসক, সিনিয়র চিকিৎসক, নার্স, পুলিশ থাকবে তাতে। আমি আর জি করসহ সব কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দিলাম।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, আমার নিরাপত্তাজনিত বারণ থাকা সত্ত্বেও নিজে ছুটে এসেছি আপনাদের কাছে। আপনাদের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানাচ্ছি। আমি ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে এসেছি।ভারী বৃষ্টিপাত চলছে। আপনারা যেভাবে বসে আছেন, আমার কষ্ট হচ্ছে। ৩৪ দিন ধরে বসে আছেন। আমি রাতের পর রাত ঘুমাইনি। আপনারা রাস্তায় থাকলে আমাকেও পাহারাদার হিসেবে জেগে থাকতে হয়।
এসময় চিকিৎসকদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা যদি কাজে ফিরতে চান, আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের দাবিগুলো সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবো। আমি একা সরকার চালাই না। সবার সঙ্গে আলোচনা করবো। যদি কেউ দোষী হয়, সে অবশ্যই শাস্তি পাবে।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সিবিআই’কে অনুরোধ করবো, দোষীদের ফাঁসি হোক। কেউ দোষী থাকলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবো, এটুকু বলতে এসেছি। সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা চলছে। কোনো পদক্ষেপ আপনাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে না। এখন আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এখানে আসিনি। আন্দোলনের সমব্যথী হিসেবে এসেছি। আপনাদের বড় দিদি হয়ে এখানে এসেছি।
এদিন মমতা ব্যানার্জী ধরনা মঞ্চে পৌঁছাতেই জুনিয়র চিকিৎসকদের ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে এলাকা। তখন মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমাকে কথা বলতে দিলে খুশি হবো। সিবিআই’র কাছে বিচার চান, নির্যাতিতার দোষীরা যাতে দ্রুত শাস্তি পায়।
বক্তব্য শেষে মুখ্যমন্ত্রী সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর জুনিয়র চিকিৎসকরা জানান, তারা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে রাজি আছেন। কিন্তু সেই বৈঠকে সরাসরি সম্প্রচার করতে হবে।
এর আগেও একই শর্ত দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) তাদের প্রতিনিধিদের বৈঠকে ডেকেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সেখানে ৩২ জন জুনিয়র চিকিৎসক গিয়েছিলেন। তারা শর্ত দেন, বৈঠকের সব কিছু ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ করতে হবে।
কিন্তু রাজ্য সরকার তাতে রাজি না হওয়ায় সেই বৈঠক ভেস্তে যায়। অতঃপর শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী নিজে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করতে আসলেন। কিন্তু তিনি যাওয়ার পরেও আন্দোলন বন্ধ করেননি প্রতিবাদীরা