
প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা বেড়ে ১৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া খোলা তেলের লিটার ১৬৯ টাকা ও পাম অয়েলের লিটার নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪৯ টাকা।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোজ্যতেলের আমদানি ও সরবরাহসহ সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
এর আগে গত রোববার (১৩ এপ্রিল) সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা ও পাম তেলের দাম ১২ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সে নির্ধারিত দাম মেনে নেওয়ার কথা জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এরই ধারাবাহিকতায় একদিন পরে একই দাম ঘোষণা করে সরকার। বাণিজ্য সচিবের কক্ষে ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করার পর উপদেষ্টা বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে দাম বাড়ানোর কথা জানান।
তিনি জানান, নতুন দাম অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে খরচ করতে হবে ১৮৯ টাকা, যা আগে ছিল ১৭৫ টাকা। পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২২ টাকা, যা ছিল ৮৫২ টাকা। বোতলজাত তেলের পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের নতুন দাম হবে প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা, যা ছিল ১৫৭ টাকা।
এর আগে ঈদের ছুটির পর ৬ এপ্রিল ও ৮ এপ্রিল তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে দুই দফা বৈঠক করা হয়েছিল। তবে ওই সময় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এরপর ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় ১৩ এপ্রিল। ওই বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষণার পরপর থেকেই নতুন দর কার্যকর হবে জানায় সংগঠনটি।
তবে এ ঘোষণার পরপরই বৈঠকের জন্য ডাকা হয় ব্যবসায়ীদের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে তলব করে চিঠি পাঠিয়ে টিকে, মেঘনা, সিটি গ্রুপের প্রতিনিধিদের ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছিল। চিঠি পাঠানো হয় ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ভোজ্যতেল কারখানা মালিক সমিতির সভাপতির কাছেও। সে অনুযায়ী আজ তৃতীয় দফায় বৈঠক হলো। যে বৈঠকে ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে দাম বাড়ানো হলো।
ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এই দামটাই রোববার দিন প্রেস বিজ্ঞপ্তি হিসেবে গণমাধ্যমে দিয়েছে। তাহলে সরকারের সঙ্গে তাদের আগে কোনো যোগাযোগ হয়নি? এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, এটা তারা করতে পারেন না। তারা ট্যারিফ কমিশনে আবেদন করবেন। যেহেতু এটা নিত্যপণ্য হিসেবে স্বীকৃত, সরকারই এর দাম নির্ধারণ করে। ওনাদের এই কাগজের কোনো বেয়ারিং নাই। আমাদের ভোক্তা অধিকার নিশ্চয়ই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, আমাদের যে রাজস্ব অব্যাহতি চালু ছিল সেটা গত মাসের ৩০ তারিখ শেষ হয়েছে। এছাড়া আমরা বিভিন্ন বিশ্লেষণ করতে একটু সময় বেশি নিয়ে ফেলেছি। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। কারণ আন্তর্জাতিক মূল্য, আমাদের প্রতিযোগী অবস্থান ও আমাদের রাজস্ব অব্যাহতি কোনো রকমে আরও একটু প্রলম্বিত করতে পারি কিনা সেই প্রচেষ্টা আমরা করেছি। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম অতিরিক্ত এই টাকাটা সরকারের পক্ষে দেওয়া এই মুহূর্তে সংবেদনশীল। এজন্য আমরা কর অব্যাহতি আর দিচ্ছি না।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আমাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। আমাদের যে সংসারের সমন্বিত ব্যয় সেখানে একটা সংসারে যদি ৫ লিটার তেল লাগে তাহলে মাসে ৭০ টাকা মূল্য বাড়বে। এ টাকা ও সামগ্রিক যে পণ্যমূল্য এতে কিছুটা সহনীয় হবে। হয়তো এটা ভার বহন করতে হবে ভোক্তাকে। একটা পণ্যের মাসিক ৭০ টাকা বাড়বে বলে আমার ধারণা। যদি আমরা এক লিটার তেল মাথাপিছু ধরে পাঁচজনের সংসারে পাঁচ লিটার তেল হিসাব করি।
বাজার নিয়ন্ত্রণে কী করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত রমজানে আমরা সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করে বাজার স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করেছি। একইসঙ্গে সরবরাহ ব্যবস্থাকে উন্নত করার মাধ্যমে এ ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেছি। সামনেও আমরা একই পদ্ধতি অনুসরণ করবো। যেহেতু এটা কার্যকর ছিল।