বাংলা গানের কিংবদন্তিতুল্য শিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন। গল্পের বইয়ের লাইন তার কণ্ঠে তুলে দিলে অবলীলায় তা গান হয়ে যায়, একসময় এমন কথাও প্রচলিত ছিল। আজ তার ৭১তম জন্মদিন।
দেশের গান এবং সিনেমা গান গেয়ে মানুষের মন জয় করেছেন সাবিনা ইয়াসমীন। বলা চলে, সাবিনা ইয়াসমীন চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে এ দেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছেন, হয়েছেন বাঙালির আত্মার আত্মীয়। বিগত কয়েক দশকে অনেক বাবা-মায়েরা এই শিল্পীকে ভালোবেসে তাদের কন্যা সন্তানের নাম রেখেছেন সাবিনা ইয়াসমীন।
১৯৬৭ সালে চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমায় প্রথম গান করেন সাবিনা ইয়াসমীন। তখন তার বয়স মাত্র ১৩ বছর। প্রথম প্লেব্যাক বাজিমাত করেন তিনি। এরপর তাকে আর সংগ্রাম করতে হয়নি। একের পর এক সিনেমায় গেয়েছেন, বেরিয়েছে অডিও অ্যালবাম। নিজেকে বাংলা গানের অপরিহার্য শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।
দেশের গান এ শিল্পীকে অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। তাকে নিয়ে গেছে মানুষের মনের মনিকোঠায়। দেশাত্মবোধক গানের ক্ষেত্রে সাবিনা ইয়াসমীনকে বলা যায় – অপ্রতিদ্বন্দ্বী। এ পর্যন্ত বহু দেশের গান গেয়েছেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘জন্ম আমার ধন্য হলো’, ‘ও আমার বাংলা তোর’, ‘একটি বাংলাদেশ’, ‘ও মাঝি নাও ছাইড়া দে’, ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য’, ‘সেই রেল লাইনের ধারে’ ও ‘যদি মরণের পরে কেউ প্রশ্ন করে’।
সাবিনা ইয়াসমীনের গানের সংখ্যা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না তিনি নিজেও। তবে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে জানা গেছে, তিনি অন্তত ১০ হাজার গান গেয়েছেন। সেসবের বেশিরভাগই জনপ্রিয়। ‘এ কী সোনার আলোয়’, ‘প্রেম যেন এক গোধুলি বেলার’, ‘যদি আমাকে জানতে সাধ হয়’, ‘এই পৃথিবীর পরে কত ফুল ফোটে’, ‘মন যদি ভেঙ্গে যায় যাক’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘এ আধার কখনো যাবে না’, ‘জানি না সে হৃদয়ে কখন এসেছে’, ‘চিঠি দিও প্রতিদিন’, ‘ইশারায় শীষ দিয়ে আমাকে ডেকো না’, ‘এ সুখের নেই কোনো ঠিকানা’ গানগুলো সেই তালিকায় শুরুর দিকেই রাখা যাবে।
সাবিনা ইয়াসমীনের গায়কী উপমহাদেশের আরেক কিংবদন্তি শিল্পী লতা মঙ্গেশকরও পছন্দ করেছিলিন। এ শিল্পীর সঙ্গে সাবিনা ইয়াসমীনের দেখা হয়েছিল ১৯৭৮ সালে, বাংলাদেশ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অংশ নিতে সাবিনা সেবার মুম্বাই গিয়েছিলেন। উৎসবের ফাঁকে লতা মঙ্গেশকরের সামনে ইয়াসমীনের গান পরিবেশনের সুযোগ হয়েছিল। মুহূর্তটিকে জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া বলে মনে করেন তিনি। সেই স্মৃতির কথা জানিয়ে সাবিনা ইয়াসমীন একবার বলেছিলেন, শুধু হারমোনিয়াম বাজিয়ে লতাজির সামনে “জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো” গেয়েছিলাম। গান শেষ হওয়ার পর লতাজির প্রশংসা শুনে আমি লজ্জা পেয়ে যাই। আমার গলা ও গায়কীর প্রশংসা এত প্রশংসা করলেন যে, সেটা আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল।”
সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন সাবিনা ইয়াসমীন। সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, উত্তম কুমার পুরস্কার, জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার, শেরে বাংলা স্মৃতি পদক। সিনেমার গানের জন্য তিনি ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
সাবিনা ইয়াসমীনের মেয়ে কণ্ঠশিল্পী ইয়াসমীন ফায়রুজ বাঁধন বলেন, তিনি এখন মোটামুটি সুস্থ আছেন। এই জন্মদিনে কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না।