
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছরের জুলাইজুড়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলন দমাতে মরিয়া হয়ে ওঠে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকার। নির্বিচারে গুলি চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এবং আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে দেন প্রবাসীরা। এতে হঠাৎ কমে যায় রেমিট্যান্স প্রবাহ। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর সরকারের আহ্বানে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো শুরু করেন প্রবাসীরা। বাড়তে থাকে রেমিট্যান্স। প্রবাসী আয়ে দেশ গড়ে একের পর এক রেকর্ড। গত মার্চ মাসে সব রেকর্ড ছাপিয়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে দেশে।
রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় মূলত দেশের অর্থনীতির অন্যতম শক্তিশালী ভিত্তি। দেশের বৈদেশিক লেনদেন চলমান রাখছে এ অর্থ। এটি ভূমিকা রাখছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ গঠনেও। রেমিট্যান্সের গতিপ্রবাহ বাড়ায় বৈদেশিক বাণিজ্যের রসদ জোগাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, অর্থপাচার বন্ধের কারণে রেমিট্যান্স বাড়ছে। চলতি অর্থবছর রেমিট্যান্স ৩০ বিলিয়ন ছাড়াতে পারে এমন ইঙ্গিতও দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।
এদিকে রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিজার্ভ থেকে এক ডলারও বিক্রি না করে বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে আমদানির তুলনায় রপ্তানি বাড়ায় দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমে এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ঘাটতি কমেছে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ।
‘আর্থিক হিসাবের ভারসাম্যে উন্নতি হয়েছে। টাকা পাচার কমেছে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স বেড়েছে। গত মার্চ মাসে রেমিট্যান্স ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার এসেছে। আশা করা যায় এতে মার্চে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের হিসাব চলতি মাস থেকেই বেশি ভালো হবে।’- বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ঈদুল ফিতর ঘিরে মার্চ মাসে রেকর্ড ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। ঈদের পরেও রেমিট্যান্সের গতিধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি (এপ্রিল) মাসের প্রথম ২১ দিনেই এসেছে ১৯৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা প্রায় ২৩ হাজার ৯৮৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রতিদিন আসছে ৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের বেশি বা ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছর ৯ মাস ২১ দিনে ২ হাজার ৩৭৫ কোটি ১০ লাখ ডলার এসেছে। অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৯ মাস ২১ দিনে এসেছিল ১ হাজার ৮৪৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর রেমিট্যান্স বেড়েছে ৫২৮ কোটি ডলার বা ২৯ শতাংশ বেশি।
গত ডিসেম্বরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে দেশে। সে রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়ে মার্চ মাসে। এ নিয়ে অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্ট থেকে টানা ৮ মাস দুই বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলারের বেশি করে রেমিট্যান্স আসছে।
অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ, নভেম্বরে ২১৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার, ডিসেম্বরে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার, জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ ৩০ হাজার এবং ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। সবশেষ মার্চ মাসে ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
‘রিজার্ভ ও বিনিময় হার নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। অর্থপাচার বন্ধের কারণে রেমিট্যান্স বাড়ছে। আবার রপ্তানিও বাড়ছে। সরকার পরিবর্তনের পর রিজার্ভ থেকে এক ডলারও বিক্রি না করে বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে।’ -বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর
রেমিট্যান্স বাড়ার নেপথ্যে যেসব কারণ
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ এবং ডলারের বিনিময় হার নিয়ে চিন্তার কিছু নেই বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলছে, অর্থপাচার বন্ধের কারণে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বাড়ছে। চলতি অর্থবছর রেমিট্যান্স ৩০ বিলিয়ন ছাড়াতে পারে।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘রিজার্ভ ও বিনিময় হার নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। অর্থপাচার বন্ধের কারণে রেমিট্যান্স বাড়ছে। আবার রপ্তানিও বাড়ছে। সরকার পরিবর্তনের পর রিজার্ভ থেকে এক ডলারও বিক্রি না করে বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে।’
খোলাবাজার ও ব্যাংক রেটের মধ্যে ব্যবধান থাকায় হুন্ডিকে প্রাধান্য দিয়ে আসছিলেন প্রবাসীরা। বেশি টাকা পেতে ঝুঁকি থাকলেও অবৈধ পথে তারা পরিবারের জন্য অর্থ পাঠিয়ে আসছিলেন। তবে সেপথ এখন বন্ধ। একদিকে পাচার থেমেছে, অন্যদিকে রেমিট্যান্সের ডলারে খোলাবাজার ও ব্যাংক রেটের ব্যবধান কমেছে। এখন একই রেটে পাওয়া যাচ্ছে। এতে আর ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে অর্থ পাঠাচ্ছেন না প্রবাসীরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোরতার কারণে হুন্ডি দৌরাত্ম্যও কমেছে। এসব কারণে বাড়ছে রেমিট্যান্স।
রেমিট্যান্স প্রবাহ
২০২৩-২৪ | ২০২৪-২৫ | |
জুলাই | ১৯৭.৩১ | ১৯১.৩৭ |
আগস্ট | ১৫৯.৯৪ | ২২২.৪১ |
সেপ্টেম্বর | ১৩৩.৪৩ | ২৪০.৪১ |
অক্টোবর | ১৯৭.১৪ | ২৩৯.৫০ |
নভেম্বর | ১৯৩ | ২১৯.৯৯ |
ডিসেম্বর | ১৯৯.১২ | ২৬৩.৮৭ |
জানুয়ারি | ২১১.৩১ | ২১৮.৫২ |
ফেব্রুয়ারি | ২১৬.৪৫ | ২৫২.৭৬ |
মার্চ | ১৯৯.৭০ | ৩২৯ |
# (কোটি ডলারে হিসাব)
# তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংক
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অনেকেই রেমিট্যান্স ডলারের দর ১২২ টাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। আমরা বলেছি, দুবাই থেকে ডলারের দর নির্ধারণ হবে না। আমরা যে দর দেব সেই দরেই ব্যাংকগুলো ডলার কেনা-বেচা করবে। এখন খোলাবাজারের চেয়ে ব্যাংকে বেশি দর পাচ্ছে। ধীরে ধীরে ডলারের দর বাজারভিত্তিক হবে, তবে সেটা এখনই নয়। অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে আগামীতেও কঠোরতা অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে দেশ থেকে পাচার করে নেওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে নানান উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রবাসীদের প্রচারও ভালো কাজ করছে। এতে সাড়াও পাচ্ছে ব্যাংক, বাড়ছে রেমিট্যান্সের গতি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরই প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ব্লগ তৈরি করেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য, সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন, ড. কনক সারওয়ারসহ আরও অনেকে। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার জন্য বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের আহ্বান জানান। যার ফলস্বরূপ এখন প্রতি মাসেই দুই বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাচ্ছে প্রবাসী আয়। গত ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসার রেকর্ড করে। দুই মাস যেতে না যেতেই মার্চে সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস তৈরি করে।
বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে হাইকমিশন ও বাংলাদেশ কনসুলেট। বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো প্রবাসীদের বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আরও উদ্বুদ্ধ করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং বাংলাদেশ কনসুলেট জেনারেল সিডনির উদ্যোগে প্রবাসীদের নিয়ে এ বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে সিডনির বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. শাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ হাইকমিশন ক্যানবেরার চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ড. দেওয়ান মো. শাহারিয়ার ফিরোজসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। অন্য দেশের হাইকমিশনও একই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকারের আহ্বানে।
বর্তমানে প্রতি রেমিট্যান্সের এক ডলারে পাওয়া যাচ্ছে ১২২ টাকা, এর সঙ্গে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা রয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো চাইলে এর সঙ্গে আরও অতিরিক্ত ১ শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারবে।
অতিরিক্ত প্রণোদনা পাচ্ছেন রেমিট্যান্সযোদ্ধারা
বর্তমানে প্রতি রেমিট্যান্সের এক ডলারে পাওয়া যাচ্ছে ১২২ টাকা, এর সঙ্গে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা রয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো চাইলে এর সঙ্গে আরও অতিরিক্ত ১ শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারবে। অনেক ব্যাংকই এখন আড়াই শতাংশের সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ১ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে রেমিট্যান্স ডলারের দাম পাওয়া যাচ্ছে ১২৫ টাকার মতো।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত প্রণোদনা আর নিরাপদ হওয়ার কারণে বৈধপথে অর্থ প্রেরণ করছেন প্রবাসীরা। এতে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।’
বেশি রেমিট্যান্স ঢাকা জেলায়, কম রাঙ্গামাটি
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের প্রথম ৯ (জুলাই-মার্চ) মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ১৭৮ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে একক জেলা হিসেবে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ঢাকা জেলায়। প্রায় ৭২০ কোটি ডলার এসেছে ঢাকা জেলায়। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে চট্টগ্রাম জেলায়। ৯ মাসে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রামে প্রবাসী আয় এসেছে ১৮১ কোটি ডলার। এর পরে কুমিল্লা জেলায় ১১৬ কোটি ২৮ লাখ ডলার, সিলেট জেলায় ৯৯ কোটি ১০ লাখ ডলার, নোয়াখালী জেলায় ৬৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার এবং ফেনী জেলায় ৬৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার এসেছে।
অর্থবছরের ৯ মাসে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছে রাঙ্গামাটি জেলায়। এ জেলায় নয় মাসে এক কোটি ৯৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন জেলা থেকে বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসীরা। বান্দরবান জেলায় এসেছে এক কোটি ৯৯ লাখ ডলার, লালমনিরহাটে দুই কোটি ডলার, ঠাকুরগাঁওয়ে দুই কোটি ৮৯ লাখ ডলার, পঞ্চগড়ে দুই কোটি ৫১ লাখ ডলার এবং জয়পুরহাটে তিন কোটি ১২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে।
বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্য বা ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ঘাটতি কমে ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছর একই সময়ে যা ছিল ৪ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার।
বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে
দেশে আমদানির তুলনায় রপ্তানি বাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতি আরও কিছুটা কমে এসেছে। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের প্রথম আট মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ঘাটতি কমেছে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময় (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ঘাটতি ছিল ১৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্য বা ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ঘাটতি কমে ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছর একই সময়ে যা ছিল ৪ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার।
অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত বেড়েছে ১১৬ শতাংশের বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে যেখানে ৬৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল, এবার তা বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। এটি মূলত কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত থাকে। যেখানে কোনো উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। তবে কোনো ঘাটতি হলে তা মেটাতে ঋণ নিতে হয়। আর্থিক হিসাব করা হয় বিদেশি ঋণ ও সহায়তা, বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এবং পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্টের পরিসংখ্যানগুলোর যোগ বিয়োগ করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘রেমিট্যান্স বাড়ার প্রধান কারণ অর্থ পাচার ঠেকাতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এর আগে কখনো ব্যাংক চ্যানেলে অর্থ পাঠাননি এমন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি আগস্ট পরবর্তীসময়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাঠাচ্ছেন। তাদের কাছে দর কোনো বিষয় নয়, বৈধপথে পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন। অন্যদিকে আবার আমদানি দায় মেটাতে ব্যাংকগুলোকেই অর্থ জোগাড় করতে বলা হয়েছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলো নিজেদের তাগাদা থেকে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে ডলার নিয়ে আসছে। সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স বাড়ছে, আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে।’
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আর্থিক হিসাবের ভারসাম্যে উন্নতি হয়েছে। টাকা পাচার কমেছে। বৈধপথে রেমিট্যান্স বেড়েছে। গত মার্চ মাসে রেমিট্যান্স ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার এসেছে। আশা করা যায় এতে মার্চে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের হিসাব চলতি মাস থেকেই বেশি ভালো হবে।’