মালয়েশিয়ায় পাসপোর্ট সেবাগ্রহণ সংক্রান্ত হাইকমিশন সচেতনতামূলক জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বুধবার (২১ আগস্ট) হাইকমিশনের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ হাইকমিশন কুয়ালালামপুর প্রবাসী বাংলাদেশিদের সেবা দানে সর্বদা সচেষ্ট থাকে।
প্রবাসীদের পরামর্শ কিংবা তাদের অভিযোগের বিষয়গুলো আমলে নিয়ে হাইকমিশন সরকারি পরিষেবা নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন কর্মকৌশল গ্রহণ করে। প্রবাসীদের হয়রানি, দীর্ঘসূত্রতা, সেবা প্রত্যাশীদের সঙ্গে অসদাচরণর মতো বিষয়গুলো হাইকমিশন অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে তা লাঘবে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাসহ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করে থাকে।
হাইকমিশনের বিদ্যমান জনবল দিয়ে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসীকে বহুবিধ সেবা প্রদান সম্পন্ন করা সর্বদাই একটি বড় চ্যালেঞ্জ অন্যকথায় একটি দুরূহ কাজ। এসব সেবার মধ্যে অন্যতম একটি সেবা হচ্ছে পাসপোর্ট সেবা। হাইকমিশন থেকে প্রদত্ত পাসপোর্ট সেবায় দীর্ঘসূত্রতা এবং অনিয়ম নির্মূল করার অভিপ্রায় নিয়ে হাইকমিশন বিগত ৩ বছরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এসব কার্যক্রমের কিছু কিছু ইতোপূর্বে প্রবাসীদের অবহিত করা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষপটে পুনরায় পাসপোর্ট সেবা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ অবহিত করা হচ্ছে।
১। প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে হাইকমিশন ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করার জন্য স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন সাপেক্ষে গত ২২ সেপ্টেম্বর আউট সোর্সিং কোম্পানি ESKL-এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে। হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তার উপস্থিতিতে একাধিক আনুষ্ঠানিক বৈঠকের মাধ্যমে যথাযথ আলোচনার মাধ্যমে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
২। গত ১৮ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব কুয়লালামপুরের সাউথগেট কমার্শিয়াল সেন্টারে আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের অফিস ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে ই-পাসপোর্ট সেবার উদ্বোধন করেন। এদিন থেকেই মূলত ই-পাসপোর্ট সেবা যাত্রার শুরু হয়।
৩। হাইকমিশন স্টেকহোল্ডার অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে অনুধাবন করে, পাসপোর্টের আবেদনপত্র পূরণের মাধ্যমেই দালাল বা মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের সম্পৃক্তার সৃযোগ সৃষ্টি হয়। তাই দালালমুক্ত পাসপোর্ট পরিষেবা নিশ্চিতকল্পে ই-পাসপোর্টের আবেদন ফরম পূরণ, পাসপোর্ট ফি জমাকরণ, ছবি তোলা, বায়োমেট্রিক গ্রহণসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক অনুমোদনের আগ পর্যন্ত সকল কার্যক্রম আউট সোর্সিং কোম্পানি (ESKL) সম্পন্ন করবে মর্মে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তির বিশেষ শর্তাবলির মধ্যে রয়েছে সুপরিসর অবকাঠামো, স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া, IOT ভিত্তিক রিমোট মনিটরিং, ৩০০০০০ রিংগিত সিকিউরিটি ডিপোজিট ইত্যাদি।
৪। চুক্তি অনুযায়ী বর্ণিত সেবাসমূহ (আবেদন ফরমপূরণ, পাসপোর্ট ফি ব্যাংকে জমাকরণ, ছবি তোলা, বায়েমেট্রিক ইত্যাদি) গ্রহণের বিনিময়ে সেবাগ্রহীতাকে ন্যূনতম অর্থ মালয়েশিয়ান মুদ্রায় ৩২ রিঙ্গিত বা (৭.৩৪ মার্কিন ডলার) সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হবে।
২০১৪ সালে পাসপোর্ট অধিদপ্তর মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে এমআরপি প্রদানের বিষয়ে প্রতিটি এমআরপি ইস্যুর জন্য ঠিকাদারকে সার্ভিস চার্জ ৭৮.৪৮ রিঙ্গিত বা ১৮ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করেছিল।
৫। বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি লেনদেন হবে Maybank এর মাধ্যমে। আউটসোর্সিং সার্ভিস চার্জ এবং সরকারি ফি প্রতিটি পাসপোর্টের অনুকূলে আলাদা-আলাদা হিসাবে জমা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি স্বতন্ত্র এন্ট্রি হচ্ছে যা ডিজিটালি এবং ম্যানুয়ালি মটিরিং বা যাচাইয়ের ব্যবস্থো রয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই, বরং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের কারণে অধিকতর উন্নত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্রবাসীদের অতি প্রয়োজনীয় সেবাসমূহ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।
৬। প্রবাসীদের পাসপোর্ট পরিষেবা হাইকমিশন ও আউটসোর্সিং কোম্পানির মধ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত করা হয়েছে তা যথাযথ বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য হাইকমিশন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এ টাস্কফোর্স যে কোনো অভিযোগ পেলেই হাইকমিশনারের অনুমোদন সাপেক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে। প্রয়োজেনে টাস্কফোর্স সদস্যরা নিয়মিত এসব নিয়মিত মনিটরিংয়ের জন্য সরেজমিনে ইএসকেএল এর স্থাপনা পরিদর্শন করেন। তবে আশার কথা হচ্ছে, ই-পাসপোর্ট সেবা প্রদানে এখন পর্যন্ত তেমন অভিযোগ-অনুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।
৭। মহামারি কোভিড-১৯ চলাকালে বিশেষ ব্যবস্থায় সরকারি পরিষেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য এমআরপি পাসপোর্টের আবেদনপত্র গ্রহণের জন্য POS মালয়েশিয়াকে (মালয়শিয়া পোস্ট অফিস) দায়িত্ব দেওয়া হয়। সম্প্রতি Pos Malaysia এর মাধ্যমে গৃহীত এমআরপি আবেদন টাস্কফোর্স কর্তৃক পর্যালোচনা করে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, নিরীহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের সরলতার সুযোগ নিয়ে এমআরপি-এর আবেদন গ্রহণের নামে একটি কায়েমী স্বার্থন্বেসী সুবিধাবাদী (vested interests) গোষ্ঠী এ ব্যবস্থার অপব্যবহার করছে। হাইকমিশন এখন থেকে Pos Malaysia এর মাধ্যমে আবেদন ফরম গ্রহণ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৮। ১৫ আগস্ট প্রদত্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রবাসীদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) পাসপোর্ট করতে নিরুৎসাহিত করছে এর পরিবর্তে ই-পাসপোর্ট করতে উৎসাহিত করছে। মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যেসব দেশে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু হয়েছে সেসব দেশে এমআরপি-এর কার্যক্রম যথাসম্ভব সীমিত করতে হবে। এক্ষেত্রে যেসব আবেদনকারীর ই-পাসপোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রয়েছে তাদের ই-পাসপোর্ট প্রদান করতে হবে। আর কেবলমাত্র যাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নাই এবং জরুরি প্রয়োজনে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করবে হাইকমিশন।
৯। উল্লিখিত অবস্থার প্রেক্ষিতে, হাই কমিশন এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে যে, এখন থেকে আউটসোর্সিং কোম্পানি ESKL এর মাধ্যমে এমআরপি আবেদন গ্রহণ করা হবে, যেখানে প্রতি আবেদন প্রক্রিয়াকরণ (আবেদন ফরম পূরণ, সরকারি ফি নেওয়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্তিকরণ ইত্যাদি) এর জন্য আরএম (RM) ২০ (বিশ) সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে। কুয়ালালামপুর-এ ESKL কোম্পানি তার নিজস্ব কার্যালয়ে (ই-২-২ ব্লক ই সাউথগেট কমার্শিয়াল সেন্টার জালান দুআ, অফ, জালান চ্যান সো-লিন, ৫৫২০০ কুয়ালালামপুর), অন্য শহরে (যেমন: জহুর বাহরু, পেনাং, মালাক্কা, পোর্ট ক্লাং ইত্যাদি) হাইকমিশন-এর মোবাইল কনস্যুলার টিম এর সাথে ESKL এর টিম যৌথভাবে এমআরপি এবং ই-পাসপোর্ট এর আবেদন গ্রহণ করবে মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমিশন।
১০। পাসপোর্টের আবেদন ফরমপূরণ, ব্যাংকে টাকা জমাসহ পাসপোর্ট প্রাপ্তির পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়ায় দালাল বা মধ্যস্বত্ত্বভোগীর হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। ‘আগে আসলে আগে পাবেন’, এটাই হবে পাসপোর্ট প্রাপ্তির একমাত্র প্রক্রিয়া। সেবাপ্রার্থীদের যেন অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে না হয় সে কারণে আউটসোর্সিং কোম্পানি ৪৫টি কান্টারের মাধ্যমে সুবিশাল অবকাঠামোতে সেবা দিচ্ছে।
এছাড়া ১২ঘণ্টা কল সেন্টারের মাধ্যমে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যার হটলাইন নম্বর +৬০৩৯২১২০২৬৭। এ বিষয়ে হাইকমিশন সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করছে।