
মালয়েশিয়ার একটি প্লাস্টিক যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী সংস্থা কাওয়াগুচি ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানা থেকে বকেয়া টাকা আদায়ে দিন পার করছেন দুই শতাধিক বাংলাদেশি শ্রমিক। গত বছর কারখানাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আট মাসের মজুরি আটকে যায়।
জানা গেছে, ২৮০ জন বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক তাদের কারখানাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর প্রায় ৩ মিলিয়ন রিঙ্গিত বকেয়া মজুরি এবং অন্যান্য পাওনা দাবি করছেন।
বুধবার (২১ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এপি।
শ্রমিকদের অভিযোগ, মালয়েশিয়ার একটি শ্রম ট্রাইব্যুনাল কাওয়াগুচিকে ৩ মিলিয়ন রিঙ্গিতের (৬,৯৪,৪৪৪ ডলার) বেশি বকেয়া মজুরি পরিশোধের নির্দেশ দিলেও শ্রমিকরা মাত্র ২৫১,০০০ রিঙ্গিত (৫৮,১০১ ডলার) পেয়েছেন।
অনেকেই নতুন কাজ খুঁজে পেয়েছেন, কিন্তু মোটা অঙ্কের নিয়োগ ফি পরিশোধ করতে ঋণ নেয়ায় এখন তারা ঋণের বোঝায় জর্জরিত।
তারা অভিযোগ করেছেন, তাদেরকে কখনও কখনও বিরতিহীনভাবে ২৪ ঘণ্টা এবং ছুটির দিনে বিনা বেতনে ওভারটাইম ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।
তারা টেলিভিশন এবং এয়ার কন্ডিশনারের জন্য প্লাস্টিকের কেসিং তৈরি করতেন। আরও জানিয়েছেন, কাওয়াগুচি কোম্পানি তাদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করেছে এবং তাদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধিতেও বিলম্ব করেছে।
কাওয়াগুচির প্রধান গ্রাহকদের মধ্যে দুটি সংস্থা, সনি গ্রুপ এবং প্যানাসনিক হোল্ডিংস কর্পোরেশন, তাদের সরবরাহকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় অর্ডার বন্ধ করে দেয়ার পরপরই ডিসেম্বরে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়।
শ্রমিকরা আরও জানান, কারখানা বন্ধ হওয়ার পর মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা তাদের মধ্যে অনেককে জোরপূর্বক প্রায় ৩৬০ কিলোমিটার দূরে অন্য একটি শহরে নতুন কারখানার কাজে পাঠিয়ে দেন, কোনো তথ্য না দিয়েই।
তাদের নোংরা শিপিং কন্টেইনারের ডরমেটরিতে রাখা হত বলেও জানান অনেকে। আরও ৮০ জন শ্রমিককে পামওয়েল বাগানে কাজ করতে বলা হয়েছিল – কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এদিকে অনেকে জানান, মালয়েশিয়ার সরকারের কাছ থেকে কাজ পরিবর্তনের অনুমতি পেতে তাদের প্রায় তিন মাস সময় লেগেছে।
পারভেজ আজম নামে এক বাংলাদেশি শ্রমিক বলেন, ‘আর কতদিন এভাবে চালিয়ে যেতে পারব তা জানি না। এভাবে চলতে থাকলে আমরা এখানেই মারা যাব।’
মালয়েশিয়া এবং অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো কারখানার কর্মীদের কাজের জন্য প্রায়ই বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং নেপাল থেকে আগত অভিবাসী শ্রমিকদের উপর নির্ভর করে, যাদের দিয়ে উৎপাদন, বাগান বা নির্মাণের মতো শ্রমঘন কাজগুলো করানো হয়।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার বাংলাদেশ অফিসের মতে, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় নিয়োগ এবং অভিবাসনের খরচ বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশগুলোর মধ্যে একটি।
সম্প্রতি, বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিভেন সিম চি কেওংয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন। শ্রমিকদের সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য মালয়েশিয়ার তিনজন মন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেন উপদেষ্টা।