অবশেষে নব্বই দশকের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মনি কিশোরের দাফনের অনুমতি মিলেছে। পারিবারিক সিদ্ধান্তের কারণে তৈরি হয়েছিল জটিলতা। সব মিলিয়ে শিল্পীর দাফন বিলম্ব হচ্ছিল। অবশেষে সব জটিলতার অবসান হয়েছে। প্রশাসন থেকে অনুমতি মিলেছে। আজ বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীর বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদে জানাজা শেষে দক্ষিণ বনশ্রী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিল্পীর বোন জামাই প্রদীপ কুমার মিস্ত্রী।
রাজধানীর রামপুরার বাসা থেকে গত শনিবার মনি কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, চার থেকে পাঁচ দিন আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। একসময়ের জনপ্রিয় এই গায়কের মৃত্যুর কারণ এখনো নিশ্চিত না হলেও রামপুরা থানার পুলিশ জানিয়েছে, শিল্পী মনি কিশোরের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।
পেশাদার সংগীতজীবনের শুরুতে বিয়ে করেন মনি কিশোর। শামীমা চৌধুরীর সঙ্গে সেই বিয়ে টেকেনি। দেড় যুগ আগে তাঁদের দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটে। বিয়ের সময় ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন মনি কিশোর। সে হিসেবে তাঁর মরদেহের দাফন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন বড় ভাই অশোক কুমার।
তবে ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রমাণাদি না পাওয়ায় ও মেয়ে নিন্তি চৌধুরীও দেশে না থাকায় সংশ্লিষ্ট থানা–পুলিশ কর্মকর্তারাও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। অবশেষে দাফনের অনুমতি পাওয়া গেল।
নব্বইয়ের দশক থেকেই গান গেয়ে শ্রোতার মন মাতিয়েছেন মনি কিশোর। সেই কবে গেয়েছিলেন ‘কী ছিলে আমার, বলো না তুমি’; তা আজও অনেক সংগীতপ্রেমী গেয়ে ওঠেন আপনমনে। সেই গানের স্রষ্টা মনি কিশোর দীর্ঘ সময় ধরে ছিলেন লোকচক্ষুর অন্তরালে। অনেকটা অভিমান থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন। শেষ দিকে তো এমনও হয়েছে, কেউ যাতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারেন, নিজের ব্যবহৃত পুরোনো মুঠোফোন নম্বর বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি।
মনি কিশোর পাঁচ শতাধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। রেডিও-টিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী হলেও গান গেয়েছেন অল্প। সিনেমায়ও তেমন গাননি। মূলত অডিওতে চুটিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর জনপ্রিয় গানের মধ্যে ‘কী ছিলে আমার’, ‘সেই দুটি চোখ কোথায় তোমার’, ‘তুমি শুধু আমারই জন্য’, ‘মুখে বলো ভালোবাসি’, ‘আমি মরে গেলে জানি তুমি’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তাঁর সবচেয়ে শ্রোতৃপ্রিয় গান ‘কী ছিলে আমার’ তাঁরই সুর করা ও লেখা। মাঝে দীর্ঘদিন নতুন গান প্রকাশ থেকে দূরে ছিলেন এই গায়ক। চলতি বছর এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি আবারও গান করছেন।
জানিয়েছিলেন, পুরোনো গানগুলো ইউটিউবে দিচ্ছেন পর্যায়ক্রমে। জনপ্রিয় গান ‘কী ছিলে আমার’ নতুন করে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁর ভাষ্য ছিল, এ প্রজন্মের শ্রোতারা গানটি শুনেছেন।
পুলিশ কর্মকর্তা বাবার সাত সন্তানের মধ্যে মনি কিশোর চতুর্থ সন্তান। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় ভাই মারা গেছেন। দেড় যুগ আগে মনি কিশোরের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে একা থাকতেন। তাঁর একমাত্র মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। নড়াইল জেলার লক্ষ্মীপুরে মামাবাড়িতে ১৯৬১ সালের ৯ জানুয়ারি জন্ম মনি কিশোরের। পুলিশ কর্মকর্তা বাবার চাকরিসূত্রে দেশের বিভিন্ন জেলায় থাকা হয়েছে তাঁর।