ফের উত্তপ্ত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) গুলি ও বোমার আঘাতে সেখানে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পুলিশ-সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন। অভিযোগ উঠেছে, কুকি সন্ত্রাসীরা একটি মেইতেই গ্রামে হামলা চালালে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
দ্য ইন্ডিয়ার এক্সপ্রেস জানিয়েছে, রোববার মণিপুরের কৌত্রুক এলাকায় এই হামলা চালানো হয়। পুলিশ বলেছে, পাহাড়ের ওপর থেকে নিচের উপত্যকা লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা। এসময় উচ্চপ্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করে আরপিজি (রকেট প্রোপেলড গ্রেনেড) নিক্ষেপ করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।
একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গ্রামটিকে লক্ষ্য করে এ ধরনের অন্তত সাতটি বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে।
মণিপুর পুলিশের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাধারণত যুদ্ধের সময় ড্রোন বোমা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী এবং বেসামরিক লোকদের ওপর বিস্ফোরক ফেলতে সাম্প্রতিক এই ড্রোন ব্যবহার একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এতে প্রমাণিত হয়, এর সঙ্গে উচ্চ প্রশিক্ষিত পেশাদাররা সম্পৃক্ততা, যাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও সহায়তা রয়েছে। বিষয়টি কোনোভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে একজনের নাম নাংবাম সুরবালা। ৩১ বছর বয়সী ওই নারীর মাথায় গুলি লাগে। হামলায় তার ১১ বছরের মেয়েও গুলিবিদ্ধ হয়। তবে সে বেঁচে রয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, রোববার স্থানীয় সময় দুপুর ২টার দিকে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। এরপরও রাতভর উত্তেজনা ছিল এলাকায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গ্রামের বেশ কিছু বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। বেশিরভাগ গ্রামবাসী এরই মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন।
২০২৩ সালের মে মাস থেকে জাতিগত সহিংসার সাক্ষী মণিপুর। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি কখনোই।
ইম্ফাল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হলো মেইতেই জনজাতি। তারা সম্প্রতি দাবি তুলেছিল, তাদের তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি দিতে হবে। কিন্তু এই দাবির বিরোধিতা করে স্থানীয় কুকি-জো আদিবাসীরা। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
তফশিলি উপজাতি ইস্যুর পাশাপাশি সংরক্ষিত জমি এবং জরিপ নিয়েও উত্তাপ ছড়িয়েছিল মণিপুরে। এ সহিংসতায় এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকশ মানুষ।