বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে আজ মঙ্গলবার। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এই বৈঠক হতে যাচ্ছে।
দুই শীর্ষ নেতার এই বৈঠকের আলোচনায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার কার্যক্রমে সহযোগিতার বিষয়টি অগ্রাধিকার পেতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। সূত্রটি জানায়, আলোচনায় আসতে পারে ভারত প্রসঙ্গও।
ঢাকা ও নিউইয়র্কের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টা) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে দুই নেতার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
গত তিন দশকে জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের কোনো শীর্ষ নেতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কোনো বৈঠক হয়নি। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে সব সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সংবর্ধনায় দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে দুই দেশের সহযোগিতা কীভাবে জোরদার করা যায়, তা নিয়ে দুই শীর্ষ নেতা আলোচনা করবেন। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নানা খাতে সংস্কারের উদ্যোগ এবং তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার থাকবে।
পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে ড. ইউনূস স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার রাতে নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন।
নিউইয়র্ক থেকে একটি সূত্র জানায়, জো বাইডেনের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক হতে পারে ৩০ মিনিটের মতো। শীর্ষ নেতাদের আলোচনায় দুই পক্ষের অন্য সদস্যরা যুক্ত হবেন কি না, তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছে সূত্রটি।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন গতকাল সোমবার বিকেলে বলেন, সামগ্রিকভাবে দুই দেশের সহযোগিতা কীভাবে জোরদার করা যায়, তা নিয়ে দুই শীর্ষ নেতা আলোচনা করবেন। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নানা খাতে সংস্কারের উদ্যোগ এবং তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার থাকবে। সমকালীন প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সংকটের প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসতে পারে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ইউনূস-বাইডেন বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কগুলোর কিছু বিষয় সংগত কারণেই অগ্রাধিকার পাবে। তবে ৫ আগস্ট–পরবর্তী বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে প্রসঙ্গটি দুই শীর্ষ নেতার আলোচনায় আসতে পারে। যদিও এ ধরনের একটি সংক্ষিপ্ত বৈঠকে তৃতীয় দেশের প্রসঙ্গটা কতটা জায়গা পাবে, সেটা অনুমান করা মুশকিল।
সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত সংস্কার প্রক্রিয়ায় কী কী উদ্যোগ নিয়েছে, তা তুলে ধরার কথা রয়েছে দুই শীর্ষ নেতার আলোচনায়। বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাত্মক সহযোগিতা পেতে বাইডেনকে অনুরোধ জানাবেন ড. ইউনূস। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) পুনর্বহালের বিষয়টি বাংলাদেশ তুলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা ও বিনিয়োগের পথ সুগম করতে বাংলাদেশ শ্রম খাতে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হতে পারে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ইউনূস-বাইডেন বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কগুলোর কিছু বিষয় সংগত কারণেই অগ্রাধিকার পাবে। তবে ৫ আগস্ট–পরবর্তী বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে প্রসঙ্গটি দুই শীর্ষ নেতার আলোচনায় আসতে পারে। যদিও এ ধরনের একটি সংক্ষিপ্ত বৈঠকে তৃতীয় দেশের প্রসঙ্গটা কতটা জায়গা পাবে, সেটা অনুমান করা মুশকিল।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সামগ্রিক দিক থেকে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংস্কার এবং সুশাসনে সহযোগিতার অঙ্গীকার দেওয়া হতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক গতকাল সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদককে বলেন, চিরাচরিত প্রথা ভেঙে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক প্রতীকী অর্থে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংক্ষিপ্ত হলেও দুই নেতার বৈঠক এই বার্তাই দিচ্ছে যে হোয়াইট হাউস বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। আলোচনার ব্যাপ্তি কম বলে তাঁদের বৈঠকে বিষয়ভিত্তিক বিস্তারিত অনেক আলোচনা হয়তো হবে না।
তবে ড. ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (ইউএসএইড) প্রশাসক সামান্থা পাওয়ারের সঙ্গে আলোচনা হবে গুরুত্বপূর্ণ। ওই দুই আলোচনায় কোথায় কোথায় দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা হতে পারে, তার একটি পথরেখা পাওয়া যেতে পারে।
নিউইয়র্কে কাজ করেছেন এবং এখন কাজ করছেন—বাংলাদেশের এমন পাঁচজন কূটনীতিক এই প্রতিবেদককে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সাধারণত জাতিসংঘ অধিবেশনে তাঁর নির্ধারিত বক্তৃতার দিন সকালে নিউইয়র্কে পৌঁছান। তিনি সেদিন সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তৃতা দেন। এরপর বিকেলে জাতিসংঘের অধিবেশনে আসা রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে সংবর্ধনার আয়োজন করেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলার ফাঁকে কোনো দেশের শীর্ষ নেতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দ্বিপক্ষীয় সাক্ষাৎ প্রায় বিরল।
তবে ড. ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (ইউএসএইড) প্রশাসক সামান্থা পাওয়ারের সঙ্গে আলোচনা হবে গুরুত্বপূর্ণ। ওই দুই আলোচনায় কোথায় কোথায় দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা হতে পারে, তার একটি পথরেখা পাওয়া যেতে পারে।