কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় গোটা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবাদের আগুন। সাধারণ মানুষ থেকে তারকা খেলোয়াড় বা অভিনয়শিল্পী-সংগীতশিল্পী, বুদ্ধিজীবী…প্রতিবাদে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন সবাই।
আর জি কর–কাণ্ড নিয়ে ১১ আগস্ট কথা বলেছেন ভারত ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীও। তবে তাঁর সেই কথা ভালোভাবে নেননি আন্দোলনকারী বা সাধারণ মানুষের কেউই। সৌরভের কথার পর তাঁর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সোচ্চার হয়েছেন অনেকেই। চাপের মুখে পড়ে নিজের বক্তব্য বদলাতে বাধ্য হয়েছেন সৌরভ।
বিশ্ব-বাংলা কনভেনশন সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে আর জি কর–কাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সৌরভ বলেছিলেন, তাঁরও একটি মেয়ে আছে আর মেয়ের বাবা হিসেবে বিষয়টিতে তিনি খুব হতাশ হয়েছেন।
সৌরভ এরপর যা বলেছেন, সেটি ছিল এ রকম, ‘খুব দুর্ভাগ্যজনক। কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এটা ভয়ংকর ঘটনা…সত্যিই খুব ভয়ংকর…যেকোনো জায়গায় যা কিছু ঘটতে পারে। তাই সব জায়গায় সব সময় নিরাপত্তাব্যবস্থা, সিসিটিভি ক্যামেরা ঠিকঠাক রাখতে হবে। এ ধরনের ঘটনা যেকোনো জায়গায় ঘটতে পারে।’
এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। সৌরভ এরপর যা বলেছেন, সবার আপত্তি সেটাতেই। ‘আমি মনে করি না, বিচ্ছিন্ন একটা ঘটনা দিয়ে সবকিছুর বিচার করা উচিত। এ ধরনের দুর্ঘটনা বিশ্বের সব জায়গায়ই ঘটে। তাই এটা ভাবার সুযোগ নেই যে সবকিছু বা সবাই নিরাপদ নয়। এটা ভাবা ভুল যে মেয়েরা নিরাপদ নয়। শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, ভারতের সব জায়গায়ই মেয়েরা নিরাপদ। আমরা সেরা একটি জায়গায় বসবাস করি। একটি ঘটনা দিয়ে কারও এটা বিচার করা উচিত নয়,’ এমনটাই বলেছিলেন সৌরভ।
সৌরভের এমন মন্তব্যের পর চারদিক থেকে ছুটে আসে সমালোচনার তির। অভিনেত্রী স্বস্তিকা তো সৌরভকে একপ্রকার বর্জনই করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘আমি কোনো দিন “দাদাগিরি”তে যাইনি। যাওয়া হয়নি। আর কোনো দিন যাব না। দুর্ঘটনাবশত যাব না, সেটা নয়। নিজের ইচ্ছাতেই যাব না। ধর্ষণ ও খুন কোনো দুর্ঘটনা নয়। আর অবশ্যই এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনাও নয়। আমাদের সুন্দর দেশে কোনো বয়সের মেয়েরাই নিরাপদে নেই। কোনো রাজ্যেই নয়। এই দুই কাজ—ধর্ষণ এবং খুন ইচ্ছাকৃত। যারা করেছে, যারা করে, তারা ইচ্ছা করে করেছে বা করে। জেনেবুঝেই করেছে বা করে। যাদের এখনো ঘুম ভাঙেনি, তাদের আর ভাঙবে না।’
এমন চাপের মুখে অবশেষে নিজের বক্তব্য বদলাতে বাধ্য হয়েছেন সৌরভ। এবার তিনি বলেছেন, ‘গত রোববার আমি এটা (আর জি কর–কাণ্ড) নিয়ে কথা বলেছিলাম। আমি জানি না, আমার বক্তব্য কীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটা ভয়ংকর এক ঘটনা। অপরাধীর এমন শাস্তি হওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর এমনটা করতে না পারে। তদন্ত চলছে। আমি আশা করি, অপরাধী ধরা পড়বে এবং শাস্তি পাবে। মানুষ যেভাবে প্রতিবাদ করছে, বিশ্বের যেকোনো জায়গায় এমন ঘটনা ঘটলে এভাবেই মানুষ আওয়াজ তুলবে।’