ঘাটতি মেটাতে মালয়েশিয়ার সারওয়াকে প্রয়োজন দুই লাখ কর্মী

মালয়েশিয়ার দ্বীপরাজ্য সারওয়াকের পাম বাগানে প্রয়োজন দুই লাখ কর্মী। পাম বাগানের শ্রমের ঘাটতির কারণে বিদেশী শ্রমিকদের অনুমোদনের সময় ৯০ দিন থেকে কমিয়ে ৪৫ দিন করেছে সরকার। ৭ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির জাতীয় দৈনিক নিউ স্ট্রিট টাইমস।

রাজ্যের খাদ্য শিল্প, পণ্য ও আঞ্চলিক উন্নয়ন মন্ত্রী দাতুক সেরি ডাঃ স্টিফেন রুন্ডি এক বিবৃতিতে বলেছেন, এমন কিছু ক্ষেত্রেও অনুমোদন পেতে দুই বছর সময়ও লেগেছে।
ইন্দোনেশিয়ার পাঁচ দিনের কর্ম সফর শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমাদের আবেদন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা দরকার। মন্ত্রী, বিদেশী কর্মীদের আবেদন সংক্রান্ত বিশেষ করে সীমান্তের উভয় দিকে সমস্যা রয়েছে তা সমাধানে ইন্দোনেশিয়া সফর করেছেন ।

রুন্ডি বলেন, সারাওয়াকের ১.৬২ মিলিয়ন হেক্টর তেল পাম বাগানের জমির জন্য দুই লাখেরও বেশি শ্রমিকের প্রয়োজন। ইন্দোনেশিয়ায়, রুন্ডি সারাওয়াক ল্যান্ড কনসোলিডেশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন অথরিটি (সালক্রা) নিয়োগ এজেন্টদের সাথে আলোচনা করেছেন এবং তাদের এই বছরের নিয়োগের পরিকল্পনা সম্পর্কে ব্রিফ করেন।

তিনি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করতে ইন্দোনেশিয়ার আন্তর্জাতিক কর্মীবাহিনী পরিচালনার জন্য নিবেদিত একটি সমিতি Asosiasi Perusahaan Jasa Tenaga Kerja Indonesia (APJATI) এর প্রতিনিধিদের সাথেও দেখা করেন।

৭ জানুয়ারি , রুন্ডি ৬৫ জন ইন্দোনেশিয়ান শ্রমিকের প্রথম ব্যাচকে স্বাগত জানিয়েছেন। যারা শ্রী আমান এবং সারাটোকের সালক্রা বাগানে ফসল কাটার কাজ করবে। আগামী মাসের শুরুতে আরও এক হাজার শ্রমিক আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রুন্ডি বলেছেন, স্যালক্রার শ্রমিক ঘাটতি, যার জন্য ১,০০০ জনেরও বেশি শ্রমিকের প্রয়োজন, সারাওয়াকের সমস্ত তেল পাম বাগানকে প্রভাবিত করে এমন বিস্তৃত সমস্যাগুলি প্রতিফলিত করে। তিনি বলেন, ” আমাদের তেল পাম বাগানে শ্রমিকদের সত্যিই প্রয়াজন।”

২০১৪ সালে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সারাওয়াক প্রদেশে কৃষিখাতে পাঠানোর জন্য পাঁচ হাজার বাংলাদেশিকে চূড়ান্ত করেছিল। কিন্তু তখন দুই সরকারের মধ্যকার জিটুজি চুক্তিতে মালয়েশিয়া সরকারের আগ্রহের অভাবে শেষ পর্যন্ত পাঠানো যায়নি।

মালয়েশিয়ার সারাওয়াকে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগে চলে কূটনৈতিক তৎপরতা। ২০২৩ সালের ১২ জুলাই বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার মো: গোলাম সারোয়ার রাজ্যের প্রিমিয়ার (রাজ্য সরকার প্রধান) দাতুক পাটিঙ্গি তান শ্রী আবাং জোহারি তুন ওপেংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে দক্ষ কর্মী নিয়োগে রাজ্য সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে।
সারাওয়াক রাজ্যকে সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে এবং এক্ষেত্রে হাইকমিশন তথা বাংলাদেশ সরকারের পূর্ণ সহযোগিতার বিষয়ে আশ্বাস দেয় বলে জানান হাইকমিশনার।
এসময় বাংলাদেশ থেকে পেশাভিত্তিক দক্ষ মানবসম্পদ নিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণসহ অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক সব বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সারাওয়াক রাজ্যের সরকারপ্রধান তার দপ্তরের কর্মকর্তাদের তাৎক্ষিনকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের হাইকমিশনার তখন বলেছিলেন, চেষ্টা করলে সারাওয়াকে সীমিত সংখ্যক হলেও কর্মী পাঠানো সম্ভব। সারাওয়াকের একটা স্টিল মিলে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে ২০ জন কর্মী পাঠাতে সক্ষম হয়েছিল হাইকমিশন। এই স্টিল মিলে মোট ৬৩ জন বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন, তারা ভালো আয় করছেন। এছাড়া সারাওয়াকের একটি নামকরা প্ল্যানটেশনে এক হাজার কর্মী নিয়োগের ডিমান্ড ২০২৩ সালে সত্যায়ন করেছিল হাইকমিশন। তবে ডিমান্ডের বিপরিতে কতজন বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে তা জানতে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকতার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দ্বীপ রাজ্য সারওয়াকে পাম বাগানে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ চলমান রয়েছে, হাইকমিশন থেকে কয়েকটি কোম্পানীর এপ্রোভাল সত্যায়নও করেছে। এ পর্যন্ত কতজন বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বা সারাওয়াক প্রদেশে কতজন বাংলাদেশি রয়েছেন- এ বিষয়ে দূতাবাস বা মন্ত্রণালয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, সারাওয়াক মালয়েশিয়ার একটি আলাদা স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ যারা বিদেশি কর্মীদের জন্য নিজস্ব চুক্তি ও বিধিবিধান অনুসরণ করে। ইতপূর্বে সারাওয়াক থেকে কর্মীদের পেনিনসুলার মালয়েশিয়া ও অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়ার ইতিহাস রয়েছে। তাছাড়াও এটি পাহাড়ি এলাকা। ফলে বাংলাদেশি শ্রমিকরা সেখানে আর যেন পূর্বের ন্যায় কাজ ও অধিকার সংক্রান্ত সমস্যায় না পরেন সে দিকে বাংলাদেশের গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

তারা আরও বলছেন, সারাওয়াক প্রদেশে বাংলাদেশ মিশনের কোনো কার্যালয় নেই এমন কি অনারারি কনসালও নেই । ফলে সেখানে শ্রমিকরা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে দূতাবাসকে জানানো কঠিন হয়। বাংলাদেশী শ্রমিকদের চাকরি, আবাসন, চিকিৎসা, সম্পূর্ণ বিমা কভারেজ এবং অন্যান্য বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্য সারাওয়াক প্রদেশের সাথে বাংলাদেশের আলাদা কর্মসংস্থান চুক্তি করা খুবই জরুরি হয়েছে। এসব সম্পাদন নিশ্চিত করেই কর্মী প্রেরণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন ।

  • Related Posts

    গায়ের জোরে নগর ভবন বন্ধ করে বিএনপি আন্দোলন করছে: আসিফ মাহমুদ

    যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে গায়ের জোরে নগর ভবন বন্ধ করে বিএনপি আন্দোলন করছে, এমন মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। সোমবার বিকেলে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে উপদেষ্টা এ…

    Continue reading
    নদীবন্দরগুলোতে সতর্ক সংকেত, ১৪ জেলায় ঝড়ের আভাস

    আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার রাতের মধ্যে দেশের ১৪ জেলার ওপর দিয়ে ঝড়, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। ঝড়ের বেগ সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার হতে পারে। সোমবার নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া সতর্কবার্তায় এসব তথ্য…

    Continue reading

    গায়ের জোরে নগর ভবন বন্ধ করে বিএনপি আন্দোলন করছে: আসিফ মাহমুদ

    গায়ের জোরে নগর ভবন বন্ধ করে বিএনপি আন্দোলন করছে: আসিফ মাহমুদ

    নদীবন্দরগুলোতে সতর্ক সংকেত, ১৪ জেলায় ঝড়ের আভাস

    নদীবন্দরগুলোতে সতর্ক সংকেত, ১৪ জেলায় ঝড়ের আভাস

    বিমানের চাকা খুলে পড়ার ঘটনায় যা বলছে কর্তৃপক্ষ

    বিমানের চাকা খুলে পড়ার ঘটনায় যা বলছে কর্তৃপক্ষ

    গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনেই নিহত ১৫১

    গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনেই নিহত ১৫১

    হবিগঞ্জে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২ আহত অন্তত ১০ জন

    হবিগঞ্জে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২ আহত অন্তত ১০ জন

    ক্ষমা না চাইলে কুমিল্লায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা হাসনাতের বিরুদ্ধে” — সংবাদ সম্মেলনে সেলিম ভূঁইয়া

    ক্ষমা না চাইলে কুমিল্লায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা হাসনাতের বিরুদ্ধে” — সংবাদ সম্মেলনে সেলিম ভূঁইয়া

    চ্যাম্পিয়ন বার্সার শিরোপা উৎসব ম্লান করলো ভিয়ারিয়াল

    চ্যাম্পিয়ন বার্সার শিরোপা উৎসব ম্লান করলো ভিয়ারিয়াল

    ১৫০ কোটির পথে ছুটছে অজয়ের সিনেমা

    ১৫০ কোটির পথে ছুটছে অজয়ের সিনেমা

    কুয়ালালামপুর বাংলাদেশ হাইকমিশনে চিত্র-ভাস্কর্য শিল্পীদের সংবর্ধনা

    কুয়ালালামপুর বাংলাদেশ হাইকমিশনে চিত্র-ভাস্কর্য শিল্পীদের সংবর্ধনা

    গ্যাস লিকেজ থেকে আগুন: ছোট মেয়ের পরে মারা গেলেন মাও

    গ্যাস লিকেজ থেকে আগুন: ছোট মেয়ের পরে মারা গেলেন মাও