
ইসরায়েলি দৈনিক ‘হারেৎজ’ এই সপ্তাহে তাদের এক শিরোনামে লিখেছে —‘কূটনৈতিক সুনামি আসছে’। পত্রিকাটি সতর্ক করে জানিয়েছে, গাজায় ‘সম্পূর্ণ উন্মত্ততা’র বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে ইউরোপ।
সোমবার রাতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা এক যৌথ বিবৃতিতে গাজায় ইসরায়েলের ‘চরম’ আচরণের নিন্দা জানায়। তারা হুঁশিয়ারি দেয়—যদি সামরিক আগ্রাসন থামানো না হয় এবং মানবিক সহায়তার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা হয়, তবে ‘নতুন পদক্ষেপ’ নেওয়া হবে।
তারা পশ্চিম তীরে বসতি নির্মাণের প্রতিক্রিয়ায় ‘টার্গেটেড স্যাংশনের’ও হুমকি দিয়েছে।
এরপর ২৪টি অনুদানদাতা দেশ ইসরায়েল-সমর্থিত গাজা সহায়তা বিতরণ কাঠামোর নিন্দা জানায়।
যুক্তরাজ্য-ইসরায়েল সম্পর্কে ধাক্কা
মঙ্গলবার যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করে। ২০২৩ সালের যৌথ সহযোগিতা রোডম্যাপ পুনর্বিবেচনার ঘোষণা দেয়। ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এছাড়া, লন্ডনে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত টিপি হোতোভেলিকে ফরেন অফিসে তলব করা হয়। এতদিন এ ধরনের পদক্ষেপ সাধারণত রাশিয়া বা ইরানের মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রেই নেওয়া হতো।
ইউরোপের অবস্থান
ইইউর পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া কাল্লাস জানান, ইসরায়েলের সঙ্গে ২৫ বছর পুরোনো অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি পুনর্বিবেচনার পক্ষে ইইউ সদস্যদের ‘মজবুত সংখ্যাগরিষ্ঠতা’ রয়েছে।
এই প্রতিক্রিয়ার পেছনে মূল কারণ: গাজায় দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি অবস্থা এবং যুদ্ধ-পরবর্তী অবস্থার ভয়াবহ ইঙ্গিত। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেন, ইসরায়েলের কট্টরপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ গাজা পরিষ্কারের, ধ্বংসের এবং বাসিন্দাদের অন্য দেশে পাঠানোর যে ভাষা ব্যবহার করছেন, তা ‘চরমপন্থা, ভয়ানক, এবং অমানবিক’।
যদিও স্মোটরিচ গাজা যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বে নেই, তবুও তার মতো কট্টর নেতাদের প্রভাব থেকে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মুক্ত নন—এই অভিযোগই এখন প্রবল। অনেকেই মনে করছেন, নেতানিয়াহু যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন, ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জীবন বা ইসরায়েলের হাতে থাকা জিম্মিদের ভাগ্য উপেক্ষা করেই।
ট্রাম্পের নীরবতা
এত কিছুর মধ্যেও নীরব রয়েছেন একজন ব্যক্তি—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফরে তিনি কেবল বলেছিলেন, ‘অনেক মানুষ না খেয়ে আছে’। হোয়াইট হাউজ সূত্র জানায়, প্রেসিডেন্ট পরিস্থিতি নিয়ে বিরক্ত এবং ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধ করতে চান।
কিন্তু এরপরও, অনেক পশ্চিমা নেতা যখন ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, সেখানে ট্রাম্প কার্যত মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন।