সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল, পর্যটক যাতায়াত স্বাভাবিক ও চাহিদা মতো অবস্থান নিশ্চিত করার দাবিতে কাফনের কাপড় পরে সড়ক অবরোধ করেছেন দ্বীপের বাসিন্দারা। এসময় তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও সংগঠন নেতৃবৃন্দ।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) বেলা ১২টা থেকে কক্সবাজার শহরের কলাতলীর ডলফিন মোড়ে সড়ক অবরোধ করে তারা এসব কর্মসূচি পালন করছেন।
সড়কের দুই পাশে আটকরা পড়েছে যান চলাচল। ভোগান্তিতে পড়েছেন পর্যটন জোনে অবস্থান করা পর্যটক এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যবসায়ী এবং অধিবাসীরা।
তবে এসব বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসকের কক্ষে বৈঠক হয়েছে। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শেষ হওয়া বৈঠকে সিদ্ধান্ত মতে, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিক্ষোভ স্থলে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসে আজকের মতো বিক্ষোভ স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারীরা, এমনটি জানিয়েছেন কক্সবাজার পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী।
আন্দোলনের সমন্বয়ক দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, পরিবেশের দোহাই দিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসীকে ভাতে মারা ফন্দি আঁটা হচ্ছে। বছরে চারমাস আবহাওয়া শান্ত থাকে আর এসময় পর্যটক যায় দ্বীপে। বাকি আটমাস সময় পরিবেশ উন্নত করণে উদ্যোগ নেওয়া যায়। কিন্তু সেটা না করে, দ্বীপের ১৫ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা স্থবির করতে একপেশে সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বীপে পর্যটক যাওয়া সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমরা আগের মতো পর্যটক যাতায়াত স্বাভাবিক হওয়া কামনা করছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি মেনে নেবে না আমরা ততক্ষণ কক্সবাজার ছাড়ব না।
দ্বীপের আরে বাসিন্দা কেফায়েত খান মার্টিন বলেন, দুপুর থেকে চিত্রায়িত হওয়া দৃশ্যগুলো দেখলেই মনের ভিতর থেকে কেঁপে ওঠে। পেটের দায়ে রাস্তায় নেমেছে দ্বীপবাসীসহ সব সেক্টরের জনতা। আমাদের আয়-রোজগার বন্ধ করে দিয়ে এসি রুমে বলে-শোয়ে ঢংয়ের কথা শোনান উপদেষ্টা রিজওয়ানা। যতক্ষণ পর্যন্ত রিজওয়ানার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার হবে না, ততক্ষণ আন্দোলন চলবেই।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হঠাৎ হঠকারী সিদ্ধান্ত দিয়ে দ্বীপবাসীর রিজিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হয় পর্যাপ্ত খাবার দেন, নয়তো পর্যাপ্ত পর্যটক যাতায়াতের সুযোগ দিন।
দ্বীপে পর্যটক সেবায় থাকা আবদুল্লাহ নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, সীমিত পর্যটক যাতায়াত ও অবস্থানে সিদ্ধান্তে হুমকির মুখে পড়েছে দ্বীপটির ১৫ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। দ্বীপে আয় না থাকায় উপজেলা-জেলা ও বিভাগীয় শহরে পড়ালেখায় থাকা দ্বীপের শিক্ষার্থীদের খরচ যোগান দেওয়া যাচ্ছে না। তাই অনেককে বাড়ি ফিরে আসতে হচ্ছে। দ্বীপের মানুষ চারমাস পর্যটক সেবা দিয়ে আয় করে বাকি আটমাস চলে।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া আয়েশা আকতার বলেন, আমি পর্যটকদের জন্য খাবার রান্না করে সংসার সচল রাখতে অবদান রেখে আসছিলাম। কিন্তু মৌসুমের দুই মাস অতিক্রম হলেও দ্বীপে পর্যটক না আসায় আমার মতো অনেক পরিবার বেকায়দায় পড়ছে। জীবন সচল রাখার উপকরণ নেই ঘরে। তাই প্রয়োজনের তাগিদে রাস্তায় নেমেছি। আমাদের বাঁচতে দিন।
আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে বিক্ষোভে আসা ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (টুয়াক) সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, দ্বীপবাসীসহ লাখো মানুষের জীবিকায়নে চলমান একটি কার্যক্রম বিকল্প ব্যবস্থা না করে হঠাৎ হটকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া সমীচীন হয়নি। দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় কী করা যায়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বীপবাসী, পর্যটন সংশ্লিষ্ট এবং যাতায়াতকারী পর্যটক- সবার মাঝে সচেতনতা তৈরি করা যেত। নিয়ম না মানলে ধীরে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ করলে এতটা এফেক্ট পড়তো না। জীবিকায়ন বন্ধ করে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয় না।
পর্যটকবাহী জাহাজ পরিচালনাকারী হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প বিকাশে লক্ষ-কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে কক্সবাজার-টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে। এখানে নানা অনুষঙ্গ যুক্ত। মৌসুমকে উপলক্ষ করে সবকিছু গোছানো থাকে। এবারেরও সেভাবেই তৈরি ছিলাম আমরা। কিন্তু হঠাৎ সরকারে দ্বীপে পর্যটক সীমিতকরণ ও রাত্রিযাপনে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত সবাইকে বেকায়দায় ফেলেছে। এটা পুনর্বিবেচনার দাবি অবশ্যই যৌক্তিক।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিনবাসীর দাবির বিষয়টি আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি সবার জন্য মঙ্গলজনক একটি নির্দেশনা আসবে।