চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে এক দশকে দুর্ঘটনায় ১৪০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন ইয়ার্ডে এসব দুর্ঘটনায় ঘটে। আন্তর্জাতিক এনজিও জোট এনজিও শিপব্রেকিং প্লাটফর্ম সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডে ফৌজদারহাট থেকে কুমিরা পর্যন্ত সাগর উপকূলে গড়ে উঠেছে দেশের একমাত্র জাহাজ ভাঙা শিল্প। এখানে দেড় শতাধিক শিপব্রেকিং ইয়ার্ড। এই শিল্প থেকে প্রতিবছর ২৫ হাজার টনেরও বেশি লৌহার যোগান দেওয়া হয় নির্মাণ শিল্পে। এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে লক্ষাধিক মানুষের। এ খাত থেকে প্রতিবছর বার্ষিক প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে সরকার। এসব কারণে এটিকে ভাসমান লৌহখনিও বলা হয়ে থাকে।
এদিকে ব্যাপক সম্ভাবনাময় জাহাজ ভাঙা শিল্প নিয়ে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী হলেও মাঝে মধ্যেই এখানে ঘটে নানা দুর্ঘটনা। কখনো জাহাজের প্লেট চাপা, কখনো দাহ্য পদার্থ থেকে বিষ্ফোরনের মতো এসব ঘটনায় প্রাণহানি বা অঙ্গহানিও হয়।
এসব কারণে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) শর্ত দেয় দুর্ঘটনা কমাতে প্রত্যেকটি শিপব্রেকিং ইয়ার্ড হতে হবে গ্রিনইয়ার্ড।
এছাড়া ২০১৯ সালে করোনা মহামারির পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দর বৃদ্ধি, লোহার দরপতনসহ নানা কারণে জাহাজ ভাঙা শিল্প মালিকরা লোকসানের শিকার হতে থাকেন। এ শিল্পে এলসি খোলা বন্ধ করে দেয় অধিকাংশ ব্যাংক। ফলে শিপইয়ার্ডগুলোতে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি একেবারেই কমে আসে।
জাহাজ ভাঙা শিল্প নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করা সংগঠন এনজিও শিপব্রেকিং প্লাটফর্ম সূত্রে জানা গেছে, গত এক দশক অর্থাৎ ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জাহাজ ভাঙা শিল্পে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৪০ জন।
এরমধ্যে ৭ সেপ্টেম্বর সীতাকুণ্ডের শীতলপুরস্থ এস.এন করপোরেশন শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে ওয়েল ট্যাংকার বিস্ফোরণে ১২ শ্রমিক দগ্ধ হন। ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন মারা যান। তাদের নাম আহাম্মদ উল্লাহ (৩৭) ও খায়রুল ইসলাম (২১)।
এ ঘটনায় সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন সীতাকুণ্ড থানার ওসি মো. কামাল উদ্দিন এবং কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ মো. মামুন।
এর আগে ২০২৩ সালে দুর্ঘটনায় মারা যান পাঁচজন, ২০২২ সালে ১০ জন, ২০২১ সালে ১৪ জন, ২০২০ সালে ১১ জন, ২০১৯ সালে ২২ জন, ২০১৮ সালে ২০ জন, ২০১৭ সালে ১৫ জন, ২০১৬ সালে ১৭ জন, ২০১৫ সালে ১৬ জন এবং ২০১৪ সালে ৯ জনসহ মোট ১৪০ জন মারা যান।
এসব দুর্ঘটনার বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে কলকারখানা পরিদর্শকের কার্যালয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।
তবে বাংলাদেশ শিপব্রেকার্স অ্যান্ড রি-সাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, হতাহতের বিস্তারিত তথ্য এখন হাতে নেই। বিভিন্ন সংস্থা দুর্ঘটনায় হতাহতের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ইয়ার্ডে স্বাভাবিক মৃত্যুগুলোকেও অপমৃত্যু হিসেবে চিহ্নিত করে। কেউ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে, অসুস্থ হয়ে মারা গেলে বা আহত হলে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করে। এ কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ভুল হয়। তাই ১০ বছরে ১৪০ জন মারা গেছে বলেও আমরা এ মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলতে পারবো না।