কী বৈপরীত্য! বৈপরীত্য তাঁর বয়স আর পারফরম্যান্সে, বৈপরীত্য তাঁর ক্যারিয়ার এপিটাফ–আলোচনা আর স্বপ্নে!
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বয়স, ক্যারিয়ারের মধ্যগগণ, ক্যারিয়ারের সায়াহ্নবেলা, স্বপ্ন আর ধাপে ধাপে পারফরম্যান্সের গ্রাফ বিশ্লেষণ করলে অনেক বৈপরীত্যই চোখে পড়বে তাঁর ভক্ত বা ফুটবলপ্রেমীদের কাছে।
জার্মানিতে গত জুন ও জুলাই মাসে ২০২৪ সালের ইউরো থেকে যে মাইলফলকের খুব কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন রোনালদো, গত পরশু সেটাতে পৌঁছালেন রোনালদো। উয়েফা নেশনস লিগে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩৪ মিনিটে ক্যারিয়ারের ৯০০তম গোলটি করলেন পর্তুগিজ তারকা। নুনো মেন্দেসের ক্রস থেকে গোলটি করে রোনালদো একটু আবেগপ্রবণই হয়ে পড়েছিলেন। পর্তুগালের ২–১ ব্যবধানের জয়ে এটিই ছিল দলের দ্বিতীয় গোল।
ফিফার হিসাব অনুযায়ী এই গোলে ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে ৯০০ গোল করার কীর্তি গড়েছেন রোনালদো। এ গোলের আগে যেমন বলেছেন, রোনালদো পরেও বললেন—তাঁর স্বপ্ন এখন প্রথম ফুটবলার হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ফুটবলে ১০০০ গোল করবেন।
রোনালদো কি পারবেন তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে? এর হিসাব করতে গিয়েই রোনালদোর ক্যারিয়ার, পারফরম্যান্স, ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা আর বয়সের বৈপরীত্যগুলো সামনে চলে এসেছে। রোনালদোর বয়স এখন ৩৯ বছর। ফুটবল বিশ্বে আলোচনা—কবে ফুটবলকে বিদায় বলবেন পর্তুগিজ তারকা? তিনি নিজেও ইদানীং অবসর নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন, যেটা তিনি কদিন আগেও একদমই বলতে চাইতেন না। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে আসার আগেই যেমন অবসর নিয়ে বলেছেন, কবে অবসর নেবেন, সেটা কাউকে জানিয়ে নেবেন না রোনালদো।
এ বয়স আর এমন আলোচনার মধ্যেই রোনালদো অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ম্যাচপ্রতি বেশি গোল করে যাচ্ছেন। যেটা তিনি ক্যারিয়ারের মধ্যগগণেও করতে পারেননি। রোনালদো ৯০০ গোলের মাইলফলকে পৌঁছাতে খেলেছেন ১২৩৪ ম্যাচ। ম্যাচপ্রতি তাঁর ০.৭২। ৮০০ থেকে ৯০০ গোল করতে তিনি সময় নিয়েছেন প্রায় ৩ বছর। ৮০০তম গোলটি করেছিলেন ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। তখনো তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে খেলতেন।
কিন্তু ২০২২ সালের শুরুর দিকেই রোনালদো ইউনাইটেডে ব্রাত্য হয়ে পড়েন। অনেকেই তখন তাঁর ক্যারিয়ারের এপিটাফ লিখে ফেলেছিলেন। তবে রোনালদো কি এত সহজে ফুরিয়ে বা হারিয়ে যাওয়ার মানুষ! তাই তো নিজের ক্যারিয়ার বাঁচাতে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের পর নাম লেখালেন সৌদি আরবের ফুটবলে, যোগ দিলেন আল নাসরে।
সৌদি আরবের ক্লাবটিতে গোল করতে শুরু করলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেরা গড়ে। ক্লাবটিতে ৭২ ম্যাচে তাঁর গোল ৬৮টি, ম্যাচপ্রতি ০.৯১ গোল। এ ছন্দটাই হয়তো তাঁকে হাজার গোলের মাইলফলকের স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে রিও ফার্ডিনান্ডের সঙ্গে কথপোকথনে রোনালদো তাঁর স্বপ্ন নিয়ে বলেছেন, ‘আমি ১০০০ গোল করব। আমি এই মাইলফলকে পৌঁছাতে চাই। আমার বয়স তখন কত হবে? সম্ভবত ৪১ বছর, আমি ঠিক জানি না…আমি যদি পৌঁছাতে পারি, এটাই হবে ফুটবলে আমার সবচেয়ে বড় মাইলফলক। সেখানে পৌঁছানোটাই আমার চ্যালেঞ্জ।’
কবে বা কয় ম্যাচের মধ্যে মাইলফলকটিতে পা রাখতে চান, তা নির্ধারণ করেননি রোনালদো। কিন্তু ফার্ডিনান্ডের সঙ্গে তাঁর আলোচনায় একটা বিষয় পরিষ্কার, এটা তিনি করতে চান ৪১ বছর বয়সের মধ্যে। হিসাব বলছে, আল নাসরে গোলগড় যদি তিনি ধরে রাখতে পারেন, তাহলে ১০০০ গোলের মাইলফলকে পৌঁছাতে তাঁর তিন মৌসুম লাগবে। তাঁর ক্যারিয়ারের এখনকার অঙ্কের হিসাব বলছে, ১০০ গোল করতে রোনালদোর ১১০ ম্যাচ লাগবে। সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসর এক মৌসুমে কমপক্ষে ৪৫টি ম্যাচ খেলে। সৌদি কাপ আর এশিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নিতে পারলে সংখ্যাটা আরও বেশি।
এর সঙ্গে রোনালদো যদি পর্তুগাল দলেও খেলে যান, আগামী তিন বছরে উয়েফা নেশনস লিগ, বিশ্বকাপ বাছাই, এমনকি ২০২৬ বিশ্বকাপের ম্যাচও পাবেন। এখানে আরেকটা পরিসংখ্যান দেওয়া যেতে পারে, যেটা তাঁর সম্ভাব্য ১০০০ গোলের রেকর্ডের পক্ষেই কথা বলে। ৩০ বছর বয়সের পর পর্তুগিজ তারকার গোলের গ্রাফটা আরও ঊর্ধ্বমুখী! ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর ৩০তম জন্মদিনের আগে রোনালদোর গোল ৭১৮ ম্যাচে ৪৬৩টি। ত্রিশের পর তিনি ৪৩৭ গোল করেছেন ৫১৮ ম্যাচে। ৯ বছরে তাঁর ম্যাচপ্রতি গোল ০.৮৩। এই গড়ে গোল করলে ১০০০ গোলের মাইলফলকে পৌঁছাতে রোনালদোর ম্যাচ লাগার কথা ১২০টি।
তাহলে হিসাব কী বলছে? রোনালদোর শারীরিক যে সক্ষমতা, তিনি আর তিন বছর তো খেলবেনই। তিন বছরে ১১০ থেকে ১২০ ম্যাচ পাবেন। এই ১২০ ম্যাচে যদি কাছাকাছি চলে যান, তাহলে তাঁর যে মনের জোর, আরেকটি মৌসুম খেলে নিজের স্বপ্নটা পূরণ না করে কি ছাড়বেন রোনালদো!