
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে কথা উঠলেই চলে আসে শ্রমিক নির্যাতন ও সিন্ডিকেটের চিত্র। দেশটির শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য বারবার বন্ধ হওয়ার পেছনে শুধু শ্রমিক নির্যাতন ও সিন্ডিকেট নয়, বৃত্তের বাইরে রয়েছে ভয়ংকর ষড়যন্ত্র।
৫ আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে বিগত সরকারের পতনের পরও মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ২৪ হাজার কোটি টাকা লোপাটের মামলা হলেও মূলহোতারা এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই সিন্ডিকেটের মূল হাতিয়ার ছিল মালয়েশিয়ার কর্মী নিয়োগের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এফডব্লিউসিএমএস।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই সিস্টেমটিকে ব্যবহার করে রুহুল আমিন স্বপন ও দাতুশ্রী আমিন কর্মী নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। যদিও এফডব্লিউসিএমএস মূলত মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনলাইন সাপোর্ট দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ একটি কোম্পানি। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো, একই পদ্ধতিতে মালয়েশিয়া আরও ১৪টি দেশ থেকে কর্মী নিলেও, শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা সীমিত করে সিন্ডিকেট তৈরির সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
সিন্ডিকেটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য রুহুল আমিন স্বপন ও দাতুশ্রী আমিন প্রতিটি রিক্রুটিং এজেন্সির কাছ থেকে প্রথমে ৫ কোটি টাকা করে নিয়েছেন, যা পরে ১৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।
সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বরাবর সোচ্চার ও ২৪ হাজার কোটি টাকা লোপাটের বিরুদ্ধে মামলাকারী রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স আফিয়া ওভারসিস (আর এল-১০১০) এর স্বত্বাধিকারী আলতাব খান, বর্তমানে কারা সিন্ডিকেট করার পাঁয়তারা করছেন এ মর্মে তিনি বলেন, ‘রুহুল আমিন স্বপন, দাতোশ্রী আমিন, মো. নুর আলী, ওয়ান ইলেভেনের হোতা জেনারেল (অব:) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও নিজাম হাজারী গং পূর্বের কায়দায় আওয়ামী লীগের পলাতক বিভিন্ন নেতা যারা মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত তারাসহ বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কিছু নেতাকে সম্পৃক্ত করে সিন্ডিকেট করার অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছে সিন্ডিকেট ছাড়া মালয়েশিয়া কর্মী নেবে না, যা মোটেই সত্য নয় বরং তারাই বিভিন্নভাবে নির্বিঘ্নে কর্মী পাঠানোর পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
তিনি আরও বলেন, রুহুল আমিন স্বপন, দাতোশ্রী আমিন, মো. নুর আলী, ওয়ান ইলেভেনের হোতা জেনারেল (অব:) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও নিজাম হাজারী গং একটি সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্র। তারা দেশের উন্নয়নের অংশীদার প্রবাসী শ্রমিকদের বিদেশে চাকরি দেওয়ার জন্য সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট মাফিয়া চক্র গড়ে তুলে বিদেশগামী শ্রমিকদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার স্থলে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ দেশে ও বিদেশে গড়ে তুলেছে। সরকার স্বীকৃত দুই হাজারের অধিক রিক্রুটিং এজেন্ট থাকা সত্ত্বেও এ মাফিয়া সিন্ডিকেট চক্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করে জঘন্য অপরাধ করেছে।
এদিকে এই সিন্ডিকেট ভাঙ্গা গেলে মালয়েশিয়ায় মাত্র দেড় লাখ টাকায় শ্রমিক পাঠানো সম্ভব বলে জানিয়েছে বায়রার একটি প্রতিনিধি দল।
ব্যবসায়ী হারুন-উর-রশিদ বলছেন, যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেড় থেকে দুই লাখের মধ্যে একজন শ্রমিক পাঠানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। কিন্তু সিন্ডিকেট নিয়ে গত এক দশক ধরে এত বড় কেলেঙ্কারি হবার পরও এখনো সেটা ভাঙ্গা সম্ভব হয়নি। যখনই মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর সম্ভাবনা দেখা দেয়, চুক্তি হয়, তখনই ওই সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়।
এ বিষয়ে গ্লোবাল লেবার অর্গানাইজেশন (জিএলও) এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রধান, ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ বলেন, যখন বিশ্ব অর্থনীতি অস্থির এবং পশ্চিমা বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকার অনিশ্চিত, তখন বাণিজ্য এবং শ্রম রপ্তানি উভয়ের জন্য এশিয়ান গন্তব্যগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই প্রেক্ষাপটে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় চালু করার বিষয়ে অব্যাহত অচলাবস্থা গভীরভাবে দুর্ভাগ্যজনক। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সদিচ্ছা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করে, যা কাঠামোগত সংস্কারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ- অভিবাসী শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। স্থায়ী শ্রমিক সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা কেবল অপব্যবহার রোধ এবং আইনি চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ সর্বাধিক করার জন্য অপরিহার্য নয়, এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় মানদণ্ডের সঙ্গে শ্রম অধিকারের সমন্বয়ের জন্যও একটি পূর্বশর্ত। এই ধরনের সংস্কারগুলো শেষ পর্যন্ত আসিয়ান সদস্যপদ অর্জনের জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করবে এবং একটি বিশ্বস্ত আঞ্চলিক অংশীদার হিসেবে জড়িত হওয়ার জন্য তার প্রস্তুতি নিশ্চিত করবে।
জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের বৈদেশিক শ্রমবাজারের ইতিহাস বেশ পুরোনো, প্রায় পঞ্চাশ বছরের কাছাকাছি। এর মধ্যে যেসব দেশ জনশক্তি রপ্তানির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয় তার মধ্যে অন্যতম মালয়েশিয়া। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে শ্রমিক যাওয়া শুরু করে ১৯৭৬ সাল থেকে।
বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানির তালিকায় চতুর্থ দেশ হিসেবে রয়েছে মালয়েশিয়া। কিন্তু এরপরও এদেশের শ্রমবাজার নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে গেছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন সময় দফায় দফায় বন্ধ হয়ে যায় সেখানকার বাংলাদেশের শ্রমবাজার। সর্বশেষ গত বছরের জুন থেকে আবারও বন্ধ হয় দেশটির বাংলাদেশসহ সব দেশের শ্রমবাজার।
১৯৭৬ সাল থেকে বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলেও মালয়েশিয়ার বাজারে আরও দুই বছর পর শুরু হয় এ যাত্রা। ১৯৭৮ সালে প্রথম মাত্র ২৩ জন শ্রমিক মালয়েশিয়া যায়। বাংলাদেশের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ওয়েবসাইটে এ তথ্য পাওয়া যায়।
তবে, বাংলাদেশের শ্রমবাজারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, জনশক্তি রপ্তানি বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আনুষ্ঠানিকভাবে দুই দেশের সাথে জনশক্তি নিয়োগের চুক্তি হয় ১৯৯২ সালে। শ্রমবাজারের যাত্রা শুরুর পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২০টিরও বেশি দেশের পরিসংখ্যান এই ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। ওয়েবসাইটের তথ্যমতে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে মালয়েশিয়া। সেখানে এ পর্যন্ত শ্রমিক গেছে ১৪ লাখেরও বেশি। মালয়েশিয়ায় রয়েছে বাংলাদেশের নয় শতাংশের বেশি শ্রমবাজার।
বিএমইটির ওয়েবসাইটে যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৯৭৮ সালে সর্বপ্রথম ২৩ জন শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যায়। পরের বছর কোনো শ্রমিক মালয়েশিয়ায় না গেলেও ১৯৮০ সালে মাত্র তিনজন শ্রমিক সে দেশে যায়। এরপরের দুই বছর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে যায়নি কোনো বাংলাদেশি। দুই বছর বাদে আবার ১৯৮৩ সালে ২৩ জন মালয়েশিয়ায় যায়। এরপরে দুই বছর আবার কোনো শ্রমিক যায়নি এই দেশটিতে। কিন্তু ১৯৮৬ সালে সর্বোচ্চ ৫৩০ জন বাংলাদেশি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে যায়।
এই ওয়েবসাইটের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত অনিয়মিতভাবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের বাংলাদেশিদের যাতায়াত চলে। তবে, ১৯৯০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এই দেশের বাজারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের যাত্রা বৃদ্ধি পায়।
২০০৮ সালে বন্ধ হওয়া শ্রমবাজার দীর্ঘ আট বছর পর চালু হয়েছিল ২০১৬ সালে। এরপর দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের অভিযোগে ফের ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর নতুন সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে সেই বাজার খুলতে সময় লেগেছিল আরও তিন বছর। ২০২২ সালের আগস্টে দেশটিতে আবারও বাংলাদেশি কর্মী যাওয়া শুরু হয়। সে হিসেব ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই ৮ বছরে মালয়েশিয়া আসে প্রায় ৮ লাখ ১১ হাজার ৮৪৫ জন কর্মী।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে মালয়েশিয়াস্থ কয়েকটি কোম্পানির মালিক ও কূটনৈতিক সূত্র বলছে, চলতি বছরের জুনের আগে পরে খুলতে পারে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। সে হিসেবে সাবেক সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট করে হাজার কোটি টাকা লোপাটকারী সিন্ডিকেটের মূলহোতারা আবারো হয়ে উঠেছে সক্রিয়। যার প্রমাণ মেলে গত ৭ এপ্রিল ২০২৫, দেশটির ফ্রি মালয়েশিয়া টুডেতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে।
পত্রিকাটি অভিবাসী অধিকারকর্মী অ্যান্ডি হলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ২০২১ সালের চুক্তি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। তার দাবি, ‘চুক্তির যেসব ধারা সিন্ডিকেটদের পক্ষে সুযোগ তৈরি করেছে, সেগুলো বাতিল না করলে এই অনিয়ম কখনোই বন্ধ হবে না।’
কথায় আছে, হতভাগা যে দিকেই চায়, সেই দিকেই সাগর শুকায়। গত ১২টি বছর এ কথাটি যেন মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের জন্য একান্তই প্রযোজ্য। ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ ১১ হাজার ৮৪৫ জন বাংলাদেশি কর্মী এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় এসেছেন এবং প্রত্যেকের কাছ থেকে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করেছে এই সিন্ডিকেট চক্রটি। যার গুণফল দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকারও বেশি। এই একচেটিয়া ব্যবসা করতে পারা সিন্ডিকেটটির ফলে অভিবাসন খরচ আকাশচুম্বী হওয়ায় বহু সাধারণ মানুষ হয়েছে সর্বস্বান্ত।
শুধু তাই নয়, প্রায় ২ হাজার ৫ শত বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি এজেন্সি সিন্ডিকেটের অন্তর্ভুক্ত থাকায় অন্যরা কর্মী পাঠানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ফলে একদিকে যেমন দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের সুযোগ হয়েছে, তেমন বারবার বন্ধ হয়েছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।
বারবার কেন এ সিন্ডিকেট গড়ে উঠছে এমন প্রশ্নের জবাবে, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি বায়রার এক নম্বর সদ্য-সাবেক জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (আরএল নং-৪৫২) এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম এক অডিও বার্তায় জানিয়েছেন, ‘মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে বারবার সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছিল এবং বারবার শ্রমিক বাজার বন্ধ হয়েছিল। বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপনের নেতৃত্বে সাবেক সরকারের মন্ত্রী, এমপিরা এবং নেতারা এই সিন্ডিকেটে যুক্ত ছিল এবং এই সিন্ডিকেট চক্র বাংলাদেশ থেকে যত কর্মী মালয়েশিয়ায় গিয়েছে প্রত্যেক কর্মী থেকে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত চাঁদা নিয়েছে। তার মানে এই দুবারে প্রায় ৮ লাখ ১১ হাজার শ্রমিক গিয়েছে এবং প্রত্যেক কর্মী ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা করে বাধ্যতামূলকভাবে অতিরিক্ত তাদের দিয়েছে। সে হিসেবে এ সিন্ডিকেটটি প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা এখান থেকে জালিয়াতি করেছে। যেখানে সরকারের মন্ত্রী, এমপি এবং আমলারা ছিল এবং যেখানে সাবেক সরকারের নেতারা এই সেক্টরের ৯৫ শতাংশ সদস্যকে বঞ্চিত করেছে, কর্মীদের বিভিন্নভাবে প্রতারিত করেছে এবং অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ নিয়েছে। সেই একই সিন্ডিকেট কি আবারও হবে? এটা আমরা মনে করি এই সিন্ডিকেট যদি হয় এই সরকারকে সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য, সরকারকে বিব্রত করার জন্য এই সিন্ডিকেট চক্র এই একইভাবে আবার সিন্ডিকেট করার অপচেষ্টা করছে। আসলে তাদের বিচার না হওয়ার কারণেই তারা বারবার সিন্ডিকেট করার অপচেষ্টা করছে বলে বলছিলেন ফখরুল।
এদিকে এই সিন্ডিকেটটির প্রধান অস্ত্র বেস্টিনেটের ‘এফডব্লিউসিএমএস’ সিস্টেমটির স্বীকৃতিপত্র (এলওএ) ইস্যু করার জন্য অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে দেশটির ‘দি পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি’ (পিএসি)। চলতি বছরের গত ৮ এপ্রিল মালয়েশিয়ার সরকারি নিউজ এজেন্সি বারনামা এমনটি জানিয়েছে।
এদিকে মালয়েশিয়ার ম্যানপাওয়ার ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত তিন মাস আগে যেখানে ইপিএলকেস এর মাধ্যমে দ্রুত ভিসা রিনিউ করা যেত সেখানে এফডব্লিউসিএমএস এর মাধ্যমে এখন অতিরিক্ত রিঙ্গিত দিয়েও সময় লাগছে এক মাসেরও বেশি। এছাড়া এই সিন্ডিকেটটির নানা অপতৎপরতার কারণে বহু নিয়োগকর্তা সিন্ডিকেট ফি পরিশোধ করতে না পেরে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে আগ্রহ হারিয়েছেন।
এরই মধ্যে আবারো শুরু হয়েছে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার তৎপরতা। মালয়েশিয়াস্থ ম্যানপাওয়ার ব্যবসায়ী ও কূটনৈতিক সূত্র বলছে, মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার ইস্যুতে চলতি বছরের ১৫ মে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, ড. আসিফ নজরুল ও মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মানবসম্পদমন্ত্রী সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা এবং এর পরে ২২ ও ২৩ মে, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে নিরাপদ অভিবাসন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণসহ তৃতীয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই বৈঠককে ইস্যু করে বর্তমানে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো একটি উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারের পক্ষে সোচ্চার হয়েছে।
তাদের দাবি, সিন্ডিকেট ভেঙে দিলে কর্মীরা কম খরচে বিদেশ যেতে পারবে এবং সব বৈধ এজেন্সিগুলো কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাবে। একইসঙ্গে, শ্রমবাজার স্থিতিশীল থাকবে এবং বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।
মালয়েশিয়ায় কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে বিএমইটির তত্ত্বাবধানে একটি ডেটা ব্যাংক তৈরির সুপারিশ করেছেন, যেখান থেকে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কর্মী সংগ্রহ করতে পারবে। মেডিকেল ও ভিসার খরচ ধাপে ধাপে বিএমইটির মাধ্যমে পরিশোধ হলে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সুযোগ থাকবে না। এতে ৫ লাখ টাকার বিপরীতে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যেই কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে। ফলে স্থিতিশীল হবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।
এখন দেখার বিষয়, আবারো সিন্ডিকেটের কাছে পরাজিত হয় কি না মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার, না কি বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার যৌথ উদ্যোগে শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষিত হয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যথাযথ উদ্যোগে? ভুলে গেলে চলবে না, শ্রমিক হিসাবে যারা ভাগ্যান্বেষণে প্রবাসে পাড়ি জমান, তাদের অধিকাংশই দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অংশ। এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীই হাড়ভাঙা পরিশ্রমের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশকে এগিয়ে দিচ্ছে। কাজেই সরকারের অবিলম্বে এদিকে নজর দেওয়া দরকার বলে মনে করেন অনেকে। একইসঙ্গে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু শ্রমিকরা যেন কোনোভাবেই প্রতারণার শিকার না হন, তা-ও নিশ্চিত করা জরুরি। সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সবার।