মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতিতে যেতে না পারা কর্মীদের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, এখন একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, প্রতিশ্রুতি মানেই কিন্তু নিশ্চিত না। আমরা মালয়েশিয়ায় আমাদের হাইকমিশন এবং আমাদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই প্রতিশ্রুতি কার্যকর করতে যত দ্রুত সম্ভব প্রচেষ্টা চালাবো। আজ রাতে মালয়েশিয়ার হাইকমিশনারের সঙ্গে মিটিং আছে, সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করবো। আমরা একটি রোডম্যাপ তৈরি করবো।
শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের বিজয় একাত্তর হলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের সুরক্ষা ও কল্যাণ বিষয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এবং মালয়েশিয়ার পার্কেসোর মধ্যে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যারকে বলেছিলাম মালয়েশিয়া বিষয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য। প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এই ১৮ হাজার বাংলাদেশিকে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। এটা মানে এই নয় যে নতুন কর্মী। এই ১৮ হাজার মানে নতুন চাকরি না। ১৭ হাজারের কিছু বেশি কর্মী যাদের সব কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও গত ৩১ মের আগে। তাদের সুযোগ দেওয়া হবে।
আসিফ নজরুল আরো জানান, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আমরা তিনটি বিষয় বলেছি। একটা হচ্ছে বন্ধ বাজার ওপেন করা, যেন নতুন করে কর্মী যেতে পারে। দ্বিতীয় কর্মী পাঠানো বাংলাদেশের সকল রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোতে সবার জন্য ওপেন করে দেওয়া, এবং রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির জন্য ট্রান্সপারেন্ট বা স্বচ্ছ করা। আর কর্মীদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে বলেছি।
প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আরো বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে যেসব কর্মী ভাই-বোন যাচ্ছেন তাদের জন্য বিমানবন্দরে আলাদা স্পেশাল লাউঞ্জের ব্যবস্থা করবো। আমরা জায়গা ঠিক করেছি। সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করি দুই সপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাবে। লাউঞ্জ হলে প্রবাসী কর্মী ভাই-বোনদের যন্ত্রণা অনেক লাঘব হবে। এর পাশাপাশি অন্যান্য যে ভিআইপি সুবিধা, সেগুলোও থাকবে। বিমানবন্দরে প্রবেশের মুহূর্ত থেকে প্লেনে ওঠার আগ পর্যন্ত যে লাউঞ্জ থাকে সেই পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে তাদের সঙ্গে একজন লোক থাকবে সহায়তার জন্য।
ড. আসিফ নজরুল দুদেশের মধ্যে সই হওয়া চুক্তিকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের সুরক্ষা ও কল্যাণ সুনিশ্চিত করতে ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রবাসী কর্মীদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রবাসীরা যখন বিদেশে থাকেন তখন তারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রত্যেকেই বাংলাদেশের একেকটি পতাকা হয়ে কাজ করেন।
তিনি আরো বলেন, প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকার পাশাপাশি আর্থ সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। তাঁদের যথাযথ মূল্যায়ন, প্রবাসী কর্মী ও তাঁদের পরিবারের কল্যাণমূলক সুরক্ষা নিশ্চিত করা আবশ্যক। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এ কাজটি নিরলসভাবে করে যাচ্ছে ।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ রুহুল আমিন-এর উপস্থিতিতে চুক্তিতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মোঃ হামিদুর রহমান এবং মালয়েশিয়ার পারকেসো (PERKESO)’র মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আজমান আজিজ মোহাম্মদ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সই করেন।