
মালয়েশিয়ায় নতুন করে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের আগে নিয়োগ পদ্ধতি সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে দেশটির মানবাধিকার সংস্থা তেনাগানিতা। সংস্থাটি বলেছে, পদ্ধতিগত ব্যর্থতাগুলোর সমাধান না করে নতুন করে শ্রমিক নিয়োগ করলে চলমান মানবিক সংকট আরও বাড়বে।
বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবার খুলছে। আগামী কয়েক বছরে দেশটি বাংলাদেশ থেকে ১২ লাখ শ্রমিক নেবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ হাজার জন বিনা খরচে যেতে পারবে।
এ নিয়ে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনাও হয়েছে। শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু হওয়ার খবরের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) পুত্রজায়ায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন মানবাধিকার সংস্থা তেনাগানিতার নির্বাহী পরিচালক গ্লোরেন দাস।
এ সময় তিনি শ্রমিক নিয়োগের উপর সরকারি স্থগিতাদেশ এবং নতুন করে শ্রমিক নিয়োগের পূর্বে নিয়োগ পদ্ধতির সম্পূর্ণ কাঠামোগত সংস্কারের আহ্বান জানান। এক বিবৃতিতে তেনাগানিতা মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ চুক্তির সম্পূর্ণ প্রকাশ এবং আটকে পড়া শ্রমিকদের অবিলম্বে বৈধকরণ ও চাকরির ব্যবস্থা করার দাবি জানায়।
গ্লোরেন দাস বলেন, ‘মালয়েশিয়ার এখন নতুন করে শ্রমিক নিয়োগের প্রয়োজন নেই, বরং একটি সত্যিকারের আত্মসমীক্ষার প্রয়োজন। সেই পদ্ধতিগত ব্যর্থতাগুলোর একটি সমীক্ষা দরকার যা ব্যাপক শোষণকে অব্যাহত রাখতে সক্ষম করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রায় পাঁচ লক্ষ অভিবাসী শ্রমিক মালয়েশিয়ায় আনা হয়েছে, যার মধ্যে সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি বাংলাদেশি। এদের অনেকেই কাজ হারিয়েছেন, বেতন পাননি। এদের মধ্যে অনেকে মালয়েশিয়া ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, অনেকে মিথ্যা আশ্বাসের প্রলোভনে পড়েছেন, নিয়োগের জন্য ২৫ হাজার রিঙ্গিত পর্যন্ত পরিশোধ করেছেন। এজন্য তাদের ঋণ করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তারা বেকার, বেতনহীন ও গৃহহীন এবং প্রতিনিয়ত গ্রেফতারের ঝুঁকিতে পড়েছেন।
তিনি জানান, তেনাগানিতা কমপক্ষে ১৫০টি কোম্পানিকে চিহ্নিত করেছে যারা প্রকৃত ব্যবসা পরিচালনা না করেও শ্রমিক নিয়োগে কোটা পেয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অনুমোদন ছাড়া এই শ্রমিকরা অস্তিত্বহীন চাকরির জন্য মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারত না। কর্তৃপক্ষেরও এর দায় নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার সরকার বাংলাদেশ থেকে নতুন কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণার পরপরই তেনাগানিতার পক্ষ থেকে এই আপত্তি এলো। এখন দেখার বিষয়, মানবাধিকার সংগঠনটির এই উদ্বেগকে সরকার কতটা গুরুত্ব দেয় এবং কর্মীদের অধিকার রক্ষায় কী পদক্ষেপ নেয়।