অভিনেতা বুলবুল আহমেদকে নিয়ে সিনেমা বানানো হবে। দেখা যাবে তার বিভিন্ন বয়সের চরিত্র। সেগুলোতে কে বা কারা অভিনয় করবেন? বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) নায়ক বুলবুল আহমেদের ৮৫তম জন্মদিনে সেসব জানতে চাওয়া হয় মেয়ে ঐন্দ্রিলার কাছে।
বুলবুল আহমেদ ১৯৪১ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার আগামসি লেনে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর তার নাম রাখা হয় তাবাররুক আহমেদ বুলবুল। সিনেমায় অভিনয় করতে এসে তিনি বুলবুল আহমেদ নামে পরিচিতি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগ থেকে এমএ পাস করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই ‘ডাকসু’ ও এসএম হল আয়োজিত বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করতেন। ১৯৬৩ সালে এমএ পাশ করে কাজ নেন বেতারে। পারিশ্রমিকে সংসার চালাতে কষ্ট হতো বলে চাকরি নিয়েছিলেন ব্যাংকে।
বুলবুল আহমেদের অভিনয়জীবন শুরু হয় টেলিভিশন নাটক দিয়ে। ১৯৬৮ সালে ‘পূর্বাভাস’ তার প্রথম নাটক। তিনি ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘বরফ গলা নদী’, ‘ইডিয়ট’, ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’, ‘তোমাদের জন্যে ভালোবাসা’, ‘তুমি রবে নীরবে’, ‘টাকায় কি না হয়’, ‘মালঞ্চ’, হৈমন্তী’, ‘এইসব দিনরাত্রি’সহ বহু নাটকে অভিনয় করেছেন, হয়েছেন প্রশংসিত।
বুলবুল আহমেদের প্রতিটি জন্মদিন পারিবারিকভাবে উদযাপন করা হয়। এদিনও বাড়িতে ছিল মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন। এতিমখানার ছাত্রদের বাসায় দাওয়াত করে খাওয়ানো হয়েছে বুলবুল আহমেদের প্রিয় খাবার। এদিকে জন্মদিন উপলক্ষে বুলবুল আহমেদ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে খ্যাতিমান সুরকার শেখ সাদি খানকে জানানো হয়েছে সম্মাননা। চ্যানেল আইয়ের ‘তারকা কথন’ অনুষ্ঠানে শিল্পীর হাতে এ সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।
বুলবুল আহমেদের বায়োপিক বা জীবনীচিত্র প্রসঙ্গে কথা হয় মেয়ে ঐন্দ্রিলা আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি আব্বুর জীবন নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই। আমি চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা করেছি। আশা করছি আমি সুন্দর কিছু করতে পারব। এরই মধ্যে আব্বুকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টরি তৈরি করেছি, প্রশংসা পেয়েছি।’
তাকে নিয়ে সিনেমায় নায়ক হবেন কে? জানতে চাইলে ঐন্দ্রিলা বলেন, ‘কাকে নায়ক করব তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। সিনেমার কাজ শুরু করলে এ নিয়ে ভাববো। যখন নির্মাণে হাত দেব, তখন যাকে আব্বুর চরিত্রে উপযুক্ত মনে হবে, তাকেই প্রস্তাব দেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আব্বুর বিভিন্ন সময়ের বয়সের চরিত্রে অভিনেতা প্রয়োজন হবে। এক এক বয়সের চরিত্রে ভিন্ন ভিন্ন অভিনেতার প্রয়োজন। আব্বুর চলচ্চিত্রজীবন বিশাল ও বর্ণাঢ্য। তার জীবনে অনেক মজার মজার ঘটনাও রয়েছে। আমি তার বায়োপিকে তাকে পরিপূর্ণভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করব।’
বুলবুল আহমেদ ১৯৭৩ সালে ‘ইয়ে করে বিয়ে’ সিনেমার মাধ্যমে ঢালিউডের ছবিতে কাজ শুরু করেন। চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘দেবদাস’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তার ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য সিনেমা ‘বৌরানী’, ‘ঘর সংসার’, ‘বধু বিদায়’, ‘ছোট মা’, ‘আরাধনা’, ‘সঙ্গিনী’, ‘সময় কথা বলে’, ‘স্মৃতি তুমি বেদনা’, ‘শেষ উত্তর’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘মোহনা’, ‘মহানায়ক’, ‘পুরস্কার’ ও ‘সোহাগ’। ১৯৭৬ সালে আলমগীর কবির নির্মিত ‘সূর্যকন্যা’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জহির রায়হান পুরস্কার লাভ করেন বুলবুল আহমেদ। সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। বুলবুল আহমেদ ২০১০ সালের ১৫ জুলাই ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।