বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও সরকার পতনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে মাহফুজ আলমকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের ফাঁকে ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ লিডারস স্টেজ’ অনুষ্ঠানে যোগ দেন ড. ইউনূস। অনুষ্ঠানের মঞ্চে তিনি তার দীর্ঘদিনের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে নানান বিষয়ে কথা বলার ফাঁকে সফরসঙ্গী তিন জনকে পরিচয় করিয়ে দেন।
‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ লিডারস স্টেজ’ বক্তব্যে ড. ইউনূস বিগত সরকার কীভাবে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা জানান। আন্দোলনে গুলির সামনে কীভাবে ছাত্ররা বুক পেতে দাঁড়িয়েছে- বিশ্ব নেতাদের সামনে সেই বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি। একপর্যায়ে নতুন বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের কথা বলার সময় তিনি দর্শকদের জানান, এখানে তাদের কয়েকজন প্রতিনিধি রয়েছেন।
এ সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমসহ তিনজনকে স্টেজে আসার আহ্বান জানান। অন্য দুজন হলেন- প্রধান উপদেষ্টার দুই সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি এবং নাইম আলী।
এ সময় ড. ইউনূস বলেন, ‘তারা যেভাবে কথা বলেন এমন কথা আমি কখনো শুনিনি। তারা নতুন পৃথিবী, নতুন বাংলাদেশ গড়তে প্রস্তুত। প্লিজ আপনারা তাদের হেল্প করবেন। যেন তারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন। এ গুরুদায়িত্ব আমাদের সবার নিতে হবে।’ এসময় তিনি বিল ক্লিনটনের হাত ধরে বলেন, ‘আপনি আমাদের সঙ্গে আছেন এ স্বপ্ন পূরণে।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘তাদের দেখতে অন্য তরুণদের মতো মনে হলেও যখন তাদের কাজ দেখবেন, বক্তব্য শুনবেন- আপনি অবাক হবেন। তারা সারাদেশ নাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা তাদের বক্তব্য, ত্যাগ, তাদের কমিটমেন্ট থেকে পিছিয়ে যাননি। তারা বলেন, আপনারা চাইলে আমাদের হত্যা করতে পারেন, কিন্তু আমরা পথ ছেড়ে যাবো না।’
এ সময় মাহফুজ আলমকে সামনে এগিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘গণঅভুত্থানের পেছনের কারিগর মাহফুজ। যদিও মাহফুজ সবসময় বলেন- তিনি একা নন, আরও অনেকে আছেন। যদিও তিনি গণঅভ্যুত্থানের পেছনের কারিগর হিসেবে পরিচিত।’
এটা খুব সুশৃঙ্খল আন্দোলন ছিল উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা হঠাৎ করে হয়েছে এমন কিছু নয়। খুবই গোছানো আন্দোলন। এত বড় আন্দোলন হয়েছে অথচ মানুষ জানতো না- কে আন্দোলনের নেতা? যার ফলে একজনকে আটক করা যেত না। বলাও যেত না যে, একজনকে আটক করলে আন্দোলন শেষ।’
তিনি বলেন, ‘তার (মাহফুজ) কথা শুনলে সারা পৃথিবীর যে কোনো তরুণ অনুপ্রাণিত হবেন। তারা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করবে। তাদের সফলতার জন্য আপনারা প্রার্থনা করবেন। তাদের জন্য হাততালি হোক।’ এ সময় বিল ক্লিনটনসহ সবাই হাততালি দিয়ে সম্মান জানান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির একজন সমন্বয়ক মাহফুজ আলম। মাহফুজ আবদুল্লাহ নামেও তিনি পরিচিত। আন্দোলনে নেপথ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি আলোচিত। বর্তমানে তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী।