রাজধানী ঢাকার অন্যতম সমস্যা ট্রাফিক জ্যাম। তবে গেল ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে গেলে রাস্তায় ট্রাফিক সামলানোর দায়িত্ব নিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
অনেকের মতে, তখন জনজীবনে কিছুটা স্বস্তিরই আভাস মিলেছিল।
নন্দিত অভিনেতা, নির্মাতা, লেখক ও চিত্রশিল্পী আফজাল হোসেনও তেমনটাই মনে করেন। এ বিষয়ে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) ফেসবুকে এক দীর্ঘ পোস্ট দেন তিনি।
সেখানে নন্দিত এই অভিনেতা লেখেন, কিছুদিন আগে যখন ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছিল, সে সময়টাতে একদিন অফিসে দাঁড়িয়ে তিনতলা থেকে সে নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম অবাক হয়ে দেখছিলাম। দেখছিলাম, আমাদের অনিয়মের শহর ছুঁ মন্তরে নিয়ম মেনে চলতে পারে। মানুষ ও বিভিন্ন ধরনের যানবাহন এই শহরের রাস্তায় কীভাবে চলাচল করে তা সকলেরই জানা। নিয়ম মানা কারও ধাঁতে নেই। দীর্ঘকাল ধরে অনিয়ম করতে করতে স্বাভাবিক চরিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে নিয়ম না মানা। যে যত বেয়াড়া সে তত স্মার্ট এই শহরে।
তিনি লেখেন, রাস্তায় চলাচলের যতরকম নিয়ম আছে, কেউই মানতে পছন্দ করে না। করতো না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম, চাইলেই সব পারা যায়। মনে কথাটা ভেসে ওঠে, বাঙালি শক্তের ভক্ত নরমের যম। যে মানুষ যতো উল্টোপাল্টা সমস্ত শহরজুড়ে বীরদর্পে করে থাকে, একই মানুষ ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে চলাচলের সময় চিরকালের ভদ্রলোকের মতো কড়ায় গণ্ডায় নিয়ম মানে। সেদিন ওপর থেকে দেখছিলাম, কেউ এগোনোর জন্য একটু অনিয়ম করতে চেয়ে গাড়ির মাথাটা লাইন থেকে অল্প বের করে দিতে চেয়ে যেই দেখেছে সামনে একটু দূরে কোনো ছাত্রকে দেখা যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি জায়গামতো ফিরিয়ে নিয়ে খুব ভালো মানুষ হয়ে যাচ্ছে।
তবে এখন আবারও সেই পুরনো জ্যামের চিত্র ফিরে এসেছে রাস্তাঘাটে। এই পরিস্থিতি তুলে ধরে আফজাল হোসেন লেখেন, পথ চলা স্বাধীন করে দেওয়া হলো। আবার শহর ও মানুষ নিজের চলা-বলা ফেরত পেয়ে গেল। সবাই চলছে নিজের ইচ্ছামতো, বলছেও যার যার যেমন ইচ্ছা তেমন করে।
এদিকে, বাকস্বাধীনতা নিয়েও মন্তব্য করেছেন অভিনেতা। বিগত সরকারের সময়ে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল। অতীতের স্মৃতি আওড়ে আফজাল হোসেন লেখেন, একসময় সবাইকে কথা হিসাব করে বলতে হয়েছে। এখন যার যেমন খুশি বলা যায় বলে লাগামছাড়া কথা বলাবলি হচ্ছে। যখন বলা দরকার; বলা যায়নি। বিড়াল হয়ে কাটানো জীবনে হঠাৎ বাঘ হয়ে দেখানোর সুযোগ মিলেছে। এখন মানুষ নিশ্চিত, নিজের গলায় বাঘের গর্জন দিলে কারও চোখ রাঙানি দেখতে হবে না বা ঘর চেপে ধরতে আসবে না কেউ।
তিনি আরও লেখেন, আমাদের সভ্যতার ভব্যতার সীমা জানা নেই। অপমানজনক আচরণ, কথা বলায় আমাদের দক্ষতা সর্বজনবিদিত। এখন যেন বুক ফুলিয়ে অনুচিত কাণ্ড করা যায়। যেমন খুশি বলে ও করে মর্যাদা বৃদ্ধির সুবর্ণ সুযোগ এসেছে।
নির্দিষ্টভাবে কারও নাম উল্লেখ না করে আফজাল হোসেন লেখেন, গতকাল দেখতে পেলাম অসম্মান করে কথা বলা মানুষ টেলিভিশন চ্যানেলে খবর হয়েছে। বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তাকে পর্দায় হাজির করা হলো। টেলিফোনে দায়িত্বশীল, দেশপ্রেমিক দাবি করা মানুষটাকে বলতে শোনা গেল, সে উচিত কাজই করেছে, কোনো অন্যায় করেনি।
বলে রাখা যায়, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে বেশ জনপ্রিয় হলেও আফজাল হোসেনের অভিনয় জীবনের শুরু মঞ্চে। চারুকলায় পড়ার সময় ঢাকা থিয়েটারের মাধ্যমে মঞ্চে কাজ শুরু করেন তিনি। সত্তরের দশকের শেষ দিকে টেলিভিশন জগতে প্রবেশ তার। আশির দশকে হয়ে ওঠেন টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় এক নাম।
১৯৮০ সালে প্রচারিত ‘রক্তের আঙ্গুরলতা’ টেলিভিশন নাটকে তিনি নিয়ে আসেন নতুন ধারা, নতুন ভাবনা। ‘পারলে না রুমকি’ নাটকটি বিটিভির নাটকের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে আছে আজও।
মডেলিং ও বিজ্ঞাপনচিত্রকে শিল্প পর্যায়ে উন্নীত করেছেন এই তারকা। একটি পণ্যকে ভোক্তার কাছে উপস্থাপন করার যে পথ তিনি দেখিয়েছেন, সে পথ ধরেই বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনচিত্রের আজ এত দূর এগিয়ে আসা।
শিল্পকলার অভিনয় শাখায় অবদানের জন্য আফজাল হোসেন ২০২২ সালে একুশে পদক লাভ করেন।