
বাংলাদেশের ৫৪তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিশ্বের নানা দেশের কূটনীতিকদের সম্মানে জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে জেডব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেল বলরুমে জমকালো এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়া সরকারের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, কুয়ালালামপুরস্থ বিভিন্ন মিশনের রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য কূটনীতিকরা, মালয়েশিয়ার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী ও চেম্বার নেতা, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের সদস্য, সাংবাদিক ও বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতারাসহ চার শতাধিক অতিথি অংশ নেন।
মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষে সংবর্ধনায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার নারী, পরিবার এবং কমিউনিটি উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী দাতো সেরি হাজাহ ন্যান্সি সুকরি। এছাড়া মালয়েশিয়ার মেলাকা প্রদেশের গভর্নর এবং কুয়ালালামপুরের মেয়র বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
গেস্ট অব অনার হাজাহ ন্যান্সি সুকরি স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। এছাড়া সম্মানিত অতিথি ও রাষ্ট্রদূতরা হাইকমিশনার শামীম আহসান এবং তার সহধর্মিনী মিসেস প্যান্ডোরা চৌধুরীর সঙ্গে কেক কাটা ও ফটোসেশন পর্বে অংশ নেন।
হাইকমিশনার শামীম আহসান তার বক্তৃতার শুরুতেই ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ এর জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতায় আত্মত্যাগকারী বীর যোদ্ধাদের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। এ সময় তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধ যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সংঘটিত হয়েছিল তার পরিপূর্ণ রূপ দিতে এবং ’২৪ এর জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের চেতনার আলোকে একটি বৈষম্যহীন, ন্যয়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে একযোগে কাজ করার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার মধ্যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে উল্লেখ করে হাইকমিশনার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য মালয়েশিয়ার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সম্পর্ক বহুমাত্রিক এবং তা পারস্পরিক মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও ঐতিহাসিক বন্ধনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। তিনি আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, জ্বালানি, পর্যটন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এবং অংশীদারত্বমূলক সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেওয়ার পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম প্রথম সরকারপ্রধান হিসেবে বাংলাদেশ সফর করেন। এই ঘটনা দুই দেশের সম্পর্ককে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন হাইকমিশনার শামীম আহসান। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিকট ভবিষ্যতে মালয়েশিয়া সফর করবেন বলে হাইকমিশনার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশের হাইকমিশনার রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধানের জন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে মালয়েশিয়ার জোরালো সমর্থনের গভীর প্রশংসা করেন। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই অঞ্চলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশকে আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য তিনি আসিয়ানের সব সদস্য রাষ্ট্রের সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করেন।
বক্তব্য শেষে প্রবাসী বাংলাদেশি শিল্পীদের পরিবেশনায় একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানস্থলে সুসজ্জিত বাংলাদেশ কর্নারে ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন, জিআই পণ্য, রপ্তানিযোগ্য পণ্য ও হস্তশিল্প প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া, জুলাই -আগস্ট অভ্যুত্থান, বাংলাদেশের সংস্কৃতি, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ক প্রকাশনা কর্নারে স্থান পায়, যা অতিথিদের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহের সৃষ্টি করে।
অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরসহ বাংলাদেশের পর্যটন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বিনিয়োগ এবং দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
আপ্যায়নপর্বে অতিথিদের ঐতিহ্যবাহী কাচ্চি বিরিয়ানি, রসগোল্লাসহ বাংলাদেশি খাবার পরিবেশন করা হয়। বিশেষ করে কাচ্চি বিরিয়ানীর স্টলে উপচে পড়া ভিড় ছিল লক্ষণীয়। এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিদের জামদানি ও পাটের তৈরি দৃষ্টিনন্দন উপহার দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের দিনটি রমজান মাসে পড়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন স্বাধীনতা এবং জাতীয় দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি ১৬ এপ্রিল আয়োজন করে।