ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ফেনী। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত। গত ২০ আগস্ট থেকে পাঠদান বন্ধ রয়েছে জেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজসহ ৯২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কবে খুলবে সে ব্যাপারে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৫৫৯টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৯৩টি, মাদরাসা ১২৮টি, কলেজ ৩০টি, কারিগরি, ডিপ্লোমা ও প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট ১০টি। বন্যায় প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই প্লাবিত হয়েছে। পানি নামলেও এখনো পাঠদানের পরিবেশ তৈরি হয়নি।
দাগনভূঞার সাপুয়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী নাহার বলেন, ‘বন্যার পানি ঘরে প্রবেশ করে বই-খাতাসহ সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। এবার বিভিন্ন সময় টানা স্কুল বন্ধ থাকায় ঠিকভাবে সিলেবাস শেষ করা যায়নি। কিছুদিন পর প্রস্তুতি ছাড়াই আমাদের নির্বাচনী পরীক্ষায় বসতে হবে।’
পরশুরাম উপজেলার সামিয়া আনজুম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করায় অন্যত্র গিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ঘরে থাকা বইপত্র কিছুই বাঁচানো যায়নি। এ পরিস্থিতিতে স্কুল কবে খুলবে সেটাও জানি না।’
দাগনভূঞার ওমরাবাদ গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘বন্যায় ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, গবাদিপশুসহ সব শেষ হয়ে গেছে। ছেলেমেয়েদের বইপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। তারা পড়াশোনা করতে পারছে না। পরীক্ষায় এর প্রভাব পড়তে পারে।’
আতাতুর্ক সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোবারক হোসেন বলেন, ‘বন্যার সময়ে বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া কয়েকটি পরিবার এখনো অবস্থান করছে। কবে থেকে পাঠদান শুরু হবে তা অনিশ্চিত।’
ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের কোনো শ্রেণিকক্ষ এখন কার্যক্রম পরিচালনার উপযোগী নয়। সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর চেষ্টা চলছে।
ফেনী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান, বন্যায় জেলার ৫৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানির নিচে তলিয়ে গেছে। যেসব শিক্ষার্থীদের বইপত্র নষ্ট হয়ে গেছে তাদের তালিকা প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফী উল্লাহ বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোতে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়েও তালিকা হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা কর্মকর্তা ও স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানকে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে লিখিত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।